Advertisement
২২ মে ২০২৪

ডেঙ্গির তথ্য নিয়ে নালিশ

শহর জুড়ে ডেঙ্গির সংক্রমণ চলছেই। শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতাল থেকে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ জ্বরে আক্রান্ত রোগীর ভর্তির সংখ্যা বেড়েই চলেছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ০৭ নভেম্বর ২০১৬ ০১:৪৯
Share: Save:

শহর জুড়ে ডেঙ্গির সংক্রমণ চলছেই। শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতাল থেকে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ জ্বরে আক্রান্ত রোগীর ভর্তির সংখ্যা বেড়েই চলেছে। শিলিগুড়ির মহাবীরস্থান, কালীবাড়ি রোডের বিভিন্ন বাড়িতে অন্তত ত্রিশ জন ডেঙ্গির উপসর্গ নিয়ে জ্বরে আক্রান্ত। ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছেন মেয়র অশোক ভট্টাচার্যের ভাই চন্দনবাবুও। এই পরিস্থিতিতেও শিলিগুড়ি হাসপাতাল থেকে দাবি করা হয়েছে, ওয়ার্ডে ডেঙ্গি আক্রান্ত কোনও রোগী ভর্তি নেই। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল তরফ থেকে দাবি করা হয়েছে, জ্বর নিয়ে ভর্তি রোগীদের সংখ্যা বেড়েছে, কিন্তু ডেঙ্গি আক্রান্ত কোনও রোগী নেই। যদিও, চিকিৎসকদের একাংশ দাবি করেছেন, ওয়ার্ডে ভর্তি রোগীদের ডেঙ্গি আক্রান্ত হিসেবেই চিকিৎসা চলছে। স্বাস্থ্য দফতরের দাবি, এখনও পর্যন্ত শিলিগুড়ি শহরে এখনও পর্যন্ত ১০৫ জনের রক্তে ডেঙ্গির জীবাণু মিলেছে। এতেই তথ্য গোপনের অভিযোগ উঠেছে দুই হাসপাতাল সহ স্বাস্থ্য দফতরের বিরুদ্ধে তথ্য গোপনের অভিযোগ উঠেছে।

জ্বর নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে সরকারি পরীক্ষার অপেক্ষা করলে প্রাণ থাকতে আদৌও ডেঙ্গি নির্ণয় হবে কি না তা নিয়েই সংশয়ই শিলিগুড়ি হাসপাতালে। হাসপাতালের পুরুষ-মহিলা দুই মেডিসিন ওয়ার্ডে মশারির নীচে ডেঙ্গি আক্রান্ত রোগীদের সকলেই বাইরের পরীক্ষাগার থেকে এনএসওয়ান পজিটিভ রিপোর্ট পেয়েছেন। কর্তৃপক্ষের দাবি, সরকারি পরীক্ষাতে কিছু ধরা পড়েনি। প্রশ্ন উঠেছে, দ্রুত রোগ নির্ণয়ের জন্য পরীক্ষা হাসপাতালে হচ্ছে কোথায়?

জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার পরে রোগীর শরীরে ডেঙ্গি থাবা বসিয়েছে কি না দেখতে র‌্যাপিড টেস্ট করাতে হয়। বছর দু’য়েক আগে শিলিগুড়ি হাসপাতালেই ডেঙ্গি নির্ণয়ে র‌্যাপিড টেস্টের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। স্বাস্থ্য দফতর র‌্যাপিডের কিট সরবরাহ করে না দাবি করে এবার হাসপাতালে সে ব্যবস্থা নেই। হাসপাতালে যে পরীক্ষা করা হচ্ছে তা হল অ্যালাইজা টেস্ট। যাতে ডেঙ্গি আক্রান্ত রোগীর প্রাথমিক পর্যায়ে পরীক্ষা হলে রোগ ধরা পড়ার সম্ভাবনা থাকে না। সরকারি অ্যালাইজা পরীক্ষার রিপোর্টও আসতে অন্তত ৬ দিন সময় লাগে। রিপোর্ট আসার আগেই ওষুধে জ্বর কমে গেলে রোগীকে তড়িঘড়ি ছুটি দিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এই প্রবণতাকে তথ্য গোপনের চেষ্টা বলে অভিযোগ করেছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলি। শিলিগুড়ি হাসপাতালে ডেঙ্গির উপসর্গ নিয়ে ভর্তি যে রোগীদের বাইরে থেকে র‌্যাপিড টেস্ট করানোর সামর্থ্য নেই তাঁদের রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। রবিবারও শিলিগুড়ি হাসপাতালের সুপার অমিতাভ মণ্ডল দাবি করেছেন, ‘‘হাসপাতালে কোনও ডেঙ্গি আক্রান্ত রোগী নেই। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।’’ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকার কথা বলা হলেও, ভিড়ে উপচে পড়া ওয়ার্ডের রোগীদের দাবি যথাসময়ে চিকিৎসকের পরমার্শ পাচ্ছেন না। পুরুষ-মহিলা দুই ওয়ার্ড মিলিয়ে রবিবার বিকেল পর্যন্ত ৮০ জন ভর্তি রয়েছেন। চিকিৎসকের সংখ্যা মাত্র ২ জন। আপদকালীন পরিস্থিতিতে কেন উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ থেকে বাড়তি চিকিৎসক আনা হচ্ছে না সে প্রশ্ন তুলেছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলি। জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকায় অতিরিক্ত ওয়ার্ডেরও ব্যবস্থা করা প্রয়োজন বলে দাবি। একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কর্তা সোমনাথ চট্টোপাধ্যায় অভিযোগ করে বলেন, ‘‘চিকিৎসার থেকেও রোগ ধামাচাপা দিতেই সকলেই ব্যস্ত বলে মনে হচ্ছে।’’ হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান তথা শিলিগুড়ির প্রাক্তন বিধায়ক রুদ্রনাথ ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, ‘‘সরকারি মাপকাঠি অনুযায়ী তথ্য দেওয়ার কথা। আমি নিজে হাসপাতালের পরিস্থিতি দেখতে যাব।’’ শিলিগুড়ির ঝঙ্কারমোড়ের বাসিন্দা হাজি হায়দার আলি, বালুরঘাটের চামেলি অধিকারী, রায়ঞ্জের নির্মল বৈরাগী, ফালাকাটার কৃষ্ণপদ বর্মনদের মতো অন্তত ২০ জন সন্দেহভাজন ডেঙ্গি রোগী উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে ভর্তি রয়েছেন। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে আলাদা ফিভার ওয়ার্ড খোলা হলেও মেডিসিন বিভাগেও জ্বরে অনেক রোগী রয়েছে। সন্দেহ ভাজন ডেঙ্গি রোগীরা জ্বর নিয়ে ভর্তি থাকলেও হাসপাতালের তরফে কোনও মশারি দেওয়া হয়নি। হাসপাতালের সুপার নির্মল বেরা বলেন, ‘‘জ্বরে আক্রান্ত রোগীরা রয়েছেন। ম্যাক এলাইজা পরীক্ষায় অনেকেরই ডেঙ্গির জীবাণু মেলেনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Dengue Info Complaint
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE