Advertisement
১৭ মে ২০২৪

এখানে দেবীর ভোগ মাংস-ভাত

নবমীর রাতে দেবীকে প্রসাদ দেওয়া হয় পাঁঠার মাংসের ঝোল দিয়ে ভাত। সঙ্গে ন’রকম ব্যঞ্জন। কালিন্দ্রীর করাল গ্রাস থেকে বাঁচতে এ ভাবেই পাঁঠার মাংসের ঝোল-ভাত দিয়ে দেবী দুর্গতিনাশিনীর আরাধনা শুরু হয়েছিল।

প্রতিমা তৈরি হচ্ছে রতুয়ার কালিন্দ্রী নদী পারের আড়াইডাঙ্গায় কুমারদের পারিবারিক পুজোয়। — নিজস্ব চিত্র

প্রতিমা তৈরি হচ্ছে রতুয়ার কালিন্দ্রী নদী পারের আড়াইডাঙ্গায় কুমারদের পারিবারিক পুজোয়। — নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
চাঁচল শেষ আপডেট: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০২:৫২
Share: Save:

নবমীর রাতে দেবীকে প্রসাদ দেওয়া হয় পাঁঠার মাংসের ঝোল দিয়ে ভাত। সঙ্গে ন’রকম ব্যঞ্জন। কালিন্দ্রীর করাল গ্রাস থেকে বাঁচতে এ ভাবেই পাঁঠার মাংসের ঝোল-ভাত দিয়ে দেবী দুর্গতিনাশিনীর আরাধনা শুরু হয়েছিল। সাড়ে তিনশো বছর বাদেও সেই নিয়ম মেনে চলা হয় মালদহের রতুয়ার কালিন্দ্রী নদী পারের আড়াইডাঙ্গায় কুমারদের পারিবারিক পুজোয়।

কুমার পরিবার পুজোর উদ্যোক্তা হলেও ওই পুজোকে ঘিরে মেতে ওঠেন এলাকার সবাই। দশমীতে এলাকার অন্যতম বড় মেলা বসে কালিন্দ্রী নদীর তীরে। নবমীর প্রসাদ পেতে সারারাত ধরে ভিড় জমান এলাকার বাসিন্দারা। পারিবারিক হলেও কুমারদের ওই পুজো এখন তাই সর্বজনীনতার ছোঁয়ায় সমৃদ্ধ। এলাকার বাসিন্দারাও ওই পুজোকে নিজেদের পুজো বলেই মনে করেন।

এক সময় বিহারের মিথিলা থেকে এসে কালিন্দ্রীর ধারে বসবাস শুরু করেছিলেন মৈথিলী ব্রাহ্মণেরা। কিন্তু প্রতি বছর নদীর করাল গ্রাসে ঘরদোর, জমি তলিয়ে যেত। নদীর হাত থেকে বাঁচতে অনেকেই সেখান থেকে পালিয়ে যান। দুর্গতির হাত থেকে বাঁচতে তখন দুর্গতিনাশিনীর পুজো শুরু করেন কুমার পরিবারের পূর্বপুরুষ চণ্ডীদাস কুমার। তারপর থেকেই অশান্ত কালিন্দ্রী নদী শান্ত হয়ে যায় বলে বিশ্বাস এলাকাবাসীর। ফলে তাই কুমারদের সঙ্গেই এলাকার মানুষদের কাছেও দেবী দুর্গতিনাশিনী হিসেবেই পরিচিত। এখন সেই নদী সরে গিয়েছে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে।

কুমার পরিবার সূত্রেই জানা গিয়েছে, পুজো শুরু হওয়ার পর থেকে আজও নিষ্ঠাভরে পুরনো রীতি মেনেই পুজো করা হয়। এখন পুজো হয় স্থায়ী মন্দিরে। রীতি মেনে দেবী প্রতিমা তৈরি করেন পরিবারেরই কোনও না কোনও শিল্পী। এ বার প্রতিমা গড়ছেন কমল কুমার। রীতি মেনেই একচালায় গড়া হয় বাসন্তী রঙের দেবীপ্রতিমা। নবমীর রাতে প্রসাদ দেওয়া হয় পাঁঠার মাংসের ঝোল আর ভাত। দুর্গতিনাশিনীর প্রসাদ পাওয়ার জন্য মণ্ডপে সারারাত অপেক্ষা করেন বাসিন্দারা। শাক্তমতের ওই পুজোয় কয়েকশো পাঁঠাবলি দেওয়ার রীতি আজও রয়েছে। কুমার পরিবার ছাড়াও স্থানীয় বাসিন্দারাও দুর্গতির হাত থেকে রক্ষা পেতে পাঁঠা বলি দিয়ে থাকেন।

রীতি মেনে দশমীর সকাল থেকেই মেলা বসে কালিন্দ্রীর ধারে। প্রায় গোটা এলাকার মানুষ হাজির হন মেলায়। দশমীর সন্ধ্যায় দেবী বিসর্জন দেওয়ার পুরনো রীতি আজও মেনে চলা হয়। তা সে যে বারই হোক না কেন। বিসর্জনের পর বাসিন্দারা ফের মণ্ডপে ফিরে এসে একে অন্যকে দশমীর শুভেচ্ছা জানিয়ে তবেই বাড়ি ফেরেন।

কুমার পরিবারের প্রবীণ তারাপদ কুমার বলেন, ‘‘এলাকার বাসিন্দারা এই পুজোকে নিজেদের পুজো বলেই মনে করেন। পারিবারিক হয়েও তাই এই পুজো এখন সর্বজনীন হয়ে উঠেছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Different method durgapuja
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE