Advertisement
E-Paper

ক্লাস বন্ধ, শাক বেচছে পড়ুয়ারা

ঢেঁকি শাকের আঁটি নিয়ে বসা পাঁচজনের মধ্যে একজন ষষ্ঠ, একজন সপ্তম এবং একজন দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র।

অনির্বাণ রায়

শেষ আপডেট: ১২ মে ২০২১ ০৬:২৩
বেচাকেনা: শাক নিয়ে বসেছে সুজয়, আকাশরা। নিজস্ব চিত্র।

বেচাকেনা: শাক নিয়ে বসেছে সুজয়, আকাশরা। নিজস্ব চিত্র।

ফুটপাতে তৈরি কাঠের পাটাতনে কয়েক আঁটি ঢেঁকিশাক রেখে গোল হয়ে বসে জনাপাঁচেক ছেলে। পথচারী দেখলেই কেউ একজন চেঁচিয়ে উঠছে, “তিন আটি দশ টাকা।” সেই ডাক শুনে পাশে বসা বাকি ছেলের দলই হেসে গড়িয়ে পড়ছে। করলা নদীর পাড় থেকে ঢেঁকিশাক তুলে এনে আঁটি বেঁধে ছেলের দল এই প্রথম বিক্রি করতে বসেছে। তাই একজন দর হাঁকলে বাকিরা হাসছে। যে চেঁচাচ্ছে সে-ও হাসছে। নিতান্তই খেলাচ্ছলে শাক বিক্রি। ঢেঁকি শাকের আঁটি নিয়ে বসা পাঁচজনের মধ্যে একজন ষষ্ঠ, একজন সপ্তম এবং একজন দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র। বাকি দু’জন দাবি করল, তারা লকডাউনের পরে স্কুলে যাওয়া ছেড়ে দিয়েছে। শাক বিক্রি করছে কেন?

ছেলের দলের মধ্যে বড়, দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র দেবু দাস বলল, “স্কুল বন্ধ। মোবাইলে আর ক্লাস হয় না। দু-জনের তো বাড়িতে মোবাইলও নেই। বসে বসে সময় কাটে না। তাই শাক তুলে এনে বিক্রি করছি, সময় কাটছে।”

খোদ জলপাইগুড়ি শহরের পুর এলাকায় এমনই দৃশ্য দেখা গেল মঙ্গলবার দুপুরে। করলা সেতু পার হয়ে পরেশ মিত্র কলোনি, জলপাইগুড়ি পুরসভার ২৫ নম্বর ওয়ার্ড। সেখানেই ফুটপাতের ধারে পড়ুয়াদের শাক বিক্রি করতে দেখা গেল। পড়ুয়ারা সকলেই জলপাইগুড়ি শহরের স্কুলেই পড়ে। সোন্নাউল্লা হাইস্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র সুজয় ভুঁইয়া, সপ্তম শ্রেণির ছাত্র আকাশ সরকার। দ্বাদশ শ্রেণির দেবু দাস অরবিন্দ মাধ্যমিক স্কুলের ছাত্র। সুজয়ের বাবা শ্যামল ভুঁইয়া ভ্যানচালক। আকাশ জানাল, তার বাবা কালাচাঁদবাবু ‘বালির কাজ করে।’ গত বছর লকডাউন হওয়ার পরে মোবাইলে ক্লাস হয়েছিল। সুজয় বলে, “এখন আর মোবাইলে ক্লাস হয় না।” দিন এনে দিন গুজরান করা পরিবারের ছেলেদের টিউশনে যাওয়াও বন্ধ হয়ে গিয়েছে। দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র দেবুর কথায়, “লকডাউনের পরে আমাদের এখানে অনেকেরই টিউশনি বন্ধ।”

ছেলেদের শাক বিক্রি করার কাণ্ড দেখছিলেন পরেশ মিত্র কলোনিরই দু’-একজন বাসিন্দা। তাঁদেরই একজন, প্রবীর রায় বললেন, “কলোনিতে বেশিরভাগ গরিব পরিবার। রোজগার বন্ধ, বাড়িতে শিক্ষক থাকলেও অনেকে ছাড়িয়ে দিয়েছে। আমার ছেলে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। ওরও পড়া বন্ধ।” পাশেই দাঁড়িয়ে থাকা শিউলি রায়ের ছেলে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে। তাঁর কথায়, “এক বছর ধরে পড়াশোনা নেই। মোবাইলের খরচও অনেকে।”

অরবিন্দ মাধ্যমিক স্কুলের প্রধাণ শিক্ষক ক্ষৌণীশ গুহ বলেন, “অনলাইন ক্লাসের প্রধান দু’টি বাধা হল উপযুক্ত মোবাইল এবং প্রতিদিন ক্লাসের জন্য মোবাইলে যে পরিমাণ খরচ হয় তা চালানোর ক্ষমতা সকলের নেই। আমরা ফোন করে সব ছাত্রদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার চেষ্টা করি।” সোন্নাউল্লা স্কুলের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সুব্রত রায়ের কথায়, “আগামী ১৫ মে থেকে আবার অনলাইন ক্লাস শুরু করব। কিন্তু যাঁদের স্মার্ট ফোন নেই তাদের ক্লাসে আনা যাবে কী?”

শাক বিক্রির টাকা দিয়ে কী হবে? সপ্তম শ্রেণির আকাশ বলল, “নিজেরা ভাগ করে নেব।”

COVID-19 coronavirus
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy