Advertisement
০৫ মে ২০২৪
Coronavirus

উদ্বেগে ‘বন্দি’ অমল, চোখ শুধু জানলায়

১৬ দিন ধরে চার দেওয়ালকে সঙ্গী করে নেওয়া দেশের মানুষের এখন অমলের মতোই দশা।

প্রাপ্তি: লকডাউনের জেরে প্রায় স্তব্ধ শহর, কমেছে দূষণ। বন্ধ রোজকার ইঁদুর-দৌড়। বিকেলে শরীরচর্চায় ব্যস্ত এক বাসিন্দা। ছবি: সন্দীপ পাল

প্রাপ্তি: লকডাউনের জেরে প্রায় স্তব্ধ শহর, কমেছে দূষণ। বন্ধ রোজকার ইঁদুর-দৌড়। বিকেলে শরীরচর্চায় ব্যস্ত এক বাসিন্দা। ছবি: সন্দীপ পাল

অনির্বাণ রায়
শেষ আপডেট: ১০ এপ্রিল ২০২০ ০২:৪৭
Share: Save:

ভাঙা ডালের খুদগুলি দুইহাতে তুলে নিয়ে লেজের ওপর ভর দিয়ে বসে কাঠবিড়ালি কুটুস কুটুস করে খাচ্ছে। ঘরবন্দি অমলের চোখে পড়েছিল দৃশ্যটি। সে পণ্ডিত হতে চায়নি। চেয়েছিল সামনের পাহাড়টা পেরিয়ে যেতে।

১৬ দিন ধরে চার দেওয়ালকে সঙ্গী করে নেওয়া দেশের মানুষের এখন অমলের মতোই দশা। উত্তরবঙ্গের বাসিন্দাদের অবস্থা আলাদা কিছু নয়। তাদের চোখের সামনে দিগন্ত ঘেরা পাহাড়টা, পায়ের তলায় চষে ফেলা জঙ্গলটা বা গঙ্গা থেকে মহানন্দা, তিস্তা থেকে তোর্সা, কোনও কিছুর কাছেই যাওয়ার উপায় নেই। না আছে জয়ন্তী, সুকনা বা মহানন্দা অভয়ারণ্যে ঘুরে বেড়ানোর উপায়, না আছে নদীর জলে মাছ ধরতে যাওয়ার সুযোগ। লকডাউনে ঘরবন্দি অমলের মতো জানলায় চোখ রাখা ছাড়া উপায় কি!

করোনাভাইরাসের দাপটে একদিকে যেমন ঘরে আটকে পড়েছে মানুষ, নীল আকাশ রেখেছে জানলায়, অন্যদিকে তেমনই বন্ধ যাবতীয় অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড। যার ফলে দিনমজুর, শ্রমিক, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, যাঁদের দিন এনে দিন খেয়ে জীবন কাটে, তাঁরা পড়েছেন বিপদে। জীবন থেকে হারিয়ে যাচ্ছে দুবেলার খাবার। এক মুঠো ভাত বা এক টুকরো রুটি। অনেককে তো মাইলের পর মাইল পার হয়ে ভিন্ রাজ্য থেকে ফিরতে হয়েছে নিজের ঘরে। অনেকে আবার আটকে পড়েছেন কর্মক্ষেত্রেই।

যাঁরা বাড়িতে আছেন কাজকর্ম ছেড়ে, তাঁরাও অনেকে মানসিক অবসাদের শিকার হচ্ছেন। যাঁদের আত্মীয় পরিজনেরা বাইরে রয়ে গেলেন, তাঁরা উৎকণ্ঠায় দিন কাটাচ্ছেন। বহু প্রবীণ নিঃসঙ্গতায় ভুগছেন। জলপাইগুড়ি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে করোনা সংক্রমিত এক রোগীর দেখভাল করে আপাতত বাড়ি থেকে আলাদা থাকছেন নার্সিং কর্মী সুপ্রিয়া (নাম পরিবর্তিত)। তিন বছরের মেয়ের সঙ্গে সপ্তাহখানেক দেখা নেই। ভিডিয়ো কলে মেয়ের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি বললেন, “আমাকে না পেয়ে রোজ মেয়েটা কাঁদে। আমার বুক ফেটে যায়।”

‘ডাকঘর’ নাটকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছোট্ট অমলের মুখে লিখেছিলেন, ‘‘আমার ঠিক বোধ হয়, পৃথিবীটা কথা কইতে পারে না, তাই অমনি করে নীল আকাশে হাত তুলে ডাকছে।”

লকডাউনের দ্বিতীয় সপ্তাহের পর আকাশের নীল রং দেখে ঘরবন্দি অনেকেই তাজ্জব! কেউ দাবি করছেন এত ঘন নীল আকাশ বহু দিন দেখেননি। সদ্য পার হয়েছে চৈতি পূর্ণিমা। কেউ বলছেন, “এত চকচকে চাঁদ আগে দেখা যায়নি।” কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতরের সিকিমের আধিকারিক গোপীনাথ রাহা বললেন, “বাতাসে দূষণ না থাকায় নীল আকাশ থেকে চাঁদ, সবই চকচকে দেখাচ্ছে।”

জঙ্গলের ছায়া পড়া লাটাগুড়ির জাতীয় সড়কে দিনে দুপুরে হরিণ, সম্বর, ময়ূরও দেখা যাচ্ছে। ডুয়ার্সের জঙ্গল চিড়ে রেলপথ গিয়েছে। গত কয়েক বছরে অন্তত পঞ্চাশটি হাতির মৃত্যু হয়েছে এই রেলপথে ট্রেনের ধাক্কায়। গত মঙ্গলবার চাঁদনি রাতে সেই লাইনের উপরেই নিশ্চিন্তে এক মাদি হাতিকে লাইনের উপরে বসে থাকতে দেখছেন বনকর্মীরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Health Coronavirus Lockdown
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE