Advertisement
E-Paper

ট্রেনের সময় জেনে ঘর ছাড়ে বেলাকোবা

হলদিবাড়ি প্যাসেঞ্জার থেকে রাজধানী এক্সপ্রেস, কখন বেলাকোবা পার হচ্ছে, তার খোঁজ রাখতে হয় বাসিন্দাদের। সে তিস্তাতোর্সা হোক কিংবা বেঙ্গালুরু এক্সপ্রেস। বেলাকোবার উপর দিয়ে যাওয়া যে কোনও ট্রেনের সময়সূচির সঙ্গে বাসিন্দাদের দিনযাপনও জড়িয়ে পড়েছে।

অনির্বাণ রায়

শেষ আপডেট: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০২:২২
বেলাকোবা রেলগেটে এ ভাবেই আটকে থাকতে হয় বাসিন্দাদের। বিশ্বরূপ বসাকের তোলা ছবি।

বেলাকোবা রেলগেটে এ ভাবেই আটকে থাকতে হয় বাসিন্দাদের। বিশ্বরূপ বসাকের তোলা ছবি।

হলদিবাড়ি প্যাসেঞ্জার থেকে রাজধানী এক্সপ্রেস, কখন বেলাকোবা পার হচ্ছে, তার খোঁজ রাখতে হয় বাসিন্দাদের। সে তিস্তাতোর্সা হোক কিংবা বেঙ্গালুরু এক্সপ্রেস। বেলাকোবার উপর দিয়ে যাওয়া যে কোনও ট্রেনের সময়সূচির সঙ্গে বাসিন্দাদের দিনযাপনও জড়িয়ে পড়েছে। তাই বেলাকোবার যাঁর হয়ত কোনদিনই রাজধানী এক্সপ্রেসে চড়ার প্রয়োজন হয়নি, তিনিও সেই ট্রেনের সময় জানেন।

ভোর হোক বা গভীর রাত, গোধুলি বা ভরদুপুর, বাড়ি থেকে বের হওয়ার আগে রেল গেট খোলা না বন্ধ তা জেনে নিতে বয় বেলাকোবার বাসিন্দাদের। না হলে রেল গেটে আটকা পড়ার দুর্ভোগ রয়েছে। বাসিন্দারা হিসেব করে দেখেছেন, একবার গেট বন্ধ হওয়ার পরে সাধারণত তার ১০ মিনিটের মধ্যে ফের গেট বন্ধ হয় না। আর ট্রেনের সময়সূচি জানা থাকলে, দুর্ভোগে আটকা পড়ার আশঙ্কা নেই। তাই বেলাকোবার সকলকেই কমবেশি ট্রেনের খবর রাখতে হয়।

বেলাকোবার বুক চিরে চলে গিয়েছে রেল লাইন। নিউ জলপাইগুড়ি থেকে অসম এবং হলদিবাড়ি এই দুই রুটে যাতায়াতকারী ট্রেন বেলাকোবা দিয়েই যায়। দিনে অন্তত ৩০ জোড়া ট্রেন যায় বলে রেল সূত্রে জানা গিয়েছে। বাড়ছে প্রতিদিন চলাচলকারী মালগাড়ির সংখ্যাও। প্রতিবারই বন্ধ হয় রেলগেট। হলুদ আর কালো রঙের ভারী লোহার স্তম্ভ রেল লাইনের দু’পাশে নেমে আসতেই বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে এলাকার দুই প্রান্ত। রেল গেটের দু’পাশে বাজার, স্কুল, ব্যাঙ্ক, ওষুধের দোকান ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। স্টেশন কলোনি, কলেজ পাড়া এবং বিবেকানন্দ পাড়ার বাসিন্দাদের পেট্রোল পাম্প, ব্যাঙ্কে যাওয়া থেকে শুরু করে জামা কাপড় কিনতে বড় দোকানে যেতে হলেও রেলগেট পার হতে হয়। অন্যদিকে, গরম মশলা থেকে শুরু করে মাছ-মাংস বাজারের টুকিটাকি কেনাকাট থেকে স্কুল, হাসপাতালে যেতে প্রতিবার রেল গেট পার হতে হয় স্টেশন কলোনি, বটতলা এবং আদর্শ পাড়ার বাসিন্দাদের। গেট বন্ধ থাকলে রোদ-বৃষ্টি মাথায় নিয়ে যানজটে আটকে থাকতে হয়। প্রতিবারই বাড়ি থেকে বের হয়ে রেল গেটে আটকা পড়তে হয়েছে এমনও ঘটনাও বেলাকোবার বাসিন্দাদের নিত্যনৈমিত্তিক বলে অভিযোগ।

বাসিন্দাদের দাবি, ঘণ্টায় গড়ে অন্তত ৬ বার রেলগেট বন্ধ হয়। বাসিন্দাদের কয়েকজন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, শিলিগুড়ি শহরে একাধিক আন্ডারপাস তৈরি হয়েছে। অথচ বেলাকোবা শহরের মধ্যে একটিও আন্ডারপাস তৈরি হয়নি। উড়ালপুল নিয়েও কেউ চিন্তাভাবনা করেনি বলে অভিযোগ। অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক তপন শূরের অভিযোগ, “প্রতি দশ মিনিট অন্তর শহরটা থমকে যায়। দু’দিকে যানবাহন সার দিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে। কতটা দুর্ভোগ পোহাতে হয় তা একমাত্র বেলাকোবাবাসী ছাড়া অন্য কেউ কল্পনাও করতে পারবে না।”

যাতায়াত-যন্ত্রণাই শুধু নয়। রয়েছে পরিষেবা-নাগরিক স্বাচ্ছন্দ্য নিয়েও বিস্তর অভিযোগ। রেস্তোরা দুরঅস্ত। গড়ে ওঠেনি রাত্রিবাসের কোনও হোটেল বা অতিথি নিবাস। নেই নিকাশীর কোনও ব্যবস্থা। কাঁচা নর্দমা মশার আঁতুরঘর। প্রবীণ বাসিন্দা মহাবীর চাঁচান বলেন, “এ বছর আমার ৭৭ বছর বয়স হল। স্বাধীনতার সময় থেকেই স্মৃতি ধরে রেখেছি। শহরে নতুন বাড়িঘর, রাস্তা তৈরি ছাড়া তেমন কোনও পরিবর্তন মনে পড়ে না। সব থেকে বড় সমস্যা হল কোনও পরিষেবাই মেলে না। বছরে একদিন মাত্র বেলাকোবায় রাস্তা সাফাই হয়। সেটা হল দুর্গাপুজোর দিন।”

দীর্ঘদিন আগে একবার পুরসভা গঠনের দাবি উঠলেও, সে দাবি নিয়ে বেলাকোবায় তেমন বড়সর কোনও আন্দোলন হয়নি বলেই জানা গিয়েছে। কেন? এ বিষয়ে নানা মত থাকলেও, জাতীয় সড়কের ধারে চা বাগান, নদী ঘেরা এই জনপদ তার ‘প্রাপ্য’ যে পায়নি সে বিষয়ে সকলেই একমত। বাসিন্দাদের কথায় পাকিয়ে ওঠে অভিমান। তাঁরা জানান, বেলাকোবা মানে একরাশ বঞ্চনা, আর একটা ক্ষত-ও।

নভেম্বরের কুয়াশা ঢাকা এক সন্ধ্যা। বেলাকোবা স্টেশনে দাঁড়ানো নিউ জলপাইগুড়িগামী প্যাসেঞ্জার ট্রেনের একটি কামরায় বিস্ফোরণ কেড়ে নিয়েছিল ৮টি প্রাণ। ২০০৬ সালের ২১ নভেম্বরের সেই সন্ধ্যা যেন বেলাকোবায় ‘উপদ্রুত’ তকমা সেটে না দিতে পারে তার জন্য সচেষ্ট ছিলেন বাসিন্দারা। পারেও নি। বিস্ফোরণের পরে এলাকায় কোনও নাশকতা বা জঙ্গি হানাহানির ঘটনা বেলাকোবাকে ছুঁতে পারেনি।

বিস্ফোরণের পরে বাসিন্দারা সকলে মিলে এলাকায় সভা-মিছিল-আলোচনা করে শান্তি বজায় রাখতে পেরেছেন। অনেকটাই ঢেকে দিতে পেরেছেন বিস্ফোরণের সেই ক্ষতস্থানকে।

(শেষ)

amar sohor belakoba jalpaiguri anirban roy train time state news online state news latest news leave house
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy