মূর্তিমান: ধরা পড়া কুমিরটি। ফাইল চিত্র
রাত ন’টার মধ্যেই রাতের খাবার খেয়ে তাঁরা গঙ্গায় ভাসিয়ে দিতেন নৌকো। তার পরে রাতভর গঙ্গাবক্ষে জাল ফেলে রাশি রাশি মাছ ধরে ভোরে ঘাটে এসে সেই মাছ বিক্রি করতেন পাইকারদের কাছে। কালিয়াচক ৩ ব্লকের পারলালপুর বা পারদেওনাপুর গ্রামের মহাদেব চৌধুরী, গণেশ রায়, শ্রীবাস চৌধুরীদের মতো প্রায় তিনশো জেলের রোজনামচা ছিল এটাই। কিন্তু শনিবার ভোররাতে গঙ্গায় মাছ ধরার সময় মহাদেব চৌধুরীর জালে বিশালাকার কুমির ধরা পড়ায় ও গঙ্গায় আরও কুমির চাক্ষুস দেখায় ওই তিনশো জেলেরই রুজিরুটির ভরসা বদলে গিয়েছে আতঙ্কে।
কুমিরের ভয় এমনই জাঁকিয়ে বসেছে যে রাতে আর কেউই ঝুঁকি নিয়ে মাছ ধরতে গঙ্গায় নামছেন না। ভোর হলে তবেই নৌকা নিয়ে গঙ্গায় মাছ ধরতে নামছেন, তাও আবার দল বেঁধে। কিন্তু সকাল থেকে দিনভর গঙ্গায় চক্কর কেটেও সে ভাবে মাছ না মেলায় ওই জেলেদের রুজিতে টান পড়েছে। পরিবার-পরিজন নিয়ে বিপাকে পড়ে গিয়েছেন তাঁরা।
শুধু তাই নয়। কুমিরের ভয়ে গঙ্গার পারলালপুর-ধুলিয়ানে খেয়া পারাপারে যাত্রী সংখ্যা এক লহমায় অর্ধেকেরও বেশি কমে গিয়েছে। খুব সমস্যায় না পড়়লে পারলালপুর, পারদেওনাপুর বা শোভাপুরের কেউ নদী পেরিয়ে ধুলিয়ানে যাচ্ছেন না। মাঝিরাও বিপাকে। মালদহ জেলা বনাধিকারিক কৌশিক সরকার অবশ্য জানিয়েছেন, ওই এলাকার গঙ্গায় নতুন করে আর কুমির নজরে পড়েনি।
এ বছরের শুরুতে মালদহেরই কালিয়াচক ২ ব্লকের শুভানিটোলা গঙ্গার চরে একটি কুমির দেখা গিয়েছিল। তার কয়েক মাস পরে শনিবার ভোররাতে ফের কুমিরের দেখা মিলল গঙ্গার ফরাক্কা ব্যারাজের ডাউনস্ট্রিমে কালিয়াচক ৩ ব্লকের পারলালপুর ঘাট সংলগ্ন নদীতে। বনদফতরের কর্মীরা কুমিরটিকে উদ্ধার করে ছেড়ে দেয় ফরাক্কা ব্যারাজের উত্তরে, গঙ্গারই উজানে।
স্থানীয় সূত্রে খবর, পারলালপুর, পারদেওনাপুর এলাকার অন্তত তিনশো জেলে প্রায় আড়াইশো নৌকো করে প্রতি রাতে মাছ ধরতে গঙ্গায় নামেন। কিন্তু রাতে আর কেউই মাছ ধরতে গঙ্গায় নামছেন না। যাঁর জালে কুমির উঠেছিল সেই মহাদেব চৌধুরী বলছেন, “সে দিনের কথা ভুলতে পারি না। ২০ বছর ধরে গঙ্গায় মাছ ধরছি কিন্তু এমন কুমিরের পাল্লায় কোনও দিন পড়িনি। আগে জীবন পরে অন্য কিছু। তাই রাতে আর ঝুঁকি নিয়ে মাছ ধরতে নামছি না।’’ তাঁর আক্ষেপ, দিনে দল বেঁধে মাছ ধরতে নামলেও মাছ উঠছে না। দিনভর নৌকা নিয়ে ঘুরে জাল ফেলে ২০০ টাকারও মাছ উঠছে না। সেখানে রাতে মাছ মারলে প্রতিদিন অন্তত দেড় থেকে দুহাজার টাকার মাছ বিক্রি করা যেত। একই বক্তব্য আদিত্য বিশ্বাস, শচীন মণ্ডল, গণেশ রায়দেরও। তাঁরা বলেন, ‘‘প্রাণভয়েই রাতে মাছ ধরতে যেতে পারছি না।’’
এ দিকে কুমিরের আতঙ্ক প্রভাব ফেলেছে পারলালপুর-ধুলিয়ান খেয়া পারাপারেরও। অন্তত ৫০টি নৌকো সেখানে চলে এবং প্রতিদিন অন্তত দু’হাজার মানুষ গঙ্গা পারাপার করেন। কিন্তু এখন অর্ধেকও নেই। মাঝি আদেশ চৌধুরী, ইউসুফ শেখরা বলেন, ‘‘কুমিরের আতঙ্ক আমাদেরও রয়েছে। তবে যাত্রীরা আতঙ্কে ভুগছেন বেশি। শনিবারের পর থেকে দিনে পাঁচশো যাত্রী টেনেটুনে পার হচ্ছেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy