Advertisement
০৪ মে ২০২৪
Alipurduar

বাবা রাজমিস্ত্রি, আইএসএস-এ দেশে দ্বিতীয় হয়ে তাক লাগিয়ে দিলেন আলিপুরদুয়ারের বাপ্পা

আলিপুরদুয়ার শহর লাগোয়া দক্ষিণ মাঝেরডাবরিতে বাড়ি বাপ্পার। বাড়িতে বাবা গোপাল সাহা ছাড়া রয়েছেন মা লক্ষ্মী সাহা ও দিদি বর্ণালি সাহা।

মায়ের সঙ্গে বাপ্পা সাহা। নিজস্ব চিত্র

মায়ের সঙ্গে বাপ্পা সাহা। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
আলিপুরদুয়ার শেষ আপডেট: ০৪ জানুয়ারি ২০২৩ ০৭:৫০
Share: Save:

বাবা সামান্য রাজমিস্ত্রি। মাটির মেঝে ও টিনের চাল দেওয়া বাঁশের বেড়ার ঘরে থেকে বড় হওয়া। যে টিনে আবার ফুটো থাকায় বৃষ্টি হলেই ঘরে টুপ-টুপ করে পড়ত জল। অষ্টম শ্রেণিতে জুটেছিল সেকেন্ড হ্যান্ড একটা পুরনো সাইকেল। তার আগে, পর্যন্ত কয়েক কিলোমিটার পায়ে হেঁটেই ছিল স্কুলে যাতায়াত। হতদরিদ্র এমনই একটি পরিবার থেকে উঠে এসে ইউনিয়ন পাবলিক সার্ভিস কমিশনের (ইউপিএসসি) আইএসএস বা ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিক্যাল সার্ভিস পরীক্ষায় গোটা দেশে দ্বিতীয় হলেন আলিপুরদুয়ারের বাপ্পা সাহা। বাপ্পার এই সাফল্যে উচ্ছ্বসিত আলিপুরদুয়ারবাসী।

আলিপুরদুয়ার শহর লাগোয়া দক্ষিণ মাঝেরডাবরিতে বাড়ি বাপ্পার। বাড়িতে বাবা গোপাল সাহা ছাড়া রয়েছেন মা লক্ষ্মী সাহা ও দিদি বর্ণালি সাহা। স্কুলে শিক্ষক বা সহপাঠীদের মধ্যে বরাবরই মেধাবী হিসাবে পরিচিত ছিলেন বাপ্পা। ছোটবেলায় আলিপুরদুয়ার শহরের দুর্গা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তি হন গোবিন্দ হাই স্কুলে। সেখান থেকেই ৯১শতাংশ নম্বর পেয়ে মাধ্যমিকে ও ৯৪.৬ শতাংশ নম্বর পেয়ে উচ্চমাধ্যমিকে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন তিনি। তার পরে, উত্তরবঙ্গ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকে (বিএসসি) ভর্তি হন। তাতে গোল্ড মেডেল পান বাপ্পা।

বাপ্পার কথায়, “স্নাতক স্তরে ভর্তির পরেই স্ট্যাটিস্টিক্স বিষয়টা জানতে পারি। ছোট থেকে অঙ্কে ভাল ছিলাম বলে স্নাতকোত্তরে (এমএসসি) এগ্রিকালচার স্ট্যাটিস্টিকস নিয়ে পড়াশোনার সিদ্ধান্ত নিই। দিল্লির এগ্রিকালচারাল রিসার্চ ইনস্টিটিউটে স্নাতকোত্তরে ভর্তির পরে, সিনিয়রদের থেকে আইএসএস পরীক্ষার কথা জানতে পারি। শুরু করে দিই প্রস্তুতি।”

বাপ্পা বলেন, “বাবা সামান্য রাজমিস্ত্রির কাজ করায় ছোটবেলা থেকে খুব বেশি বইপত্র হয়তো কিনে দিতে পারেননি। তবে শিক্ষকেরা খুব সাহায্য করেছেন। অনেকেই বিনা পয়সায় টিউশন পড়িয়েছেন। বই-পত্রও কিনে দিয়েছেন। আর এগ্রিকালচারে বিএসসি করার সময় স্কলারশিপ পাই। তা দিয়ে এমএসসি-র পাশাপাশিআইএসএস পরীক্ষার প্রস্তুতি নিই।”

বাপ্পার মা লক্ষ্মী বলেন, “জমি বন্ধক রেখে ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিয়ে এখন দু’টি পাকা ঘর করেছি। ছেলেটা ছোট থেকে বড় হয়েছে বেড়ার ঘরে। অনেক দিন শুধু ডাল-ভাত খেয়ে পায়ে হেঁটে স্কুলে গিয়েছে। টিফিনের টাকাও দিতে পারিনি। তা-ও মন দিয়ে পড়াশোনা করেছে।” বাবা গোপাল বলেন, “ছেলে কত কষ্ট করে বড় হয়েছে, বলে বোঝাতে পারব না। ওর সাফল্য আমার বুক চওড়া করে দেয়।” বাপ্পা যে স্কুলে পড়াশোনা করতেন, সেই গোবিন্দ হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক রাজীব দাসের কথায়, “মেধা ও পরিশ্রমের কাছে অর্থ যে প্রতিবন্ধকতা নয়, বাপ্পা দেখিয়ে দিলেন।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Alipurduar IAS UPSC Exam
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE