রাজা চা বাগানে শ্রমিকেরা এসেও ফিরে যান।—নিজস্ব চিত্র।
ফের ডুয়ার্সের আরও একটি চা বাগানে কর্মবিরতি ঘোষণা হল। শনিবার সকালে ডুয়ার্সের মালবাজার শহর লাগোয়া রাজা চা বাগানে কাজে গিয়ে বাগান বন্ধের কথা জানতে পারেন শ্রমিকেরা।
শুক্রবার রাতেই কর্তৃপক্ষের সকলে বাগানের অফিসে নোটিশ দিয়ে বাগান ছেড়ে চলে যান। শুক্রবার রাতে মালিক পক্ষের সকলে বাগান ছেড়ে গেলেও শ্রমিকরা বাগান বন্ধের খবর তখন জানতে পারেননি। প্রতিদিনের মতই শনিবার সকাল ৭টায় কাজ শুরুর সাইরেন বাজিয়েও দেন বাগানের চৌকিদার শনচরুয়া ওঁরাও। এর পরেই বাগানের শ্রমিকেরা কর্তৃপক্ষের কাউকে বাগানে দেখতে না পেয়ে কাজ থেকে ফিরে আসতে শুরু করেন।
প্রায় ৭৫০ জনেরও বেশি শ্রমিক কাজ করেন বাগানটিতে। এই চা বাগানটি প্রায় ৪৫০ হেক্টর এলাকার ওপর ছড়িয়ে রয়েছে। মালবাজার পুর এলাকা লাগোয়া রাজা চা বাগান ক্ষোভ, বকেয়া থাকলেও বাগান বন্ধের মত কোনও সমস্যা ছিল না বলেই শ্রমিকদের দাবি। এর আগে ২০১৪ সালে ৬দিনের জন্যে রাজা চা বাগান বন্ধ হয়েছিল।
তা হলে কেন মালিকপক্ষ বাগান বন্ধ করলেন? শ্রমিকেরা এই প্রশ্নের উত্তরে পানীয় জল বন্টন নিয়ে শ্রমিক মালিকের দ্বিমত হওয়ার ঘটনা সামনে নিয়ে এসেছেন। বাগানে চা শ্রমিকেরা যখন পাতা তোলা বা বাগানের গাছ পরিচর্যার কাজ করেন, তখন তাদের পানীয় জল যোগান দেওয়ার জন্যে কিছু শ্রমিক কাঁধে পানীয় জলের ড্রাম নিয়ে জল পৌঁছে দেওয়ার কাজ করেন। এদের চা শ্রমিকদের জলবাহক বলা হয়।
রাজা চা বাগানের কর্তৃপক্ষ গত একমাস ধরেই এই প্রথা তুলে দিয়ে তার বদলে প্রতি চা শ্রমিককে ২লিটারের বোতল দিয়ে দেওয়ার কথা জানিয়ে দেয়। কিন্তু চা শ্রমিকদের একটা বড় অংশই এ ভাবে দীর্ঘদিনের প্রথা উঠিয়ে দেওয়ার বিরোধিতা করেন।
শ্রমিকরা পাল্টা যুক্তি দেন, রোদের তাপে একদিকে যেমন বোতলের জল গরম হয়ে যাবে তেমনই ২ লিটার জল বহন করাও পরিশ্রমের কাজ। শ্রমিকদের এই অনড় মনোভাবের জন্যেই মালিকপক্ষ বাগান ছেড়েছে বলে মনে করছেন তারা। যদিও পানীয় জলের জন্যে বাগান বন্ধ হয়েছে তা কর্মবিরতির নোটিশে উল্লেখ করেনি মালিকপক্ষ। নোটিশে শ্রমিকদের মধ্যে শৃঙ্খলাহীনতা, আট ঘণ্টার বদলে অনেক কম সময় কাজ করার অভিযোগও করা হয়েছে। বাগানের উৎপাদন কমছে বলেও নোটিশে জানানো হয়েছে। জলের বিষয়টি যে মুখ্য তা লিখিত আকারে না থাকলেও মেনে নিয়েছেন বাগানের কর্তারাও।
বাগানের এক কর্তার কথায়, ‘‘বাগানের মোট ৫ জন জলবাহক রয়েছেন, আমরা জলবাহকদের সরিয়ে তাদের বেকার করে দেব বলিনি। তাদের বাগানে অন্যকাজ দেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছিল। সেই সঙ্গে এখুনি জলবাহকদের কাজ বন্ধ না করে আগামী একমাস শ্রমিকদের যেমন বোতল দেওয়া হবে তেমনই আগের প্রথাও চালু থাকবে। এর পর যেটা ভাল মনে হবে সেটা শ্রমিকেরাই বেছে নেবেন বলেও প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল।’’ বাইরে থেকে শ্রমিকদের জন্যে জলের বোতলও কিনে আনা হয়েছে।
বাগানের এই যুক্তি অবশ্য মানতে পারেননি চা শ্রমিক সংগঠনের নেতৃত্বরা। সিপিএমের চা শ্রমিক সংগঠন চা বাগান মজদুর ইউনিয়নের জলপাইগুড়ি জেলা সম্পাদক চানু দে বলেন, ‘‘রাজা চা বাগান যেভাবে বন্ধ করা হয়েছে তা অবৈধ। বাগিচা আইন মেনে কোনও সুযোগ সুবিধা দেওয়া হয় না। একটা অ্যাম্বুল্যান্স পর্যন্ত নেই। আমরা দ্রুত যাতে বাগান খোলে সেই দাবি করছি।’’ আদিবাসী বিকাশ পরিষদের রাজ্য সহসভাপতি তেজকুমার টোপ্পো বলেন, ‘‘বর্ষা আসার মুখে। এখনও শ্রমিকদের ছাতা, ত্রিপল, জুতো কিছুই দেননি কর্তৃপক্ষ। তার বদলে বোতল নিয়ে ওরা নতুন নাটক শুরু করেছে। শ্রমিকেরা সেটা মানতে না পারাতেই ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। মালিকপক্ষকে গত শুক্রবার ছাতা, ত্রিপল দেওয়ার দাবি আমরা করেছিলাম। তা না মেনে কেন বাগান বন্ধ করে দেওয়া হল সেটাই বুঝছি না।’’
রাজা চা বাগান বন্ধ হলে মালবাজার শহরের ব্যবসায় সরাসরি প্রভাব পড়বে বলে আশঙ্কা করেছেন তৃণমূলের মালবাজার টাউন সভাপতি মানসকান্তি সরকার। তিনি বলেন, ‘‘রাজা বাগানের সঙ্গে মালবাজারের অর্থনীতি জড়িত। তাই বাগান যাতে দ্রুত খোলে আমরাও সেটিই চাই। বাগান বন্ধের খবর পৌঁছেছে প্রশাসনের কাছেও।’’
মালবাজারের সহকারি শ্রম কমিশনার আর্থার হোরো বলেন ‘‘রাজা চা বাগান বন্ধের বিষয়টি শুনেছি। তবে লিখিত নোটিশ আমরা পাইনি, দ্রুত জট কাটাবার চেষ্টা আমরা করছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy