Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪
অভিযোগ অস্বীকার পরিবারের

যৌন হেনস্থার নালিশ, ছাত্র গ্রেফতার চাঁচলে

স্কুলের সুপারের ছেলের বিরুদ্ধেই আবাসিক বালিকাদের যৌন নির্যাতনের অভিযোগ উঠল হরিশ্চন্দ্রপুরে। একাদশ শ্রেণির ওই পড়ুয়াকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
চাঁচল শেষ আপডেট: ০৭ অগস্ট ২০১৬ ০১:৫৩
Share: Save:

স্কুলের সুপারের ছেলের বিরুদ্ধেই আবাসিক বালিকাদের যৌন নির্যাতনের অভিযোগ উঠল হরিশ্চন্দ্রপুরে। একাদশ শ্রেণির ওই পড়ুয়াকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। ছেলের আচরণের কথা বাবা-মাকে জানানো হলেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ তুলে তাঁদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি তুলেছেন অভিভাবকরা। ছেলের বিরুদ্ধে অভিযোগ অবশ্য মানতে চাননি তার বাবা-মা। উল্টে চক্রান্ত করে তাদের ফাঁসানো হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছেন তাঁরা।

শুক্রবার রাতে গ্রেফতারের পর ওই যুবকের বয়স ১৮-র কম বলে পরিজনেরা দাবি করেছিলেন। কিন্তু তার প্রমাণ দিতে পারেননি তাঁরা। ফলে এদিন ধৃতকে চাঁচল মহকুমা আদালতে তোলা হয়। ধৃতের জামিনের আবেদন খারিজ করে ১০ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন এসিজেএম অর্জুন মুখোপাধ্যায়।

হরিশ্চন্দ্রপুরের আইসি দেবাশিস দাস বলেন, ‘‘যৌন হেনস্থার অভিযোগে স্কুলটির সুপারের ছেলেকে পকসো আইনে গ্রেফতার করা হয়েছে। মা-বাবার ভূমিকা কী ছিল, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ধৃতের বয়স ১৮ বছর চার মাস। নথি দেখেই তা আদালতকে জানিয়েছি।’’

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ধৃতের বাবা হরিশ্চন্দ্রপুরের স্টেশন ম্যানেজার। স্টেশন লাগোয়া এলাকাতেই জমি কিনে বাড়ি করে বসবাস করেন তাঁরা। একই চৌহদ্দির মধ্যে রয়েছে আবাসিক ওই ইংরেজি মাধ্যম স্কুলটি। প্রথম থেকে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পঠনপাঠনের ব্যবস্থা রয়েছে স্কুলটিতে। স্কুলের সুপার ওই ছাত্রের মা। হস্টেলে থাকে জনা তিরিশেক পড়ুয়া।

কয়েক জন অভিভাবকের অভিযোগ, স্কুলের পাশেই রয়েছে একটি কম্পিউটর রুম। অভিযোগ, হস্টেলের তৃতীয় শ্রেণির পড়ুয়া তিন ছাত্রীকে সেই ঘরে ডেকে হামেশাই যৌন হেনস্থা করত ওই ছাত্র। পড়ুয়ারা সুপারকে সে কথা জানালে উল্টে তাদের ধমকে দেওয়া হত বলে অভিযোগ তাদের।

কিন্তু গরমের ছুটির পরে বাড়িতে গিয়ে আর স্কুলে ফিরতে চায়নি ওই পড়ুয়ারা। কিছুতেই তারা স্কুলে যেতে রাজি না হওয়ায় অভিভাবকরা তাদের মারধরও করেন। তারা ঘটনার কথা জানতে পারেন। কয়েকজন অভিভাবক শুক্রবার রাতে পুলিশে অভিযোগ জানান। রাতেই সুপারের ছেলেকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

স্কুলের সুপার অবশ্য ছেলের বিরুদ্ধে অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘এমন কোনও ঘটনাই ঘটেনি। স্কুলের বদনাম হতে পারে, এমন কোনও ঘটনার কথা জেনেও আমরা চুপ করে থাকব তা হয় নাকি।’’ তাঁর স্বামী আবার দাবি করেছেন, ‘‘কয়েক জন অভিভাবকের কাছে প্রচুর টাকা বকেয়া পড়েছিল। তা দিতে চাপ দেওয়াতেই এখন আমাদের ফাঁসিয়ে স্কুলের দুর্নাম করতে চাইছে।’’

যদিও দুই অভিভাবকের দাবি, ‘‘ছেলেকে বাঁচাতে ওরা মিথ্যে কথা বলছেন। ঘটনার জেরে মেয়েরা এতটাই আতঙ্কিত যে স্কুলে যেতে চাইছিল না। কিন্তু এমন যাতে আর কারও সঙ্গে না ঘটে, সে জন্য বাধ্য হয়ে পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছি।’’

ডিস্ট্রিক্ট চাইল্ড প্রোটেকশন অফিসার অরুণায়ণ শর্মা জানান, যাঁরা যৌন হেনস্থার শিকার তাদের কাউন্সেলিং করানো হবে। যারা অভিযোগ করেনি, তাদেরও কাউন্সেলিং করানো হবে।

জেলা চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির চেয়ারপার্সন চৈতালি সরকারও উদ্বিগ্ন। তিনি বলেন, ‘‘সাঙ্ঘাতিক ঘটনা। যা ঘটেছে তাতে আমরাও আতঙ্কিত। স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরানোর জন্য ওদের কাউন্সেলিং জরুরি। সেটা
আমরা করব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Sexual molestation
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE