Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪
Jalpaiguri Storm

‘স্কুল নতুন বই দিলেও পড়ার ঘরই নেই’ 

বাড়ি নেই, বিদ্যুৎ নেই, জল নেই। বাড়ি ছেড়ে কেউ ত্রাণ শিবিরেও যাননি। ত্রিপল টাঙিয়ে বাড়ির ধ্বংসস্তূপ পাহারায় ঘরের বাসিন্দারা।

ঝড়ে উড়ে গিয়েছে পড়ার বই। স্কুল থেকে নতুন বই নিয়ে বাড়ির পথে।

ঝড়ে উড়ে গিয়েছে পড়ার বই। স্কুল থেকে নতুন বই নিয়ে বাড়ির পথে। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ০৪ এপ্রিল ২০২৪ ০৮:৪৪
Share: Save:

মাটির রাস্তার দু’পাশে ভেঙে পড়া গাছ, গুঁড়িয়ে যাওয়া পাকা বাড়ি। যেন কোনও ক্ষেপণাস্ত্র উড়ে এসে সব কিছু তছনছ করে দিয়েছে। বিপর্যয়ের অগুন্তি চিহ্নের মধ্যেখানের রাস্তা দিয়ে হেঁটে বাড়ি ফিরছে চার কিশোর-কিশোরী। সকলেরই বুকের কাছে জড়িয়ে রাখা নতুন বই, দু’জনের হাতে প্লাস্টিকে ভরা নতুন পোশাক। নবম শ্রেণির ছাত্রী নন্দিনী রায় বলল, “আমাদের বাড়িটাই আর নেই। সব ভেঙে গিয়েছে। বই-খাতা সব চাপা পড়ে আছে। কী করে পাব জানি না! স্কুল থেকে নতুন বই নিয়ে এলাম। ২৩ তারিখ থেকে পরীক্ষা শুরু হবে।”

বাড়ি নেই, বিদ্যুৎ নেই, জল নেই। বাড়ি ছেড়ে কেউ ত্রাণ শিবিরেও যাননি। ত্রিপল টাঙিয়ে বাড়ির ধ্বংসস্তূপ পাহারায় ঘরের বাসিন্দারা। সেখানেই নতুন বই নিয়ে পড়তে বসবে ওরা। অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী কল্যাণী রায় বলল, “নতুন বইটা যে রাখব তারও জায়গা নেই। দেখি, কোনও বন্ধুর বাড়িতে রেখে আসব।” বুধবার ময়নাগুড়ির বার্নিশের কদমতলার রাস্তায় দেখা মিলল চার পড়ুয়ার। অষ্টম শ্রেণির কল্যাণীর দিদি অনুপমা নবম শ্রেণিতে পড়ে। ওদের বাবা কখনও টোটো চালান, কখনও এটা-ওটা কাজকর্ম করেন। নবম শ্রেণির নন্দিনীর বাবা ভ্যান চালান। ওদের সঙ্গী নবম শ্রেণির আর এক পড়ুয়া জয়ন্ত রায়। সকলেরই বাড়ি ঝড়ে ভেঙেছে। বইপত্র-সহ পড়াশোনার কাজের সব কিছুই চাপা পড়ে গিয়েছে। ধ্বংসস্তূপ থেকে টেনে বার করা আর সম্ভব নয়। আশপাশের স্কুলগুলি থেকে এলাকার পড়ুয়াদের জানানো হয়েছে, নতুন বই দেওয়া হবে। সেই শুনে ওরা স্কুলে গিয়েছিল নতুন বই আনতে।

বই আনা হলেও, পড়বে কোথায়? জয়ন্ত বলে, “আমাদের পাকা বাড়ি ভেঙে গিয়েছে। দু’দিন ধরে দিনের বেলায় ভাঙা স্তূপের ভিতর থেকে ঘরের জিনিস খুঁজছি সকলে মিলে। আজ বই নিয়ে এলাম স্কুল থেকে। রাতে মোম জ্বালিয়ে পড়া যাবে। কিন্তু ঘরই তো নেই!” দেওয়াল নেই, ভেঙে যাওয়া বাড়ির সামনে ত্রিপল টাঙিয়ে রয়েছে ওদের পরিবারগুলো।

ঝড়ে ঘর ভেঙেছে এলাকার আশা কর্মী বেবি রায়ের। যদিও তিনি এলাকার অন্য বাড়ি বাড়ি ঘুরছেন ত্রাণ পৌঁছে দিতে। আর এক আশা কর্মী বিমলা রায় অধিকারীর বাড়ির সবটাই উড়ে গিয়েছে। তবুও তিনি সরকারি উদ্ধারকাজ থেকে নিজেকে সরিয়ে নেননি। স্বাস্থ্যকর্মীদের তত্ত্বাবধায়ক সুমন সরকারের কথায়, “ওঁরা আমাদের প্রেরণা দিচ্ছেন।”

বুধবার দুপুরে বার্নিশের কালীতলার ক্যাম্প থেকে ডিউটি শেষ করে বাড়ি ফিরলেন বেবি রায়। জানালেন, তিন দিন বাদে বাড়ির উনুনে ভাত চাপল দুপুরে। হাঁড়ি চাপিয়ে দিয়ে তিনি মন দিলেন ভেঙে পড়া দেওয়ালের বেড়ার টুকরো সরানোয়। বললেন, “এইটুকুই যা সময়, এখন তো আমাদের সর্বক্ষণ কাজ চলছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Jalpaiguri Storm Jalpaiguri Students
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE