Advertisement
০৭ মে ২০২৪

ধূপগুড়ি কাণ্ডে চার্জশিটে নাম তৃণমূল নেতাদের

তৃণমূলের নেতাদের ডাকা সালিশি সভায় হেনস্থার জেরেই ধূপগুড়ির দশম শ্রেণির ছাত্রী আত্মঘাতী হয়েছে বলে দাবি করে চার্জশিট পেশ হল জলপাইগুড়ি জেলা আদালতে। গত ২ সেপ্টেম্বর ধূপগুড়িতে রেললাইন থেকে ওই ছাত্রীর দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। তাকে ধর্ষণের পরে খুন করা হয়েছে বলে অভিযোগ দায়ের করেন বাড়ির লোকজন। পুলিশ ধর্ষণ-খুনের মামলা রুজু করে।

কিশোর সাহা
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ২৮ অক্টোবর ২০১৪ ০২:২৩
Share: Save:

তৃণমূলের নেতাদের ডাকা সালিশি সভায় হেনস্থার জেরেই ধূপগুড়ির দশম শ্রেণির ছাত্রী আত্মঘাতী হয়েছে বলে দাবি করে চার্জশিট পেশ হল জলপাইগুড়ি জেলা আদালতে। গত ২ সেপ্টেম্বর ধূপগুড়িতে রেললাইন থেকে ওই ছাত্রীর দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। তাকে ধর্ষণের পরে খুন করা হয়েছে বলে অভিযোগ দায়ের করেন বাড়ির লোকজন। পুলিশ ধর্ষণ-খুনের মামলা রুজু করে। কিন্তু ঘটনার ৫৭ দিনের মাথায় রবিবার রেল পুলিশের তরফে তদন্তকারী অফিসার অভিষেক ভট্টাচার্য মামলার চার্জশিট দাখিল করে ওই কিশোরী আত্মহত্যা করেছে বলে দাবি করেছেন।

ওই চার্জশিটে ধূপগুড়ির ৪ তৃণমূল নেতা-সহ ১২ জনের নাম রয়েছে। তাঁরা সকলে এখন জেল হেফাজতে। পুলিশের দাবি, গত ১ সেপ্টেম্বর রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ ধূপগুড়িতে সালিশি সভায় বাবাকে জরিমানার প্রতিবাদ করায় ছাত্রীটিকে হেনস্থা করা হয়। চুলের মুঠি ধরে মারধর করা হয়। থুতু চাটানোর ‘ফতোয়া’ও দেওয়া হয়। ছাত্রীটি আতঙ্কিত হয়ে ছুটে পালিয়ে যায়। মেয়েকে খোঁজার জন্য বাবা তখন যেতে চাইলেও তাঁকে ওই তৃণমূল নেতা ও তাঁদের অনুগামীরা সালিশি সভায় আটকে রাখেন। পর দিন ভোরে ছাত্রীটির দেহ মেলে রেললাইনে।

পুলিশের বক্তব্য, ময়নাতদন্ত রিপোর্টে ধর্ষণের কোনও প্রমাণ মেলেনি। রেলের নথি অনুযায়ী, ইঞ্জিনের সামনে কাউকে ছুড়ে ফেলা অথবা ঝাঁপিয়ে পড়ার দৃশ্য কোনও চালক দেখেননি। তবে ময়নাতদন্তের রিপোর্টে চিকিৎসক স্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিয়েছেন, ‘রেললাইনের পাশে দাঁড়ানো বা চলন্ত অবস্থায় না থাকলে ওই ধরনের আঘাত হওয়া সম্ভব নয়।’ তবে রেললাইনের মাঝখানে সে ছিল না বলে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে। সে জন্য তদন্তকারী অফিসারদের দৃঢ় ধারণা, সালিশি সভায় অপমানিত হওয়ার পরে ছাত্রী আত্মঘাতীই হয়েছে। না হলে অত রাতে একা রেললাইনের ধারে ছাত্রীটির যাওয়ার কোনও কারণ নেই বলে রেল পুলিশের দাবি।

মামলায় অভিযুক্তদের মধ্যে রয়েছেন ধূপগুড়ি পুরসভার তৃণমূল কাউন্সিলর নমিতা রায়ের স্বামী চন্দ্রকান্ত রায়, দলের ওই ওয়ার্ড কমিটির সভাপতি গোবিন্দ ভৌমিক, ওই কমিটির সম্পাদক বিনোদ মন্ডল ও সদস্য তহিদুল ইসলাম। বাকিরা সকলেও তৃণমূলের কর্মী বলে এলাকায় পরিচিত। এতদিন ধূপগুড়ির ঘটনা নিয়ে ‘ষড়যন্ত্র’, ‘সাজানো’ ঘটনা বলে দাবি করেছেন জলপাইগুড়ির তৃণমূল নেতাদের অনেকেই। রেল পুলিশ চার্জশিট পেশের পরে তৃণমূলের নেতাদের অনেকের গলায় এখন ভিন্ন সুর। যেমন তৃণমূলের জলপাইগুড়ি জেলা সভাপতি সৌরভ চক্রবর্তী বলেন, “তৃণমূল কোনও অন্যায়-অপরাধকে প্রশ্রয় দেয় না। ওই ছাত্রীর অপমৃত্যুর ঘটনায় অভিযুক্ত সকলেই ধরা পড়েছেন। দল কোনও অপরাধীর পাশে দাঁড়াবে না।”

ঘটনাচক্রে, ওই মামলা গোড়ায় ‘দুর্ঘটনা’ বলে লঘু করার অভিযোগ উঠেছিল রেল পুলিশের একাংশের বিরুদ্ধে। সেই মামলায় পুলিশ দ্রুত চার্জশিট দিলেও স্বস্তি পাচ্ছেন না ছাত্রীর বাবা। তিনি বলেন, “পুলিশ গোড়া থেকে মামলা অন্য দিকে ঘোরানোর চেষ্টা করছে বলে সন্দেহ করছি।” তাঁর দাবি, এফআইআর-এ এক মহিলা তাঁর মেয়ের চুলের মুঠি ধরে সালিশি সভায় মারধর করেছেন বলে লেখার পরেও তাঁর নাম মামলায় অন্তর্ভুক্ত হল না কেন? তিনি জানান, তাই সিবিআই তদন্তের দাবিতে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন।

আজ, মঙ্গলবার কলকাতা হাইকোর্টে মামলার শুনানি হওয়ার কথা। রাজ্য সরকারের তরফে উচ্চ আদালতে হলফনামাও জমা দেওয়া হয়েছে। পুলিশ সূত্রের খবর, ওই মামলায় তৃণমূল নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে নাবালিকাকে আত্মহত্যায় প্ররোচনার ধারা (ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০৫ ধারা) প্রয়োগ করা হয়েছে। যে ধারায় দোষী প্রমাণিত হলে যাবজ্জীবন সাজা হতে পারে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE