ক্ষতি: বিক্ষোভ চলাকালীন সরকারি বাস ভাঙচুর রায়গঞ্জে। নিজস্ব চিত্র
বিজেপি কর্মীর মৃত্যুর ঘটনায় এ দিনও রীতিমতো তেতে ছিল চোপড়া। বিশেষ করে নিহত অরেন সিংহের দেহ কেন দিতে দেরি হচ্ছে, এই অভিযোগ তুলে বিক্ষোভ শুরু করে বিজেপি। তার পরে সন্ধ্যায় দেহ অরেনের বাড়ির কাছে পৌঁছলে উত্তেজিত বিজেপি সমর্থকেরা ক্ষোভে ফেটে পড়েন। তখন ভিড় সামলাতে পুলিশ লাঠিচার্জ করে এবং কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে বলে অভিযোগ।
অরেনের মৃত্যুতে এ দিন উত্তর দিনাজপুরে বন্ধের ডাক দিয়েছিল বিজেপি। শুধু চোপড়া-ইসলামপুরই নয়, রায়গঞ্জ-সহ গোটা জেলায় বেশ কিছু জায়গায় দোকানপাট বন্ধ ছিল। রাস্তাঘাটও ছিল সুনসান। তৃণমূলের অভিযোগ, বিজেপি সমর্থকেরা পথে নেমে জোর করে বন্ধ করিয়েছেন। সাধারণ মানুষ এবং ব্যবসায়ীরা ভয়ে দোকান বন্ধ রেখেছিলেন। তার উপরে এ দিন ছিল রবিবার। ফলে অফিসকাছাড়ি তো বন্ধই থাকবে।
একই সঙ্গে তাঁরা অভিযোগ করেছেন, সরকারি বাস থেকে শুরু করে বেসরকারি গাড়ি, সবই এ দিন বিজেপি কর্মীদের হুমকিতে তটস্থ ছিল। বেশ কিছু ক্ষেত্রে তাঁরা এনবিএসটিসি বাস, টোটো, মোটরবাইক ভাঙচুর করেন। বিজেপি অবশ্য এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন। তাঁদের বক্তব্য, জেলার মানুষ স্বস্তঃস্ফূর্ত ভাবে বন্ধে সাড়া দিয়েছে।
তবে চোপড়ার পরিস্থিতি ছিল থমথমে। কেন ময়নাতদন্ত করে অরেনের দেহ ছাড়তে দেরি করা হল, সেই অভিযোগ তুলে পথ অবরোধ, বিক্ষোভ মিছিল হয়। জাতীয় সড়কও অবরোধ হয় কিছুক্ষণের জন্য। শনিবার রাতেই ঘটনার পরপর দেহ আটকে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেছিলেন বিজেপি সমর্থকেরা। কোনও মতে দেহ উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠিয়েছিল পুলিশ। এ দিন দেহ পেতে কেন দেরি হচ্ছে, সেই প্রশ্ন তোলেন তাঁরাই। সন্ধ্যার পরে চোপড়ার কাঁচাকলি এলাকায় দেহ পৌঁছলে ফের গোলমাল শুরু হয়। তবে শেষমেশ দেহটি অরেনের বাড়ির দিকে পাঠাতে সক্ষম হয় পুলিশ। জেলা পুলিশ সুপার অমিতকুমার ভরত রাঠৌর বলেন, ‘‘উত্তেজিত জনতা ছিল ঠিকই, তবে তাদের নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়েছে।’’
অরেনের মৃত্যুর পরে এ দিনই তাঁর দাদা ওমন সিংহ তৃণমূল থেকে বিজেপিতে যোগ দেন। এ দিন হাসপাতালে দেখা যায় তৃণমূলের পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য জাভেদ আখতারকেও। যদিও তাঁর দাবি, ‘‘আমি এসেছি মানবতার কারণে।’’ বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবার দুপুরেই রাজ্য বিজেপির একটি প্রতিনিধিদল চোপড়া আসছে।
তৃণমূল সূত্রের খবর, উত্তর দিনাজপুরের কিছু এলাকায় যে ধীরে ধীরে বিজেপি শক্তি বাড়াচ্ছে, সেটা আগেই দলের শীর্ষ নেতৃত্বকে জানানো হয়েছিল। এ দিনও তা উল্লেখ করেন দলের জেলা সম্পাদক মৃত্যুঞ্জয় দত্ত। জেলা মহিলা তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি সবিতা ক্ষেত্রী ও তিনি একসঙ্গে বিষয়টি শুভেন্দু অধিকারীকে জানিয়েছিলেন, দাবি মৃত্যুঞ্জয়বাবুর। হেমতাবাদে যাতে দলের পক্ষ থেকে জোর বাড়ানো হয়, সে কথাও জানানো হয়েছিল দলের শীর্ষ নেতৃত্বকে। তার মধ্যেই এই ঘটনা ঘটে গেল। তৃণমূলের অভিযোগ, বিজেপির অন্তর্দ্বন্দ্বে অরেন প্রাণ হারান। তার পর চোপড়ায় তৃণমূল নেতা বাণেশ্বর সিংহের বাড়ি বিজেপি হামলা চালায় বলে অভিযোগ বিধায়ক হামিদুর রহমানের। তাঁর নেতৃত্বে মিছিলও করে তৃণমূল।
বিজেপির বক্তব্য, পুরোটাই তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীদের কাজ। দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘‘বিস্তারক যোগজনা উপলক্ষে একটি সভা চলছিল। তার উপরে তৃণমূলের লোকজন আক্রমণ চালায়।’’ ২৪ ঘণ্টা হতে চলল, কেনও এখনও কেউ গ্রেফতার হয়নি, সেই প্রশ্নও তোলেন তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy