বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক।
লাটাগুড়িতে বাণিজ্যিক আবাসন নির্মাণ নিয়ে শিলিগুড়ির বিজেপি বিধায়কের তোলা অভিযোগের ভিত্তিতে রাজ্য বন দফতরের কাছে রিপোর্ট চাইল কেন্দ্রীয় বন ও পরিবেশ মন্ত্রক। মন্ত্রকের বন রক্ষা বিভাগ থেকে রাজ্য বন দফতরের প্রধান আধিকারিককে চিঠি পাঠিয়ে এ ব্যাপারে রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে। সে চিঠির প্রতিলিপি দেওয়া হয়েছে শিলিগুড়ির বিধায়ক শঙ্কর ঘোষকেও। বন মন্ত্রকের চিঠিতে বলা হয়েছে, শিলিগুড়ির বিধায়ক যে অভিযোগ জানিয়েছেন, সেটিকে বন সংক্রান্ত বর্তমান আইনে খতিয়ে দেখে, যত দ্রুত সম্ভব রিপোর্ট পাঠাতে হবে। এ দিকে, রাজ্যের বন দফতরের তরফে জানানো হয়েছে, প্রকল্পটির আইনি এবং পরিবেশগত দিক খতিয়ে দেখা পর্যন্ত কাজ বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে।
বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, ‘‘ওই প্রকল্পটি গরুমারা জাতীয় উদ্যান থেকে তিন কিলোমিটারেরও বেশি দূরে। লাটাগুড়ি বনাঞ্চল থেকে ২৮০ মিটার দূরে। তাই বনাঞ্চলের মধ্যে সেটি পড়ে না। বনাঞ্চলের পরে, কিছু বাড়িও রয়েছে। তবে স্পর্শকাতর জ়োন যদি ঘোষণা হয়, তখন সেটি ভাঙতে হবে। জাতীয় উদ্যান থেকে সে দূরত্ব যা ঠিক হবে, তা মানতে হবে। ওই প্রকল্পের বিষয়টি খতিয়ে দেখতে দল পাঠানো হয়েছে। সিসিএফ যাবেন, বিএলএলআরও, জেলাশাসকেরা যাবেন। তাঁরা ছাড়পত্র দিলে, তবেই কাজ করবেন। তাই প্রকল্পের কাজ এখন বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে।’’
সম্প্রতি লাটাগুড়িতে বাণিজ্যিক আবাসন নির্মাণ শুরু করে বেঙ্গল অম্বুজা গোষ্ঠী। সংস্থার তরফে দাবি, জমিটি বহুদিন আগেই কেনা ছিল। বাণিজ্যিক ভবনের নির্মাণ শুরুর ঘোষণা হতেই শিলিগুড়ির বিজেপি বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ বিধানসভায় সরব হন, মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠিও পাঠান। শঙ্করের অভিযোগ, ওই এলাকায় বাণিজ্যিক আবাসন তৈরি হলে জঙ্গল এবং পরিবেশের উপরে প্রভাব পড়বে। আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে আবাসন নির্মাণ চলছে বলেও শঙ্কর অভিযোগ তোলেন। কেন্দ্রীয় পর্যটন মন্ত্রী থেকে বন মন্ত্রকেও নালিশ জানান শঙ্কর। সেই নালিশের ভিত্তিতেই রিপোর্ট চেয়েছে কেন্দ্রের বন মন্ত্রক।
বিধায়ক বলেন, “কেন্দ্র এবং রাজ্যের তরফে যে পদক্ষেপ করা হচ্ছে তাকে স্বাগত জানাচ্ছি। উত্তরবঙ্গে পর্যটনের একটা সঠিক নীতি দরকার। কেন্দ্র এবং রাজ্যের বিধিনিষেধ মেনেই সব কিছু হোক। বন, পাহাড়, নদীকে বাঁচিয়ে যাতে পর্যটন হয় সেটা দেখতে হবে। তার বাইরে বাণিজ্যিক আবাসন নির্মাণ হলে তার বিরুদ্ধে সর্বাত্মক প্রতিবাদ এবং আইনি রাস্তায় হাঁটব।“
বেঙ্গল অম্বুজা গোষ্ঠীর প্রধান (লিগ্যাল স্ট্র্যাটেজি অ্যান্ড রেগুলেটরি ইস্যু) পার্থ চক্রবর্তী সোমবার দাবি করেন, তাঁদের শিল্পগোষ্ঠী কোনও দিনই বেআইনি কিছু করে না। বিশেষ করে এ ক্ষেত্রে অরণ্যের সঙ্গে তাঁদের ওই প্রকল্পের কোনও সম্পর্কই নেই। তিনি বলেন, ‘‘অনেক ক্ষেত্রে বন (ফরেস্ট) হিসাবেই মৌজা নির্দিষ্ট থাকে। যেমন আমাদের মৌজার পরে, নিম্ন তেন্ডু ‘ফরেস্ট’ মৌজা রয়েছে। আমাদেরটা ঝাড় মাটিয়ালি মৌজা। সেটা কোনও দিনই ফরেস্ট মৌজা ছিল না।’’
জমির ছাড়পত্রের প্রসঙ্গে পার্থবাবু বলেন, ‘‘রাজ্যের ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের ছাড়পত্র নেওয়া হয়েছে। জেলা পরিষদ, দমকল বিভাগও বিল্ডিং প্ল্যান অনুমোদন করেছে। এটি যেহেতু অরণ্য নয়, তাই আলাদা করে বন বিভাগের অনুমোদন লাগেনি। এ ছাড়া, নিয়ম অনুযায়ী, ‘ওয়াইল্ড লাইফ স্যাংচুয়ারি’-র এক কিলোমিটারের মধ্যে কোনও নির্মাণ করা যায় না। আমরাও কিছু করিনি। গরুমারার জঙ্গলও আমাদের প্রকল্পের চেয়ে অনেক দূরে।’’ তাঁদের আরও দাবি, পরিবেশ আইন সংক্রান্ত যে সব নিয়ম রয়েছে, সেগুলোর সব এখন ওই প্রকল্পের ক্ষেত্রে কার্যকর না হলেও তাঁরা আগাম সে সব ব্যবস্থার কথা মাথায় রেখেই এগোচ্ছেন।
সহ-প্রতিবেদন: দেবপ্রিয় সেনগুপ্ত
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy