ভোট নিয়ে কথা বলতে হবে শুনেই এক মুখ হাসি। সাবেক ছিটের এক বাসিন্দা বলেই ফেললেন, ‘‘এই বার বেশ ভোট ভোট মনে হচ্ছে। এতদিন আমাদের কেউ সে ভাবে গুরুত্ব দিত না।’’
একটা সময় ছিল যখন, রাজনৈতিক দলগুলো তাঁদের নিয়ে মিছিলে দল ভারি করত। কেউ পরিচয় ভাঁড়িয়ে নিজের নামও তুলে নিত ভোটার তালিকায়। তাঁরাও ভোট দিতেন একটা আশঙ্কা নিয়েই। তার পরে ধরলা, বানিয়াদহ দিয়ে অনেক জল গড়িয়ে গিয়েছে।
বিনিময়ের পরে ভোটার পরিচয়পত্র হাতে পেয়েছেন বাসিন্দারা। বিধানসভা ও লোকসভায় ভোটে যোগ দিয়েছেন তাঁরা। কিন্তু এ বারের মতো ভোটের উত্তাপ কখনও পাননি ওঁরা। কেউ ভোটের আনন্দে মেতে ঊঠেছেন। কেউ বিরোধী শিবিরে নাম লিখিয়ে আবার কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন গ্রামেই। অনেকে আবার উন্নয়ন নেই, এই অভিযোগে ভোট থেকেই নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন।
পঞ্চায়েত ভোট ঘিরে তাই এক অন্য দিন দেখছেন কোচবিহারের সাবেক ছিটমহলের বাসিন্দারা। দিনহাটার বামনহাট লাগোয়া পোয়াতুর কুঠি সাবেক ছিটমহলে গত বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি তৃণমূলকে অনেক পিছনে ফেলে দিয়েছিল। এবারে অবশ্য চিত্র পাল্টে গিয়েছে। তৃণমূলের হয়ে ওই গ্রাম থেকে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন গৃহবধূ সালিনা পারভিন। তাঁর নামে পোষ্টার, ব্যানার তৈরির কাজও শুরু হয়েছে।
তৃণমূলের সঙ্গে যুক্ত ওই গ্রামের বাসিন্দা সাদ্দাম হোসেন বলেন, “এমন ভোট তো আগে পাইনি কখনও। নিজের গ্রাম থেকেই একজন প্রতিনিধি পাব। যা স্বাধীনতার পরে কখনও পাইনি। সব ভেবেই আনন্দ হচ্ছে।” ওই প্রার্থীর কথায়, “ভোটে দাঁড়ানোর সুযোগ পেয়েছি। ভোটে জিতলে এলাকার উন্নয়নই করব।”
অবশ্য ওই এলাকা এবং সাবেক ছিটমহল মশালডাঙা, বাত্রীগছ, করলা সহ একাধিক জায়গায় বিরোধী দলগুলির সঙ্গে যুক্ত বাসিন্দাদের অভিযোগ, আগের দু’টি ভোটে এমন অবস্থা চোখে পড়েনি। তাঁরা বলেন, “হুমকি দেওয়া হচ্ছে। ভয় দেখানো হচ্ছে। ভোটে দাঁড়ালে বা প্রচারে নামালে এলাকা ছাড়া করার হুমকি দেওয়া হচ্ছে।”
মশালডাঙার এক যুবক জানান, তিনি বিজেপির সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। ওই এলাকায় বিজেপির সমর্থক প্রচুর। তিনি বলেন, “প্রতিদিন শাসক দলের লোকজন গ্রামে ঢুকে হুমকি দিচ্ছে। বাড়িঘরে হামলা হতে পারে তাই আর কোথাও যাচ্ছি না। পরিচয় পাওয়ার পর আর এলাকা ছাড়া হতে চাই না।” মাথাভাঙার সাবেক ছিটমহল নলগ্রামের এক বাসিন্দার কথায়, “এলাকায় উন্নয়ন নেই। আশ্বাস অনুযায়ী কিছুই হচ্ছে না। তাই ভোটের ব্যাপারে মাথা ঘামাচ্ছি না।”
এক সময় ছিটমহল বিনিময় আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বিজেপি নেতা দীপ্তিমান সেনগুপ্ত। তিনি বলেন, “তৃণমূলের সন্ত্রাস কেমন, তা প্রথম পঞ্চায়েত ভোটেই বুঝলেন ছিটমহলের বাসিন্দারা। স্বচ্ছ ও শান্তিপূর্ণ ভোট হলে সাবেক ছিটমহলের সর্বত্র বিজেপির জয় হবে।” তৃণমূলের দিনহাটার বিধায়ক উদয়ন গুহ বলেন, “কোথাও কোনও সন্ত্রাস নেই। সাবেক ছিটমহলের মানূষ উৎসবের মেজাজে প্রথম পঞ্চায়েত ভোটে মেতে উঠেছেন।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy