ভক্তিনগর থানার সামনে রাস্তা জুড়ে রাখা হয়েছে পুলিশের আটক করা যানবাহন। — বিশ্বরূপ বসাক
রক্ষার দায়িত্ব যাদের, তাঁরাই ভাঙছেন পথের আইন। রাস্তা জুড়ে দাঁড় করিয়ে রাখছেন ট্রাক। এমনই অভিযোগ উঠেছে শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেটের বিরুদ্ধে। অথচ বাইক-স্কুটার আরোহীদের হেলমেট পরা নিয়ে কড়াকড়ি শুরু করেছে শিলিগুড়ি পুলিশ। প্রতিদিন নাকা-তল্লাশি চালিয়ে দেদার জরিমানা-মামালাও দায়ের হচ্ছে। বেআইনি পার্কিংয়ের জেরে জরিমানাও করছে পুলিশ। কিন্তু, আইন ভাঙার জন্য পুলিশের জরিমানা করবে কে তা নিয়ে সরব হয়েছেন শিলিগুড়ির নাগরিকদের অনেকেই।
ঘটনাস্থলের একদিকে ভক্তিনগর থানা। অন্যদিকে কংক্রিটের বাঁধানো আইল্যান্ড। সেবক রোডের ওই মোড়ে ভক্তিনগর থানার সামনে যে ট্রাক-গাড়ি দাঁড় করানো রয়েছে তা সবই বাজেয়াপ্ত করা। রাস্তার একটি দিক ওই বাজেয়াপ্ত ট্রাক-নানা গাড়ির দখলে চলে গিয়েছে। ফলে, নিত্য যানজট হচ্ছে বলে অভিযোগ। নিত্যাযাত্রীদের অনেকের আশঙ্কা, দুর্ঘটনাও ঘটতে পারে। নানা সময়ে বিষয়টি ভক্তিনগর থানাকে জানানো হলেও কাজ হয়নি বলে অভিযোগ এলাকার বাসিন্দাদের অনেকেরই। শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার চেলিং সিমিক লেপচা বলেন, ‘‘দ্রত গাড়িগুলি সরানোর নির্দেশ দিয়েছে। বিকল্প জায়গার ব্যবস্থা করতে হবে।’’
শিলিগুড়ি থেকে সেবক হয়ে ডুয়ার্স অথবা কালিম্পং-সিকিম যাওয়ার প্রধান রাস্তার পাশেই ভক্তিনগর থানা। সম্প্রতি শালুগাড়ায় বেঙ্গল সাফারি পার্ক উদ্বোধনের পর থেকে এই রাস্তায় যানবাহনের সংখ্যা আরও বেড়ে গিয়েছে। রোহিণী রোড দিয়ে দার্জিলিঙে যাওয়ার রাস্তায় পর পর ধস নামায় সে রাস্তাতেও ভারী যানবাহন চলাচল বন্ধ। সে কারণে পণ্যবাহী গাড়ি চলাচলের সংখ্যাও দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে। এ হেন গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার এক দিক দখল করে দশ চাকার ট্রাক থেকে এসইউভি গাড়ি, এমনকী অটোও দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে রাস্তার একদিকে। বৃহস্পতিবার দুপুরেই জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দু’টি পাথর বোঝাই ট্রাককে আটক করেছে ভক্তিনগর থানা। ট্রাকদুটিকে রাখা হয়েছে সেবক রোডের মাঝবরাবর। যার জেরে দুপুর থেকেই শুরু হয়েছে যানজট।
রাস্তা দখল করে ট্রাক দাঁড়িয়ে থাকায় একদিকে পথ-আইন ভাঙার সঙ্গেই আদালতের বিধি-নিষেধ পরোয়া না করার অভিযোগও উঠেছে। আদালতের নির্দেশে অথবা মামলায় জড়িয়ে পড়ার কারণে বাজেয়াপ্ত করা গাড়ি খোলা জায়গায় রাখা যায় না। বিধি অনুযায়ী বাজেয়াপ্ত করা গাড়ি এমন জায়গায় রাখতে হবে যেখানে সাধারণের যাতায়াতে নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। অথচ ভক্তিনগর থানার সামনে দিনের পর দিন রাস্তাতেই দাঁড়িয়ে রয়েছে বাজেয়াপ্ত করা গাড়ি।
দিনের পর দিন থাকার কারণে কোনও গাড়ির চাকা মাটিতে মিশে গিয়েছে, কোনও গাড়ির নম্বর প্লেটের ওপরে ধুলোর আস্তরণ শুকিয়ে শক্ত হয়ে গিয়েছে। নথিপত্র সংক্রান্ত মামলা জড়িয়ে থাকা নাগাল্যান্ডের দশ চাকার ট্রাক থেকে অসমের নম্বরের এসইউভি গাড়ি। থানার তরফে দাবি করা হয়েছে জায়গা সঙ্কুলান না হওয়ার কারণেই রাস্তায় গাড়ি রাখতে বাধ্য হতে হয়েছে। থানার ভিতরে পাঁচিল ঘেরা চত্বরেও বাজেয়াপ্ত গাড়িতে ঠাসা। তবে পুলিশের যুক্তি মানতে নারাজ পুর কর্তৃপক্ষ ও পরিবহণ দফতর। পরিবহণ দফতরের এক অফিসার জানান, বাজেয়াপ্ত রাস্তার ধারে রাখাটা পুরোপুরি বেআইনি। এলাকার কাউন্সিলর তথা চেয়ারম্যান দিলীপ সিংহ বামেদের হাতে থাকা শিলিগুড়ি পুরসভার চেয়ারম্যান। দিলীপবাবু বলেন, ‘‘পুলিশ তো আইনরক্ষক এবং দায়িত্বশীল। কিন্তু ভক্তিনগর থানার সামনের দৃশ্য দেখে দু’টির কোনটাই মেলানো যায় না। পুলিশকে একাধিকবার রাস্তা থেকে গাড়ি সরাতে বলা হয়েছে। কিন্তু কাজ হয়নি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy