Advertisement
০৪ মে ২০২৪

টার্মিনাল ভবনেই চাদর পেতে অপেক্ষা

গুজরাতের বাসিন্দা দিব্যেশ কনিয়া, স্ত্রী হিমালি এবং মেয়ে এবং তাঁর বন্ধু কল্পেশ তামাকুয়ালা ও তাঁর পরিবারের ৪ জন এসেছেন। দার্জিলিঙে যাবেন। সেখান ক’দিন থেকে সিকিমে।

দার্জিলিঙে এক বিদেশী পর্যটক। শুক্রবার। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক।

দার্জিলিঙে এক বিদেশী পর্যটক। শুক্রবার। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক।

সৌমিত্র কুণ্ডু ও সুনন্দ ঘোষ
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ১০ জুন ২০১৭ ০২:১৬
Share: Save:

চণ্ডীগড়ের বাসিন্দা রাধে মেহেরা তাঁর স্ত্রী কমলেশ দেবী এবং এগারো বছরের ছেলেকে নিয়ে দার্জিলিঙে ঘুরতে গিয়েছিলেন। বৃহস্পতিবার আতঙ্কে রাতেই ৬ হাজার টাকা দিয়ে গাড়ি ভাড়া করে নেমে এসেছেন। শুক্রবার সকালের মধ্যে বিমানবন্দরে পৌঁছে যান। বিকেল চারটে নাগাদ বিমান। সপরিবারে অপেক্ষা করেন বিমানবন্দরেই।

গুজরাতের বাসিন্দা দিব্যেশ কনিয়া, স্ত্রী হিমালি এবং মেয়ে এবং তাঁর বন্ধু কল্পেশ তামাকুয়ালা ও তাঁর পরিবারের ৪ জন এসেছেন। দার্জিলিঙে যাবেন। সেখান ক’দিন থেকে সিকিমে। এ দিন সকালের বিমানে বাগডোগরা বিমানবন্দরে নেমে অপেক্ষা করছেন। টার্মিনাল ভবনের মেঝেতে বসে তাঁরা লুডো খেলছিলেন। ৬টা নাগাদ দার্জিলিঙে বন্‌ধ উঠলে তাঁরা রওনা হবেন। ভোর পাঁচটায় পাহাড় থেকে নেমে বিমান বন্দরে পৌঁছেছেন যোগেশ চিপ্পা এবং তাঁর পরিবার। বিমানবন্দরের টার্মিনাল ভবনের ভিতরেই পর্যটকদের থাকার ব্যবস্থা হয়েছে। কেউ চেয়ারে, কেউ মেঝেতে চাদর পেতে বিশ্রাম করেছেন। তাঁদের যাতে কোনও অসুবিধা না হয় সে জন্য ভোর থেকেই তৎপর ছিলেন বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ।

অন্য দিনের চেয়ে চার ঘণ্টা আগে এ দিন ভোর পাঁচটা থেকে বিমানবন্দরের টার্মিনাল ভবন খুলে দেওয়া হয়। কিছু ক্ষণের মধ্যে টার্মিনাল ভবনের রেস্তোরাঁ চালু হয়েছে। হাউজ কিপিংয়ের কর্মী সহ অন্যরাও চলে আসেন। মাঝেমধ্যেই বিমানবন্দরের ডিরেক্টর রাকেশ সহায় ঘুরে পর্যটকদের সঙ্গে কথা বলে পরিস্থিতি খোঁজ নিয়ে যান। বেলা পৌনে একটা নাগাদ পর্যটনমন্ত্রী গৌতম দেবও বিমানবন্দরে গিয়ে পরিস্থিতি দেখেন। বিমানবন্দরের বাইরেও ‘হেল্প ডেস্ক’ করে তৃণমূলের স্থানীয় নেতা-কর্মীরা। পর্যটনমন্ত্রী বলেন, ‘‘বিমানে যে পর্যটকরা ফিরতে চান, তাঁদের জন্য শনিবার দুটি বাড়তি বিমানের ব্যবস্থা করার চেষ্টা করছেন মুখ্যমন্ত্রী। ভোর থেকেই পাহাড় থেকে অনেক পর্যটকেরা বিমানবন্দরে পৌঁছেছেন। তাঁদের সকাল, দুপুরের খাবারের জন্য তাড়াতাড়ি রেস্তোরাঁ খুলে দেওয়া হয়েছে। শনিবারও একই ভাবে পরিষেবা দেওয়া হবে।’’

দার্জিলিং থেকে নেমে আসতে চাওয়া পর্যটকদের জন্য আজ, শনিবার বাগডোগরা থেকে দু’টি অতিরিক্ত উড়ান চালানো হবে। একটি চালাবে এয়ার ইন্ডিয়া, অন্যটি স্পাইসজেট। শনিবার তাদের কোনও নির্ধারিত উড়ান নেই।

স্পাইসজেট জানিয়েছে, প্রতি দিন কলকাতা থেকে বাগডোগরায় তাদের দু’টি করে উড়ান রয়েছে। শনিবার তার বাইরে আরও একটি বিমান কলকাতা থেকে পাঠানো হবে সন্ধ্যা সোওয়া ছ’টা নাগাদ। ৭৮ আসনের এই বোম্বাডিয়ার কিউ ৪০০ বিমানটি সাড়ে সাতটা নাগাদ যাত্রীদের নিয়ে কলকাতায় ফিরবে। স্পাইসজেটের এক কর্তার কথায়, ‘‘শুক্রবার মুখ্যমন্ত্রী সচিবালয় থেকে আমাদের অনুরোধ করায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’’

বাগডোগরা বিমানবন্দরের অধিকর্তা রাকেশ সহায় এ দিন জানিয়েছেন, শুক্রবার ভোর পাঁচটা থেকে বিমানবন্দরের টার্মিনাল সাধারনের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছিল। এ দিন ৩৯০৬ জন যাত্রী বাগডোগরা থেকে অন্য গন্তব্যে উড়ে গিয়েছেন, যাঁদের মধ্যে সিংহভাগই পর্যটক। অন্য দিকে এ দিন বিভিন্ন শহর থেকে বাগডোগরায় উড়ে এসেছেন ৩৮০১ জন যাত্রী। যাঁদের মধ্যে অনেকেই বিকেল-সন্ধ্যা পর্যন্ত বাগডোগরাতেই অপেক্ষা করেছেন। পাহাড়ের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে তাঁরা যে যার মতো গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়েছেন। জুন মাসের এই সময়ে সাধারণত এর চেয়ে প্রায় এক হাজার কম যাত্রী বাগডোগরা দিয়ে যাতায়াত করেন। শনিবার যাত্রীদের এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলেও মনে করা হচ্ছে।

এই যাত্রীদের সুবিধার কথা মাথায় রেখে বৃহস্পতিবার এবং শুক্রবার সন্ধ্যায় বিমানবন্দরের ভিতরের রেস্তোরাঁ-র ম্যানেজারদের নিয়ে বৈঠক করেছেন রাকেশ। প্রধানত শিশুদের কথা ভেবেই প্রতিটি রেস্তোরাঁয় বেশি করে দুধ, কেক ও বিস্কুট রাখার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। রাকেশের কথায়, ‘‘শনিবারেও যাতে পর্যাপ্ত খাবার ও পানীয় জল থাকে তার জন্য বলা হয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE