অরক্ষিত: রক্ষী তো নেই-ই, দরজারও বালাই নেই বালুরঘাটের এটিএমে। নিজস্ব চিত্র
কোথাও এটিএমের দরজা ভাঙা। আবার কোথাও নজরদারির জন্য রাখা ক্লোজ়ড সার্কিট ক্যামেরা অকেজো। অধিকাংশ এটিএমেই নেই নিরাপত্তা রক্ষী। মালদহ, উত্তর দিনাজপুর, দক্ষিণ দিনাজপুর সর্বত্রই বিভিন্ন ব্যাঙ্কের এটিএমগুলোর পরিস্থিতি এমনই। তাতেই এটিএমে ফাঁদ পেতে গ্রাহকদের বোকা বানিয়ে টাকা হাতাতে সক্রিয় প্রতারক চক্র। ফলে বেড়েছে গ্রাহক এবং ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের উদ্বেগ। আবার কখনও ব্যাঙ্ক কর্মী বলে ভুয়ো পরিচয় দিয়ে নানা কৌশলে এটিএম নম্বর, পিনকোড জেনে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে চক্রের লোকজন।
হিলির বাসিন্দা ধৃত প্রতারক রফিকুল মণ্ডলকে জেরা করে পুলিশ জেনেছে, কুমারগঞ্জের বেলতারার প্রীতি প্রামাণিক নিরাপত্তা রক্ষীহীন এটিএমে টাকা তুলতে গিয়েছিলেন। তিনি এটিএম কার্ড ব্যবহারে সরগড় নন। সেই সুযোগে রফিকুল সাহায্য করতে যায় এবং প্রীতিদেবীর অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তুলে পালায় বলে অভিযোগ। চকভবানী এবং পতিরামের দুই বাসিন্দার এটিএম কার্ড হ্যাক করে লক্ষাধিক টাকা লোপাটের অভিযোগও রয়েছে।
প্রতারিত পুরাতন মালদহের বাসিন্দা দীপক সরকারের কথায়, ‘‘ব্যাঙ্কের নাম করে ফোন করে আমার এটিএম নম্বর চাওয়া হয়। তার পরে আমার অ্যাকাউন্ট থেকে ৪০ হাজার টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। ব্যাঙ্ক, থানায় অভিযোগ করেও সমাধান হয়নি।’’ রায়গঞ্জের অর্থগ্রামের বাসিন্দা অনিল দাস থানায় অভিযোগ করেছেন, ২৫ জুলাই ব্যাঙ্ককর্মী বলে ভুয়ো পরিচয় দিয়ে এক যুবক ফোন করে জানান, অনিলবাবুর অ্যাকাউন্টটি বন্ধ হয়ে গিয়েছে। খোলার জন্য এটিএম কার্ডের নম্বর জানতে চাওয়া হয়। অনিলবাবু জানালে তাঁর মোবাইলে এসএমএসে দু’দফায় ওটিপি নম্বর আসে। অভিযুক্ত ফের ফোন করে দু’টি ওটিপি নম্বর জেনে টাকা তুলে নেয় বলে অভিযোগ।
সম্প্রতি ইংরেজবাজারে ফুলবাড়ি মোড়ের রাষ্ট্রায়াত্ত ব্যাঙ্কের এটিএম কাউন্টার ভেঙে লুটের চেষ্টা হয়েছে। কালিয়াচকের সুজাপুর ও জালালপুরেও এটিএমে লুটের চেষ্টা হয়। গত ছ’মাসে পাঁচটি এটিএম প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে জেলায়। কয়েক মাস আগে গভীর রাতে রায়গঞ্জের সুপারমার্কেট এলাকায় একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের এটিএম ঘরের কাঁচের দরজা ভাঙচুর করে দুষ্কৃতীরা। এটিএম অক্ষতই ছিল। ১৩ জুন গভীর রাতে রায়গঞ্জের উত্তর মোহনবাটী এলাকায় একটি ব্যাঙ্কের এটিএম মেশিন ভাঙচুর করে লুটের চেষ্টা হয়। পুলিশ কাউকে ধরতে পারেনি। জেলা পুলিশ সুপার অনুপ জয়সওয়ালের দাবি, সচেতনতার প্রচার হচ্ছে। দুষ্কৃতীদের চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে।
অভিযোগ, বালুরঘাট শহরের সাড়ে তিন নম্বর মোড়ে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত এবং একটি বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কের পাশাপাশি দু’টি এটিএমের দরজা ভাঙা। জেলার অন্তত এক হাজার এটিএমের অর্ধেক রক্ষীবিহীন এবং সিসিটিভি ক্যামেরা বিকল। মালদহ জেলা জুড়ে ২৯টি ব্যাঙ্কের ২৩২টি শাখার এটিএম রয়েছে ২০৫টি। রায়গঞ্জের কসবা ও জেলখানামোড় থেকে শিলিগুড়িমোড় পর্যন্ত বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত ও বেসরকারি ব্যাঙ্কের অন্তত ২৫টি এটিএম আছে। বেশির ভাগেই নিরাপত্তারক্ষী নেই। দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা পুলিশ জানিয়েছে, গত কয়েক মাসে প্রহরাহীন এটিএমের সামনে দাঁড়িয়ে গ্রাহকদের বোকা বানিয়ে লক্ষাধিক টাকা লোপাট করেছে চক্রের লোকজন। বালুরঘাট থানার আইসি সঞ্জয় ঘোষ জানান, পতিরামে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের এটিএমে টাকা তুলতে এলে মহিলাদের টাকা হাতিয়ে নেওয়ায় একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy