মনসা পুজো। তাই সাতসকালেই ভিড় উপছে পড়েছে মন্দির চত্বরে। আজান শুরু পর্যন্ত তাই সামাল দিচ্ছিলেন আব্দুস সাত্তার, কাউসার আলিরা। পরে রাজকুমার, কৃষ্ণদের উপর দায়িত্ব দিয়ে নিজেরা গেলেন লাগোয়া মসজিদে নমাজ পড়তে। নমাজ শেষে চলল বাড়ি বাড়ি পুজোর প্রসাদ বিলির পালা।
মালদহের চাঁচলে মহানন্দা পাড়ের বলরমপুর গ্রামে ৪০ ফুট দুরত্বে মন্দির ও মসজিদ। দুই সম্প্রদায়ের মানুষের অবস্থানে সেই দুরত্বটুকুও নেই। সোমবার সারা রাত ধরে হয়েছে মনসা পুজো। প্রায় ৩০০ বছরের ঐতিহ্য মেনে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষও দারুন উৎসাহে সামিল হয়েছেন তাতে। মঙ্গলবার থেকে শুরু হয়েছে পাঁচ দিনের মেলা। মেলা ঘিরে উৎসব মুখর গোটা গ্রাম। মন্দিরের পুরোহিত সুবল চক্রবর্তী ও মসজিদের ইমাম মহম্মদ বেলালুদ্দিন মেলায় প্রচার করছেন সম্প্রীতির বার্তা।
বিভিন্ন এলাকার মতো বলরামপুরেও নদী ভাঙনের সমস্যা রয়েছে। নদীর একেবারে পাড় ঘেঁষে থাকা মন্দির ও মসজিদ বাঁচাতে সম্প্রদায় ভুলে লড়াই করেছেন এলাকার মানুষ। রাজকুমার এবং সাত্তার হাতে হাত মিলিয়ে মাটি কেটেছেন। এখানকার যে কোনও উৎসবেও তাই লাগে সম্প্রীতির রং। মনসা পুজোয় যেমন কোমর বেঁধে নেমে পড়েন আব্দুস, কাউসাররা, তেমনই মহরমের মিছিলে, লাঠিখেলায় জিন্নাদের সঙ্গে দেখা যায় রাজকুমার, প্রবীর মণ্ডলদের। পিরবাবার কাছে সিন্নি উত্সর্গ করে প্রার্থনা জানান রাজেশরা। দেবী মনসার কাছে পাঁঠা, পায়রা উত্সর্গ করেন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ। প্রতিটি উত্সবের পরে ঘরে ঘরে সেই সিন্নি, প্রসাদ পৌঁছে দেওয়া হয়।
মনসা মেলাকে ঘিরে সব থেকে বড় মেলা বসে বলরামপুরে। মহরম হোক বা মনসা পুজো, আজও যৌথ কমিটি গড়ে উত্সব পালন করা হয়। এবারের পুজো ও মেলা কমিটির সম্পাদক রাজকুমার মণ্ডল ও প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ আলি জিন্না। তাঁদের সঙ্গে সুর মিলিয়েই এলাকার দুই বাসিন্দা হাকিমুদ্দিন মণ্ডল ও বিনোদ মণ্ডল বলেন, ‘‘বাপ-ঠাকুর্দার কাছেই এক সঙ্গে চলার পাঠ শিখেছি। এক সঙ্গে চলায় যে কী আনন্দ, তা বুঝে গিয়েছি বলেই আমরা পথ হারাই না।’’
পথ না হারিয়েই এ বার সম্প্রীতির সুরে বাউল সন্ধ্যা করছেন কোচবিহারের দিনহাটার সীমান্ত গ্রাম গীতালদহের নারায়ণগঞ্জের বাসিন্দারাও। দীপাবলি উপলক্ষে আগামী ৫ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জ বাজার লাগোয়া এলাকায় ওই অনুষ্ঠানের দিন চূড়ান্ত করা হয়েছে। এ ব্যাপারে সোম ও মঙ্গলবার দু’দফায় বৈঠক করেছেন উদ্যোক্তারা। তাঁরা জানিয়েছেন, সোমবার রাতে প্রথম বৈঠকে বাউল উৎসব আয়োজনের জন্য ২০ জনের কমিটি তৈরি করা হয়। তাতে এলাকার বাসিন্দা উভয় সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরাই রয়েছেন।
বাউল উৎসব আয়োজক কমিটির সদস্য সুদীপ রায় জানান, প্রত্যন্ত এই এলাকায় দুই সম্প্রদায়ের সহযোগিতায় কয়েক বছর থেকে একটি দুর্গাপুজো হচ্ছে। স্থানীয় একটি স্থায়ী মন্দিরে কালী পুজোও হয়। কিন্তু দীপাবলি উপলক্ষে আলাদা কোনও অনুষ্ঠান হয় না। বাসিন্দাদের উৎসাহেই এ বার বাউল উৎসব হচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দা মনসুর হবিবুল্লাহ বলেন, “বাউল সন্ধ্যার মধ্য দিয়ে উৎসবের মরসুমের একটা বৃত্ত সম্পূর্ণ হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy