Advertisement
১১ জুন ২০২৪

নোটের গেরোয় থমকে তামাক চাষ

চাষ করতে কারও ভরসা মহাজন। কারও ভরসা ব্যাঙ্ক। কিন্তু টাকা নেই কোথাও। দিনভর ব্যাঙ্কের লাইনে দাঁড়িয়ে কোনওদিন খালি হাতে ফিরতে হচ্ছে। কোনওদিন মিলছে মাত্র দু’হাজার টাকা। এই অবস্থায় চরম সমস্যায় পড়েছেন কোচবিহারের তামাক চাষিরা।

কোচবিহারের তামাক খেত। — নিজস্ব চিত্র

কোচবিহারের তামাক খেত। — নিজস্ব চিত্র

নমিতেশ ঘোষ
কোচবিহার শেষ আপডেট: ০১ ডিসেম্বর ২০১৬ ০১:৫৮
Share: Save:

চাষ করতে কারও ভরসা মহাজন। কারও ভরসা ব্যাঙ্ক। কিন্তু টাকা নেই কোথাও। দিনভর ব্যাঙ্কের লাইনে দাঁড়িয়ে কোনওদিন খালি হাতে ফিরতে হচ্ছে। কোনওদিন মিলছে মাত্র দু’হাজার টাকা। এই অবস্থায় চরম সমস্যায় পড়েছেন কোচবিহারের তামাক চাষিরা।

চাষিরা জানাচ্ছন, সময় ক্রমশ পেরিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু টাকার অভাবে চাষের কাজে নামতে পারছেন না তাঁরা। আর দিন কুড়ি পেরোলেই আর তামাক চাষ করা সম্ভব হবে না বলে জানাচ্ছেন তাঁরা। দিনহাটার গীতালদহের তামাক চাষি আজিজুল হক বলেন, ‘‘ভোর রাতে ঘুম থেকে উঠে চাষের কাজে যাওয়ার বদলে দাঁড়াতে হচ্ছে এটিএমের লাইনে।’’ চাষের জন্য ব্যাঙ্কে টাকা জমিয়ে রেখেছিলেন তিনি। কিন্তু প্রতিদিন ব্যাঙ্কে গেলেও সবসময় টাকা মিলছে না বলে অভিযোগ করেছেন তিনি। যা পাওয়া যাচ্ছে তা দিয়ে চাষের কাজ সম্ভব না বলে জানান তিনি। আজিজুল হক জানান, প্রতি বছর পনেরো বিঘার বেশি জমিতে তামাক চাষ করেন তিনি। সার, তামাক গাছ রোপণ, জমির পরিচর্যা সবমিলিয়ে প্রায় এক লক্ষ টাকা খরচ হয়। গত বছর এই সময়েই আট বিঘা জমিতে তামাক চাষ শুরু করেছিলেন তিনি। এবারে একবিঘা জমিতেও চাষ শুরু করতে পারেননি আজিজুল। মহাজনের কাছে তামাক বিক্রি করে প্রায় ৭০ হাজার টাকা পাওনা রয়েছে তাঁর। কিন্তু নোট বাতিলের গেরোয় সেই টাকাও পাননি তিনি।

সিতাইয়ের আদাবাড়ির বাসিন্দা বিমল সাহা জানিয়েছেন, তিনি তিন বিঘা জমিতে তামাক চাষ করেন। ছোট চাষি হওয়ায় মহাজনের কাছ থেকে ঋণ নিয়েই চাষাবাদ করেন তিনি। এবারে মহাজন ঋণ দেবেন না বলে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “আমার ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট নেই। হাতে টাকাও নেই। মহাজনের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে চাষ করে যা লাভ হয় তা দিয়ে সংসার চালাই।’’ এবারে চাষ করতে না পারলে পথে বসতে হবে বলে আশঙ্কা জানিয়েছেন তিনি।

দিনহাটা তামাক গবেষণাগার সূত্রের খবর, কোচবিহারে তামাক অর্থকরী ফসল। জেলায় প্রায় ২২ হাজার হেক্টর জমিতে তামাক চাষ হয়। এক লক্ষ চাষি এর উপরে নির্ভরশীল। বিশেষ করে দিনহাটা, সিতাই, শীতলখুচি, মাথাভাঙ্গা ও মেখলিগঞ্জ এলাকায় তামাক চাষ হয়। তামাকের উপরে বহু ব্যবসায়ীও নির্ভরশীল। দিনহাটা মহকুমা ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক রানা গোস্বামী বলেন, “তামাক চাষিরা ভয়াবহ বিপদের মধ্যে পড়েছেন। দ্রুত এই অবস্থার সমাধান না হলে ফল খারাপ হবে।” কৃষি দফতরের এক আধিকারিকও একই আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

demonetisation Cultivation of tobacco
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE