ট্রাকে পণ্য ওঠানো-নামানোর মজুরি নিয়ে বচসাকে কেন্দ্র করে হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়ল তৃণমূল প্রভাবিত শ্রমিক ও মালিক সংগঠনের সদস্যরা। মঙ্গলবার শিলিগুড়ি নিয়ন্ত্রিত বাজারে এই ঘটনা ঘটে। এ দিন বাজারের শ্রমিক সংগঠনের সঙ্গে মালিক সংগঠনের বৈঠক ছিল। মালিক সংগঠনের যে সদস্যদের সঙ্গে শ্রমিক সংগঠনের সদস্যদের মারপিট হয়েছে, তাঁরাও তৃণমূলের সক্রিয় কর্মী বলে পরিচিত। পরিস্থিতি সামাল দিতে ঘটনাস্থলে যান প্রধাননগর থানার পুলিশ। দুই পক্ষই থানায় তাঁদের মারধর করা হয়েছে বলে অভিযোগে দায়ের করেছেন। এদিন সব্জি ও ফল কমিশন এজেন্টদের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, ২৪ ঘন্টার মধ্যে এই সমস্যার সমাধান না হলে তাঁরা ব্যবসা বন্ধের হুমকি দিয়েছেন। এই ঘটনায় দু’পক্ষের অন্তত ৬ জন আহত হয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। প্রত্যেককেই শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। এ দিনই বিকেলের মধ্যে অবশ্য সকলকেই হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার জগমোহন বলেন, “অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। প্রয়োজনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” নিয়ন্ত্রিত বাজার কমিটির চেয়ারম্যান তথা শিলিগুড়ির মহকুমাশাসক দীপাপ প্রিয়া বলেন, “এদিন মাল ওঠানো-নামানোর মজুরি নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে বিবাদ বাধে। তা মেটাতে বৈঠক করা হচ্ছিল। হঠাৎই দু’পক্ষের বাদানুবাদ হাতাহাতির পর্যায়ে চলে যায়। পরে পুলিশকে খবর দেওয়া হলে তাঁরা এসে অবস্থা নিয়ন্ত্রণে আনে। বিষয়টি পর্যালোচনা করা হবে।”
নিয়ন্ত্রিত বাজার সূত্রের খবর, বেশ কয়েক মাস ধরে শিলিগুড়ির নিয়ন্ত্রিত বাজারের মাল ওঠানো-নামানোর মজুরি নিয়ে শ্রমিকদের সঙ্গে মালিকদের বিবাদ চলছিল। বাজার কমিটির চেয়ারম্যান প্রথমে একটি তালিকা করলে দোকান মালিকরা আপত্তি জানান। তাঁদের অনুরোধে ফের একটি তালিকা তৈরি হয় বলে জানা গিয়েছে। সেই তালিকায় মজুরির হার কমিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করে শ্রমিক সংগঠনের তরফে আপত্তি জানানো হয়। আপত্তি-পাল্টা আপত্তির জেরে সম্প্রতি কয়েকদিন নিয়ন্ত্রিত বাজারে কেনাবেচা বন্ধও ছিল বলে জানা গিয়েছে। ফের আরেকবার মজুরির হার ঠিক হয়। বাজার কমিটি সূত্রের খবর, প্রথমে সকলেই তা মেনে নিলেও, সেই মজুরির হার নিয়েও পরে আপত্তি উঠতে শুরু করে।
মঙ্গলবার সকালে গণেশ সিংহ নামে এক কমিশন এজেন্টের স্কোয়াশ নামানোর মজুরি নিয়ে বচসা বাধে বলে অভিযোগ। সচিবের কার্যালয়ে বৈঠক করে সেই বিবাদ মীমাংসার সিদ্ধান্ত হয়। বৈঠকে নিয়ন্ত্রিত বাজার ফল ও সব্জি কমিশন এজেন্টদের একাংশের সঙ্গে কয়েকজন শ্রমিক বৈঠকে বসেন। সেখানেই বচসার সূত্রপাত বলে অভিযোগ। বচসা থেকে শুরু হয় হাতাহাতি। দু’পক্ষই মারমুখী হয়ে ওঠে। লাঠি নিয়ে জড়ো হন দু’পক্ষের অনেকেই। পুলিশ অবস্থা নিয়ন্ত্রণে আনতে লাঠিও চালায় বলে জানা গিয়েছে। হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় মালিক সংগঠনের সদস্য গণেশ সিংহ ও প্রবংশ সিংহকে। গণেশবাবুর অভিযোগ, “আমরা সরকারি হারে মজুরি দিতে চাইছি। কিন্তু শ্রমিকরা তা মানতে রাজি নন। তাদের সে কথা বলতেই তাঁরা আমাদের মারধর করে। আমি থানায় অভিযোগ জানিয়েছি।”
গণেশবাবুর দাবি, তিনি তৃণমূলের সক্রিয় কর্মী। বিষয়টি নিয়ে তিনি দলের নেতৃত্বকে অভিযোগ জানাবেন বলেও জানিয়েছেন। শ্রমিকরাও পাল্টা মারধরের অভিযোগ দায়ের করেছেন। আইএনটিটিইউসি প্রভাবিত শ্রমিক সংগঠনের সদস্য পল্টন যাদব বলেন, “ গণেশ সিংহ সহ ও আরও কিছু লোক আমাকে মারধর করে। অভিযোগ দায়ের করেছি।” আইএনটিটিইউসির নিয়ন্ত্রিত বাজার শাখার সম্পাদক বিজয় যাদব বলেন, “আমরা সরকারি হারেই মজুরি চাইছি। কিন্তু নির্দেশে পরিষ্কার করে ওজন অনুপাতে মজুরি লেখা নেই। তা নিয়েই আমরা আপত্তি জানাই।”
অন্যদিকে পাইকারি ব্যবসায়ীদের সংগঠন নিয়ন্ত্রিত বাজার ফল ও সব্জি কমিশন এজেন্টদের সম্পাদক শিব কুমার বলেন, ‘‘আমরা সরকার নির্ধারিত হারে মজুরি দিচ্ছি। কয়েকজন উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে তার বিরোধিতা করে উত্তেজনা ছড়াচ্ছে। আমার এর সমাধান চাই। না হলে প্রয়োজনে ব্যবসা বন্ধ রেখে আন্দোলন করব।” তাঁরাও সংগঠনগতভাবে একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন থানায় বলে শিবকুমারবাবু দাবি করেছেন।
এ বিষয়ে আইএনটিটিইউসির জেলা সভাপতি অরূপরতন ঘোষ বলেন, “আমি শহরের বাইরে রয়েছি। ফিরে এসে কী হয়েছে তা খোঁজ নিয়ে দেখব।” তবে বাজার কমিটির সচিব সুব্রত দাস বিষয়টি নিয়ে কিছু বলতে চানননি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy