Advertisement
E-Paper

চিতাবাঘের ভয় শহরে

বুধবার সকালে কাওয়াখালির ছোটবথুজোতের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী বিজয় দাসের গোয়ালের একটি বাছুর খেয়ে আর একটি গরুকে মেরে পেট খুবলে পালিয়েছে জন্তুটি। পায়ের ছাপ দেখে বনকর্মীরা নিশ্চিত চিতাবাঘটি লাগোয়া একটি ছোট চা বাগানের আসেপাশে কোথাও ডেরা বেঁধেছে।

কিশোর সাহা

শেষ আপডেট: ০১ জুন ২০১৭ ০৩:২৫
টোপ: চিতাবাঘ ধরতে গ্রামে বসেছে খাঁচা। বুধবার সকালে কাওয়াখালিতে। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক

টোপ: চিতাবাঘ ধরতে গ্রামে বসেছে খাঁচা। বুধবার সকালে কাওয়াখালিতে। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক

শহরের একেবারে ঘাড়ের কাছে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে চিতাবাঘ। শিলিগুড়ি থানা থেকে মাত্র ৩ কিলোমিটার কাওয়াখালি লাগোয়া এলাকায় তাই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।

বুধবার সকালে কাওয়াখালির ছোটবথুজোতের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী বিজয় দাসের গোয়ালের একটি বাছুর খেয়ে আর একটি গরুকে মেরে পেট খুবলে পালিয়েছে জন্তুটি। পায়ের ছাপ দেখে বনকর্মীরা নিশ্চিত চিতাবাঘটি লাগোয়া একটি ছোট চা বাগানের আসেপাশে কোথাও ডেরা বেঁধেছে। তাই এলাকায় একটি লোহার খাঁচা পেতে তাতে ছাগল রাখা হয়েছে। বনকর্মীদের আশা, ছাগলের টোপেই ফাঁদে পড়বে জন্তুটি।

তাতেও আতঙ্ক কমেনি। যতক্ষণ না চিতাবাঘ ধরা পড়বে, আতঙ্ক কমার কোনও প্রশ্নই নেই বলে জানান বিজয়বাবু। তিনি জানিয়েছেন, গত এক সপ্তাহ ধরেই এলাকায় অঘটন ঘটছে। সূর্য ডুবলেই কখনও উধাও গেরস্তের ছাগল। কখনও তার পেটে গিয়েছে রাস্তার বেওয়ারিশ কুকুর ‘কালু-ভুলু’রা। গোড়াতে কেউ ভাবতেই পারেননি চিতাবাঘ হানা দিয়েছে। কারণ, কাওয়াখালিতে সিআরপির উত্তরবঙ্গের প্রধান দফতর। দিনরাত স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র হাতে পাহারায় থাকেন জওয়ানরা। পাশেই ফিল্ম সিটি হওয়ার কথা। শিলিগুড়ি শহরের কাছে মহানন্দা-বালাসনের মিলনস্থলে কাওয়াখালিতে উপনগরীও হওয়ার কথা। এলাকায় ছোট্ট একটি চা বাগান থাকলেও রাস্তাঘাট অনেক রাত পর্যন্ত লোকজন যাতায়াত করেন। মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কাছে হওয়ায় অ্যাম্বুল্যান্সের আনাগোনা লেগেই থাকে। সে জন্য প্রথমে কেউ ভাবতেই পারেননি চিতাবাধ হানা দিচ্ছে। কিন্তু, বুধবার সকালে বিজয়বাবুর মা গোয়ালে গিয়ে চিৎকার করে ওঠেন রক্ত দেখে।

রক্তের চিহ্ন ধরে প্রায় ১০০ মিটার দূরে গিয়ে দেখা যায় একটি বাছুরের আধ খাওয়া দেহ। অদূরে পড়ে আছে একটি গরুর দেহ। যার পেট খুবলে নেওয়া হয়েছে। খবর পেয়ে বন অফিসাররা পায়ের চাপ দেখে নিশ্চিন্ত হয়েছেন একটি পূর্ণবয়স্ক চিতাবাঘই এলাকায় ঘোরাফেরা করছে। বন দফতরের অনুমান, লাগোয়া ছোট চা বাগানের কোনও গর্তে গা ঢাকা দিয়ে থাকতে পারে জন্তুটি।

ছাপ: চিতাবাঘের এই পায়ের ছাপ ঘিরেই ছড়িয়েছে আতঙ্ক। —নিজস্ব চিত্র।

অবশ্য, এলাকাবাসীদের কাছেই জানা গিয়েছে, ১৯৯০ সালে একবার এলাকায় চিতাবাঘ হানা দিয়ে ১১ জন বাসিন্দাকে জখম করে। সে যাত্রায় বনকর্মীদের গুলিতে চিতাবাঘটির মৃত্যু হয়। ধীরে ধীরে কাওয়াখালিতে উপনগরী তৈরির প্রস্তুতি শুরু হলে এলাকা জমজমাট হয়ে ওঠে। সেই হই-হট্টগোলের মধ্যেও ছোটবথুজোতে গ্রামীণ পরিবেশ থাকায় চিতাবাঘটি সেখানে ঘোরাফেরা করছে বলে মনে করেন পরিবেশপ্রেমীরা।

আলিপুরদুয়ার নেচার ক্লাবের সম্পাদক অমল দত্ত বলেন, ‘‘আলিপুরদুয়ার শহরেও মাঝেমধ্যে চিতাবাঘ হানা দেয়। শিলিগুড়িতেও দিলে অবাক হওয়ার কারণ নেই। শিলিগুড়ি শহরের আশেপাশে জঙ্গল কেটেই বসতি হয়েছে ও হচ্ছে। উপরন্তু, বনের খরগোস, হরিণ, সজারু, বনমুরগির মতো ছোট বন্যপ্রাণীগুলিকে শিকারিরা মারছে। খাদ্যশৃঙ্খল ভেঙে পড়ায় চিতাবাঘ শহর লাগোয়া এলাকায় ঢুকছে। বন দফতরের একাংশের উদাসীনতার জন্যই এমন হচ্ছে কি না তা নিয়ে তদন্ত হওয়া দরকার।’’

Leopard চিতাবাঘ কাওয়াখালি Kawakhali
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy