Advertisement
১১ মে ২০২৪

প্রার্থী জেলে, বিজেপি তবুও তিরিশ হাজারে

জেলে থেকেও ৩০,০২৫! কোচবিহার উত্তর কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থীর প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যাটা এমনই। তাও আবার এমন এক কেন্দ্রে যেখানে শাসক দলের প্রার্থী পরাজিত হয়েছেন হাজার বারো ভোটে। তাই এই ফল ঘিরেই কোচবিহারে ভবিষ্যতের আশা দেখছে বিজেপি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কোচবিহার শেষ আপডেট: ২১ মে ২০১৬ ০২:০৮
Share: Save:

জেলে থেকেও ৩০,০২৫! কোচবিহার উত্তর কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থীর প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যাটা এমনই। তাও আবার এমন এক কেন্দ্রে যেখানে শাসক দলের প্রার্থী পরাজিত হয়েছেন হাজার বারো ভোটে। তাই এই ফল ঘিরেই কোচবিহারে ভবিষ্যতের আশা দেখছে বিজেপি।

জেল থেকে লড়েও কোচবিহার উত্তর কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী সুকুমার রায় ৩০ হাজারের বেশি ভোট পেয়েছেন। জেলার ন’টি আসনের বিজেপি প্রার্থীদের মধ্যে সুকুমারবাবুর প্রাপ্ত ভোট তৃতীয় সর্বোচ্চ। তার আগে রয়েছেন শুধু মাথাভাঙা ও তুফানগঞ্জ কেন্দ্রের প্রার্থীরা। ওই দুটি আসনে বিজেপি প্রার্থীরা যথাক্রমে ৩১,২৫৮টি ও ৩০,০৪৮টি ভোট পেয়েছেন। কোচবিহারের নয়টি আসনের মধ্যে আটটিতেই অবশ্য জিতেছেন তৃণমূল প্রার্থীরা। জেলার একমাত্র কোচবিহার উত্তর কেন্দ্র বিরোধীদের দখলে গিয়েছে। গত বিধানসভায় জেতা ওই আসনটি এ বারেও জোটের ফরওয়ার্ড ব্লক প্রার্থী নগেন্দ্রনাথ রায় ধরে রেখেছেন। তিনি নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী তৃণমূলের পরিমল বর্মনকে ১২,২৭৬ ভোটে হারিয়ে জয়ী হন।

কোচবিহার উত্তরে শাসকদলের জয়ের ‘রথ’ ঠেকানোর প্রসঙ্গে সুকুমারবাবুর প্রাপ্ত ভোট নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক মহলের একাংশের ধারণা, শাসকের জয়ে কাঁটা হয়েছে বিজেপির ওই ভোটব্যাঙ্কই। বিজেপির কোচবিহার জেলা সম্পাদক নিখিলরঞ্জন দে বলেন, “সুকুমারবাবু রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের শিকার। জেলে থেকেও তিনি ৩০ হাজারের বেশি ভোট পেয়েছেন। অথচ শাসক দলের প্রার্থী জোটের কাছে ১২ হাজারের বেশি ভোটে হেরেছেন। এটাই আমাদের কাছে নৈতিক জয়। তবে বাইরে অন্য প্রার্থীদের মত প্রচারের সুযোগ পেলে সুকুমারবাবু আরও অনেক বেশি ভাল ফল করতে পারতেন।” জেলবন্দি সুকুমারবাবুর নির্বাচনের প্রচারে অন্যতম ভূমিকা নিয়ে এলাকা চষে বেড়িয়েছিলেন তাঁর স্ত্রী মায়া রায়। স্বামী হারলেও প্রাপ্ত ভোটের নিরিখে তিনি অনেকটাই খুশি। মায়াদেবী বলেন, “ভোটের আগে কয়েকদিন আগে উনি নিজে প্রচারের সুযোগ পেলে ফলাফল অন্য হতেই পারত। প্রার্থী এলাকায় না গিয়েও যত মানুষের সমর্থন পেয়েছেন তা নেহাত কম নয়। তাছাড়া তৃণমূলকেও মানুষ হারিয়েছেন।”

গত বছর নভেম্বর মাসে কোচবিহারের পুন্ডিবাড়িতে তৃণমূল কর্মী নারায়ণ মহানায়েক গুলিবিদ্ধ হয়ে খুন হন। ওই ঘটনায় বিজেপি নেতা সুকুমারবাবু জড়িত বলে অভিযোগ তোলে। পরিস্থিতির জেরে কিছু দিন গা ঢাকা দেন তিনি। পরে অবশ্য আত্মসমপর্ণ করেন তিনি। জেলবন্দি অবস্থাতেই বিজেপি সুকুমারবাবুর নাম কোচবিহার উত্তর কেন্দ্রের প্রার্থী হিসাবে ঘোষণা করে। সেখান থেকে লড়েই এই ফল হওয়ায় স্বভাবতই উজ্জীবিত বিজেপি শিবির। লোকসভা নির্বাচনের প্রাপ্তভোটও ধরে রেখেছেন সুকুমারবাবু। বিজেপি লোকসভায় ওই কেন্দ্রে ৩৪,৩০৬ ভোট পেয়েছিল। এ বারের বিধানসভায় সুকুমারবাবু পেয়েছেন তার চাইতে ৪,২৮১ ভোট কম পেয়েছেন।

দলীয় সূত্রে খবর, তৃণমূলের অন্দরেও ওই আসনটি হারার কারণ নিয়ে পর্যালোচনা শুরু হয়েছে। কেবল বিজেপির ওই ভোট ধরে না রাখাই শুধু নয়, কংগ্রেসের ভোটও আসনটিতে ফ্যাক্টর হয়েছে বলে মনে করছেন তৃণমূলের অনেকেই। লোকসভা ভোটে ওই কেন্দ্রে কংগ্রেস ১৯,১৩৪ টি ভোট পেয়েছিল। বামেদের ফব প্রার্থী পান ৬৯,৮৩৪ ভোট পান। তৃণমূলের ঝুলিতে গিয়েছিল ৭১,৭৩৭ ভোট। স্বাভাবিকভাবে জোটের ভোট অঙ্কে খানিকটা ব্যাকফুটে ছিলেন তৃণমূল প্রার্থী। তবে বিজেপির ভোট ব্যাঙ্ক ধসিয়ে হিসেব পাল্টানো যাবে বলে মনে করেছিলেন স্থানীয় তৃণমূল নেতাদের অনেকেই। তা হয়নি। তৃণমূলের কোচবিহার জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, “ওই কেন্দ্রে বিজেপির ভোট শুধু নয় কংগ্রেসের একটা ভোট রয়েছে। সেটা জোটের সঙ্গে যোগ হয়েছে। কিছু বিরোধী পঞ্চায়েতও এলাকায় রয়েছেন। বিজেপির নৈতিক জয়ের মত এটা বিষয় নয়।” সুকুমারবাবুর বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ নিয়ে বিজেপির বক্তব্য উড়িয়ে দিয়ে তিনি বলেন, “আমাদের কর্মী খুন নিয়ে যা ঘটনা সেই ভিত্তিতেই অভিযোগ হয়েছে।” ওই কেন্দ্রের পরাজিত তৃণমূল প্রার্থী পরিমলবাবু বলেন, “বিজেপি লোকসভাতেও প্রায় একই রকম সংখ্যায় ভোট পেয়েছিল। সেটা একটা কারণ হতে পারে। সবকিছু পর্যালোচনা করে দেখা হচ্ছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE