Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

রয়্যালের সম্পত্তি বেচে টাকা ফেরতের দাবি

কেউ জমি বেঁচে টাকা পেয়েছিলেন। কেউ আবার দিনমজুরি করে টাকা জমিয়েছিলেন। একটু বেশি লাভের আশায় রয়্যাল ইন্টারন্যাশনালে টাকা রেখেছিলেন তাঁরা। ভেবেছিলেন, ওই টাকা হাতে পেলে সুখের মুখ দেখবেন তাঁরা। তা হয়ে ওঠেনি নরেশ বর্মন, আরতি দত্ত, রাখাল দাসদের। বিক্ষোভ, আন্দোলন করে হতাশ হয়ে পড়েছেন তাঁরা। শুক্রবার সিবিআইয়ের দল যখন এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় হানা দিচ্ছে, তখন কিছুটা হলেও খুশি তাঁরা।

সিবিআইয়ের তল্লাশি।

সিবিআইয়ের তল্লাশি।

নমিতেশ ঘোষ
কোচবিহার শেষ আপডেট: ১১ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:১৬
Share: Save:

কেউ জমি বেঁচে টাকা পেয়েছিলেন। কেউ আবার দিনমজুরি করে টাকা জমিয়েছিলেন। একটু বেশি লাভের আশায় রয়্যাল ইন্টারন্যাশনালে টাকা রেখেছিলেন তাঁরা। ভেবেছিলেন, ওই টাকা হাতে পেলে সুখের মুখ দেখবেন তাঁরা। তা হয়ে ওঠেনি নরেশ বর্মন, আরতি দত্ত, রাখাল দাসদের। বিক্ষোভ, আন্দোলন করে হতাশ হয়ে পড়েছেন তাঁরা। শুক্রবার সিবিআইয়ের দল যখন এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় হানা দিচ্ছে, তখন কিছুটা হলেও খুশি তাঁরা। সকলের অবশ্য দাবি, অভিযুক্তদের শাস্তির সঙ্গে তাঁদের টাকা ফিরিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। তাঁরা বলেন, “রয়্যালের অনেক সম্পত্তি রয়েছে। কয়েকজন ওই সংস্থার টাকা নিজের নামে জমিয়েছেন। সেই সব খুঁজে বের করা হোক। সেই টাকা থেকে আমাদের অন্তত নগদ টাকা ফিরিয়ে দেওয়া হোক।”

কোচবিহারের ধলুয়াবাড়ি এলাকার বাসিন্দা নরেশবাবু। পাটি তৈরির কাজ করে সংসার চালান। তিনি প্রথমে রয়্যালের আমানতকারী পরে এজেন্টের কাজও করেন। নরেশবাবু জানান, পাটির কাজ করে তিন লক্ষ টাকা জমিয়েছিলেন তিনি। ওই টাকা রয়্যালে রেখেছিলেন। পরে কমিশনের আশায় এজেন্টের কাজে ঢুকে প্রায় ৫০ জন মানুষের কাছ থেকে নেওয়া টাকাও রাখেন তিনি। তিনি বলেন, “দেড় বছরে টাকা দ্বিগুণ হবে এই আশায় টাকা রেখেছিলাম। কমিশনের আশায় অনেকের টাকা সেখানে রেখেছি। এখন সর্বস্ব গিয়েছে। অনেকে টাকা চেয়ে হুমকি দেয়। এদিকে আমি পাটি তৈরি করে সংসার চালাচ্ছি। কী করব ভেবে পাচ্ছি না।”

শুধু তিনি নন। আরতি দত্ত বৃদ্ধা মহিলা। নিজের সারা জীবনের জমানো দেড় লক্ষ টাকা রয়্যালে রেখেছেন। তিনি বলেন, “ভেবেছিলাম বেশি টাকা পেলে ঘরটা একটু ঠিক করব। যে কয়দিন বাঁচব একটু ভাল খাওয়াদাওয়া করব। তা আর হল না। ওই টাকা ফিরিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা হলে ভাল হয়।”

তাঁরা জানান, দেড় বছরের নামে ১০ হাজার টাকা জমা রাখলে প্রতি মাসে ৯০০ টাকা করে ফেরত দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়। দেড় বছর পূর্ণ হলে ওই আসল টাকা ফেরত দেওয়ার আশ্বাস দেয় সংস্থাটি। সেই লোভে পড়ে কোচবিহার জেলা তো বটেই বাইরের জেলা থেকেও প্রচুর যুবক রয়্যালের এজেন্ট হন। তাঁদের প্রায় ৩৬ হাজার এজেন্ট ছিল। আমানতকারী এক লক্ষের উপরে। বাজার থেকে ৫০০ কোটি টাকার বেশি ওই সংস্থা তুলেছে বলে অভিযোগ।

আমানতকারীদের ওই দাবির সঙ্গে একমত ডান-বাম সকলেই। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রশাসনের কর্তারাও আমানতকারীদের ওই দাবি অনুযায়ী ব্যবস্থা করা উচিত বলে মনে করেন। বিজেপির কোচবিহার জেলার সাধারণ সম্পাদক নিখিল রঞ্জন দে বলেন, “অনেক গরিব মানুষ স্বচ্ছল হওয়ার আশায় ওই সংস্থায় টাকা রেখেছিলেন। তাঁরা অনেকেই আজ সর্বস্ব হারিয়েছেন। টাকা ফেরতের আশায় এখনও ঘুরে বেড়াচ্ছেন। তাঁদের কথা ভাবা উচিত। তাঁদের টাকা ফেরতের ব্যবস্থা করা উচিত।”

সিপিএমের কোচবিহার জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য মহানন্দা সাহা বলেন, “সাধারণ মানুষ সর্বস্বান্ত হয়েছে। মানুষের টাকা ফেরতের ব্যবস্থা করতে হবে।” তৃণমূলের কোচবিহার জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, “রাজ্য সরকার প্রথম থেকে সাধারণ মানুষের পাশে রয়েছে। সিবিআই তদন্ত শুরু হয়েছে। আমরাও চাই সাধারণ মানুষের টাকা দেওয়া হোক।”

প্রশাসন সূত্রের খবর, কোচবিহার শহর তো বটেই ঘুঘুমারি, চান্দামারি সহ একাধিক জায়গায় জমি রয়েছে রয়্যালের নামে। চান্দামারিতে ১০০ বিঘা জমি রয়েছে। এ ছাড়াও নামে-বেনামে বহু সম্পত্তি রয়েছে রয়্যালের। এর মধ্যে বেশ কিছু জমি বেদখল হয়েছে বলেও অভিযোগ। প্রশাসনিক এক কর্তা জানান, সিবিআই ঘটনায় অভিযুক্তদের শাস্তি দেওয়ার ব্যবস্থা করতে পারে। কিন্তু টাকা ফেরতের ব্যবস্থা করতে হবে সরকারকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE