Advertisement
০৫ মে ২০২৪

গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জ্বরে কাবু বিজেপিও

মনোনয়নপত্র জমা শেষ হতেই দলের অন্দরে কোন্দলের হিসাবে এই জেলায় পঞ্চায়েতের তিন স্তরের অনেক আসনে বিজেপি নেতারা শাসকদলকে ছাপিয়ে গিয়েছেন বলে অভিযোগ৷

পার্থ চক্রবর্তী
আলিপুরদুয়ার শেষ আপডেট: ১১ এপ্রিল ২০১৮ ০২:৫২
Share: Save:

জয়ের সুযোগ রয়েছে বুঝলে কে-ই বা তা হাতছাড়া করতে চান! তা তিনি শাসক দলের নেতাই হোন বা বিরোধী—তাতে যে কিছুই এসে যায় না, তারই যেন জলজ্যান্ত উদাহরণ উত্তরের জেলা আলিপুরদুয়ার৷

আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনে এ বার এমনই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে আলিপুরদুয়ারে৷ মনোনয়নপত্র জমা শুরু হতেই প্রার্থী বাছাই নিয়ে শাসকদলের অন্দরে গোষ্ঠী কোন্দলের দেখা মিলছিল৷ কিন্তু মনোনয়নপত্র জমা শেষ হতেই দলের অন্দরে কোন্দলের হিসাবে এই জেলায় পঞ্চায়েতের তিন স্তরের অনেক আসনে বিজেপি নেতারা শাসকদলকে ছাপিয়ে গিয়েছেন বলে অভিযোগ৷

অভিযোগ, জয়ের সুযোগ রয়েছে বুঝতে পেরেই দলের সিদ্ধান্তকে তোয়াক্কা না করেই ত্রিস্তর পঞ্চায়েতের অনেক আসনে প্রার্থী হিসাবে মনোনয়ন জমা দিয়ে ফেলেছেন বিজেপির অনেক নেতা-নেত্রীই৷ ফলে জেলা পরিষদের দু’টি আসন সহ পঞ্চায়েত সমিতি ও গ্রাম পঞ্চায়েতের অনেক জায়গাতেই এখন এক আসনে বিজেপির একাধিক প্রার্থী৷ যা নিয়ে বেশ খানিকটায় বিড়ম্বনায় দলের অনেক জেলা নেতাও৷ অনেক জায়গাতেই দলের অনুমোদন ছাড়া মনোনয়নপত্র পেশ করা নেতাদের প্রার্থীপদ প্রত্যাহার করতে বোঝানোর কাজ শুরু হয়েছে বলেও বিজেপি সূত্রের খবর৷

এ বার পঞ্চায়েত নির্বাচন ঘোষণা হওয়ার অনেক আগে থেকেই আলিপুরদুয়ারে শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের নেতারা প্রকাশ্যেই ঘোষণা করে আসছিলেন—বিরোধীরা অর্ধেকের বেশি আসনে প্রার্থীই দিতে পারবে না৷ যদিও মনোনয়নপত্র দাখিল শুরু হতেই আসল চিত্র যে একেবারে উল্টো তা পরিষ্কার হতে শুরু করে৷ সোমবার দেখা যায়, আলিপুরদুয়ার জেলা পরিষদের মোট আসন ১৮টি হলেও বিজেপির প্রার্থী সংখ্যা ২০! অথচ, তৃণমূলের প্রার্থী সংখ্যা ১৮-ই রয়েছে৷ পঞ্চায়েত সমিতিতে গোটা জেলায় ১৮৮টি আসনের জন্য বিজেপি প্রার্থীদের মনোনয়ন জমা পড়েছে ২২৭টি৷ আর গ্রাম পঞ্চায়েতে জেলার ৯৯৯টি আসনের জন্য বিজেপির তরফে মনোনয়নপত্র জমা পড়েছে ১০৮৪টি৷ যদিও এই দু’টি স্তরে তৃণমূলের থেকে অল্প খানিকটা পিছিয়ে বিজেপি৷

আলিপুরদুয়ার জেলায় বিজেপির অন্যতম শক্তঘাঁটি বলে পরিচিত মাদারিহাট৷ সেখানে জয়ের সুযোগ আছে বলেই বিজেপি নেতারা ঝাঁপিয়েছেন দাঁড়ানোর জন্য। প্রশাসন সূত্রের খবর, ওই মাদারিহাট ব্লকে জেলা পরিষদ থেকে শুরু করে পঞ্চায়েত সমিতি কিংবা গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরে এক আসনে একাধিক প্রার্থী দেওয়ার নিরিখে তৃণমূলকে পেছনে ফেলে দিয়েছে বিজেপি৷ ওই ব্লকে জেলা পরিষদের তিনটি আসনে বিজেপির মনোনয়ন জমা পড়েছে পাঁচটি৷ এ ছাড়া কালচিনিতেও পঞ্চায়েত সমিতি ও গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরে এক আসনে একাধিক দাবিদারের ক্ষেত্রে তৃণমূলের চেয়ে এগিয়ে বিজেপি৷ ফালাকাটা ব্লকে পঞ্চায়েত সমিতি স্তরে এক আসনে একাধিক দাবিদারের প্রশ্নে বিজেপির চেয়ে তৃণমূল এগিয়ে থাকলেও, গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরে আবার তারা পিছিয়ে৷

বিজেপির জেলা সভাপতি গঙ্গাপ্রসাদ শর্মা অবশ্য বলেন, ‘‘অনেক আসনে আমাদের ডামি প্রার্থী রয়েছে৷ এটা নির্বাচনেরই একটা কৌশল৷ এরসঙ্গে গোষ্ঠী কোন্দলের কোন সম্পর্ক নেই৷’’ আর বিভিন্ন আসনে তাদের দলেরও একই পরিস্থিতি নিয়ে তৃণমূল বিধায়ক সৌরব চক্রবর্তী বলেন, ‘‘আমাদের দল এখন অনেক বড়৷ তাই প্রার্থী হতে চেয়ে কিছু আসনে হয়তো একাধিক নেতা মনোনয়ন পেশ করেছেন৷ আলোচনার মাধ্যমেই তা মিটবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE