Advertisement
০৪ মে ২০২৪

ছুটির আগেই ফিরল কফিনবন্দি পলাশ

আজ, বুধবার ছুটিতে বাড়িতে আসার কথা ছিল বাড়ির ছোট ছেলে পলাশের। তার একদিন আগেই অবশ্য বাড়িতে চলে এলেন তিনি। কফিনবন্দি হয়ে। সোমবার বিহারের গয়াতে মাওবাদীদের সঙ্গে সংঘর্ষে সিআরপিএফের কোবরা বাহিনীর নিহত ১০ জওয়ানের একজন দক্ষিণ দিনাজপুরের তপন থানার সালাস গ্রামের পলাশ মণ্ডল(২৮)।

শোকস্তব্ধ পলাশের পরিবার। (ইনসেটে) পলাশ মণ্ডল। — নিজস্ব চিত্র

শোকস্তব্ধ পলাশের পরিবার। (ইনসেটে) পলাশ মণ্ডল। — নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
তপন শেষ আপডেট: ২০ জুলাই ২০১৬ ০৩:৩১
Share: Save:

আজ, বুধবার ছুটিতে বাড়িতে আসার কথা ছিল বাড়ির ছোট ছেলে পলাশের। তার একদিন আগেই অবশ্য বাড়িতে চলে এলেন তিনি। কফিনবন্দি হয়ে। সোমবার বিহারের গয়াতে মাওবাদীদের সঙ্গে সংঘর্ষে সিআরপিএফের কোবরা বাহিনীর নিহত ১০ জওয়ানের একজন দক্ষিণ দিনাজপুরের তপন থানার সালাস গ্রামের পলাশ মণ্ডল(২৮)।

মঙ্গলবার বিকেলে হেলিকপ্টারে কফিনবন্দি পলাশের দেহ বালুরঘাট বিমানবন্দরে এসে পৌঁছনোর কথা ছিল। কিন্তু আবহাওয়া খারাপ থাকায় সময় পিছিয়ে যায়। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে গার্ড অব অনার দিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলাশাসক এবং অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সহ অন্য আধিকারিকেরা।

খবর ছড়াতেই এলাকা জুড়ে বাসিন্দাদের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে আসে। দুপুর থেকে পলাশদের বাড়িতে ভিড় করেন বাসিন্দারা। প্রতিবেশী স্বপন বিশ্বাস বলেন, ‘‘পলাশ ছিল অত্যন্ত বিনয়ী। ছুটিতে বাড়িতে এলেই পাড়ার ছেলেদের সঙ্গে ক্রিকেট খেলা নিয়ে মেতে থাকতো। হাসিখুশি ছেলেটি অকালে চলে যাবে আমরা ভাবতে পারছি না।’’

সোমবার রাতে মাওবাদী হামলায় জওয়ানদের মৃত্যু খবর টিভিতে শুনে বাড়ির সকলের উদ্বেগ বাড়লেও মা শেফালিদেবী কিছুতেই বিশ্বাস করেননি আদরের ছোট ছেলে নেই। মঙ্গলবার পলাশের বাড়িতে ফোন করে সংশ্লিষ্ট কমান্ড্যান্ট দু:সংবাদটি জানানোর পর কথা হারিয়েছেন শেফালিদেবী। হতবাক পলাশের বাবা বীরেন্দ্রনাথবাবুও। তপন-বালুরঘাট রাজ্য সড়কের পাশে মাটির ঘরের সঙ্গে নির্মীয়মান দালান তাঁদের। পলাশের দাদা তরুণবাবু জানালেন, রথের সময় পলাশের বাড়ি আসার কথা ছিল। কিন্তু আসতে পারেননি। তরুণবাবুর কথায়, ‘‘সোমবার ভাই ফোন করে বলেছিল বুধবার ছুটি নিয়ে বাড়িতে আসছে। ওর আসার অপেক্ষায় আমরা সময় গুনছিলাম। সব গোলমাল হয়ে গেল।’’

লেখাপড়ায় বরাবরই মেধাবি ছিলেন পলাশ। তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষা দেওয়ার আগেই ২০১০ সালের শেষের দিকে সিআরপিএফে চাকরি হয় যায় তাঁর। সামান্য কৃষি জমির আয়ের উপর ভরসা করেই দুই ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে বীরেন্দ্রনাথবাবুর টানাটানির সংসার চলে। বড় ভাই তরুণবাবু একটি বেসরকারি ফার্মে কাজ করেন। তাই ছোট ছেলের চাকরি পাওয়ায় সকলে আশ্বস্ত হয়েছিলেন। পলাশের পাঠানো টাকায় ধীরে ধীরে সংসারের হালও ফিরছিলো। একমাত্র বোন শ্যামলীর বিয়ে হয়েছে গত বছর। বাড়িতে দুই কামরার পাকা ঘরটির সম্প্রতি ছাদ ঢালাই হয়েছে। পলাশের চাকরির টাকা থেকেই তৈরি হচ্ছিল পাকা বাড়িটি।

তাই স্বপ্নভঙ্গের ধাক্কায় বাকরূদ্ধ গোটা পরিবার। এই খবর পৌঁছতে শোকের ছায়া নেমেছে তাঁর গ্রামেও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Cobra jawan dead body
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE