Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪

মাথা ফাঁকা? এই নিন ফুল, হেলমেট

হেলমেট না পরেই বাইক নিয়ে তুফানগঞ্জের দিকে যাচ্ছিলেন স্কুল শিক্ষক রোহিনী বর্মন। কোচবিহারের দিকে তখন একই ভাবে যাচ্ছিলেন কলেরপাড়ের বাসিন্দা দীপঙ্কর সরকার।

গোলাপ ফুল এবং নতুন হেলমেট। কোচবিহারে হেলমেটবিহীন মোটরবাইক চালকদের জন্য তৃণমূল নেতার গাঁধীগিরি। সোমবার। প্রশ্ন উঠেছে, এতেও সম্বিত ফিরবে কি?  ছবি: হিমাংশুরঞ্জন দেব।

গোলাপ ফুল এবং নতুন হেলমেট। কোচবিহারে হেলমেটবিহীন মোটরবাইক চালকদের জন্য তৃণমূল নেতার গাঁধীগিরি। সোমবার। প্রশ্ন উঠেছে, এতেও সম্বিত ফিরবে কি? ছবি: হিমাংশুরঞ্জন দেব।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কোচবিহার শেষ আপডেট: ১২ জুলাই ২০১৬ ০২:২৫
Share: Save:

হেলমেট না পরেই বাইক নিয়ে তুফানগঞ্জের দিকে যাচ্ছিলেন স্কুল শিক্ষক রোহিনী বর্মন। কোচবিহারের দিকে তখন একই ভাবে যাচ্ছিলেন কলেরপাড়ের বাসিন্দা দীপঙ্কর সরকার। ৩১ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে ডাউয়াগুড়ি বাজার লাগোয়া এলাকায় হাত তুলে দু’জনকেই থামালেন এক দল যুবক। তাঁদের কারও হাতে লাল গোলাপের গুচ্ছ, কারও হাতে আবার ঝাঁ চকচকে হেলমেটের প্যাকেট। কয়েক মিনিট হেলমেট না পরে বাইক চালানোর ঝুঁকির ব্যাপারে চালকদের বোঝালেন তাঁরা। চোখেমুখে খানিকটা অস্বস্তির ছাপ স্পষ্ট হতেই আচমকা তাঁদের দিকে তরতাজা লাল গোলাপ এগিয়ে দিলেন উদ্যোক্তাদের এক জন। মুহূর্তেই পাশে দাঁড়ান আরেক জন প্যাকেট খুলে হেলমেট পরিয়ে দিলেন মাথায়।

শুধু ওই দু’জনই নন, সাড়ে তিন ঘণ্টায় ওই রাস্তায় যাতায়াতকারী হেলমেটহীন পাঁচশোরও বেশি বাইক চালক উপহার পেলেন এমনই গাঁধীগিরি।

সৌজন্যে তৃণমূল কংগ্রেস।

সোমবার এ ভাবেই রাস্তায় নেমে গাঁধীগিরি করে হেলমেট পরা নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে চাইলেন তৃণমূল নেতা-কর্মীরা।

কোচবিহার কোতোয়ালি থানার ডাউয়াগুড়ি এলাকায় বেলা দশটা থেকে ওই অভিযান শুরু হয়। দলীয় সূত্রের খবর, দুপুর দেড়টা পর্যন্ত সচেতনতা বাড়ানোর ওই অভিনব কর্মসূচি চলে। সাড়ে তিন ঘণ্টায় মোট ৫২০ জন বাইক আরোহীকে লাল গোলাপের পাশাপাশি একটি করে নতুন হেলমেট উপহার হিসেবে তুলে দেওয়া হয়। দলের কর্মীদের ওই উদ্যোগের প্রশংসা করেছেন তৃণমূলের কোচবিহার জেলা সভাপতি তথা উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, “হেলমেট ছাড়া বাইক চালানো উচিত নয়। ওই ব্যাপারে মোটর বাইক চালকদের সচেতনতা বাড়াতেই এই ফুল, হেলমেট উপহার দেওয়া হয়েছে।’’

উপহারেই অবশ্য থেমে থাকেননি উদ্যোক্তারা। রবিবাবু বলেন, ‘‘বাইক চালকদের গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শও দেওয়া হয়েছে এ দিন। আসলে এই অভিযানের মূল লক্ষ্যই ছিল, যে ভাবে হোক হেলমেট না পরে বাইক চালানোর প্রবণতা কমানো বা বন্ধ করা।’’ ডাউয়াগুড়ির তৃণমূল নেতা আজিজুল হক ছিলেন এ দিনের অভিযানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মুখ। তিনি বলেন, “ওই জাতীয় সড়কে অন্তত দু’হাজার মোটর বাইক যাতায়াত করে। চালকদের গড়ে পঞ্চাশ শতাংশের হেলমেট থাকে না। ফলে বেশ কিছু দুর্ঘটনা ঘটেছে। অনেকে মারাও গিয়েছেন। হেলমেট না পরার ঝুঁকি নিয়ে সবাইকে সচেতন করতেই অভিনব এই কর্মসূচি।’’ তার পরে হেসে যোগ করেন, ‘‘ভাল সাড়া মিলেছে।”

এলাকার বাসিন্দারা জানান, কোচবিহার থেকে তুফানগঞ্জ ও বক্সিরহাটগামী রুটে যাতায়াতের একমাত্র ভরসা ওই জাতীয় সড়ক। ওই রুটের শতাধিক যানবাহন তো বটেই অসম-সহ লাগোয়া বিভিন্ন রাজ্যে পণ্যবাহী ট্রাকের যাতায়াতেরও এটাই প্রধান রাস্তা। ফলে দিনের ব্যস্ত সময় তো বটেই, রাতেও ওই রাস্তায় যানবাহনের ভিড় লেগে থাকে। তাই রাস্তাটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। তার ওপর রাস্তা সম্প্রসারণের কাজ চলায় বেশ কিছু অংশে রাস্তা লাগোয়া চত্বর ভেঙে গিয়েছে। কিছু অংশে আবার খানাখন্দ তৈরি হওয়ায় যাতায়াতে সমস্যা বেড়েছে। বৃষ্টি হলে খানাখন্দে জল জমে থাকছে। সব মিলিয়েই হেলমেটহীন মোটর বাইক চালকদের ঝুঁকির আশঙ্কা বেড়েছে। এই পরিস্থিতিতেও পুলিশের তেমন নজরদারি নেই বলে অভিযোগ। যার জেরে রাজ্য সরকারের উদ্যোগের পরেও হেলমেট না পরেই চালকদের অনেকেই বিনা বাধায় এ দিনও রুটে যাতায়াতের জন্য বেরোন। তৃণমূলের ওই উদ্যোগে তাদের কাছে হেলমেট পরার ব্যাপারে একটা বার্তা গিয়েছে। ডাউয়াগুড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল প্রধান চন্দন কার্জি বলেন, “গাঁধীগিরির কায়দায় সচেতনতা বাড়ানর উদ্যোগে অনেকটা কাজ হবে বলে আমরা আশাবাদী।”

যারা ফুল, হেলমেট পেলেন তাঁদের কি বক্তব্য? শ্যামগঞ্জের স্কুল শিক্ষক রোহিনী বর্মন বলেন, “শনিবার বাড়ি ফেরার সময় স্কুলেই ভুল করে হেলমেটটি ফেলে আসায় সমস্যা হয়। না হলে অন্য দিন হেলমেট পরেই যাতায়াত করি।” দীপঙ্কর সরকারের বক্তব্য, “কাছাকাছি যাব বলে হেলমেট না পরে বেরিয়েছিলাম।” অন্য এক বাসিন্দা প্রদীপ দাস বলেন, “ভাল উদ্যোগ। এ ভাবে আগে ভাবা হয়নি।” পুলিশ অবশ্য জানিয়েছে, হেলমেট ছাড়া বাইক চালানোর প্রবণতা বন্ধে জেলা জুড়ে অভিযান চলছে। অনেককেই জরিমানা করা হচ্ছে। পেট্রোল পাম্প মালিকরাও যাতে হেলমেটহীনদের তেল ভরার সুযোগ না দেন, সে জন্য বৈঠক করে আর্জি জানান হয়েছে। কোচবিহারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার দেবর্ষি দত্ত বলেন, “হেলমেট ছাড়া বাইক চালানোর প্রবণতা বন্ধে সর্বত্রই জরিমানা করা হচ্ছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Helmet no helmet no petrol
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE