Advertisement
০৬ অক্টোবর ২০২৪
Ajoy Edwards

‘অসন্তোষে’ই সমস্যা দলে

পাহাড়ের রাজনীতিতে আলোচনাটা বেশ ভাল রকম শুরু হয়েছিল। জিএনএলএফ থেকে বেরিয়ে আসার পরে, গত এক বছরে যেন ‘স্বপ্নের উড়ানে’ বসেছিলেন অজয় এডওয়ার্ড।

দিকবদল: কার্শিয়াংয়ে প্রজাতান্ত্রিক মোর্চায় যোগদানের অনুষ্ঠানে হামরো পার্টির পাঁচ কাউন্সিলর।

দিকবদল: কার্শিয়াংয়ে প্রজাতান্ত্রিক মোর্চায় যোগদানের অনুষ্ঠানে হামরো পার্টির পাঁচ কাউন্সিলর। তাঁদের সঙ্গে রয়েছেন জিটিএ-প্রধান অনীত থাপাও। বৃহস্পতিবার। নিজস্ব চিত্র।

কৌশিক চৌধুরী
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ২৫ নভেম্বর ২০২২ ০৮:০২
Share: Save:

দলের নামে ‘হামরো’ শব্দটি (আমাদের) থাকলেও, কার্যত তা হয়ে দাঁড়িয়েছিল ‘ব্যক্তিবিশেষের’ পার্টি। অজয় এডওয়ার্ডের দল। হামরো পার্টি সূত্রের দাবি, তা থেকেই আস্তে-আস্তে দলের অন্য সদস্যদের একাংশ ক্ষুব্ধ হতে শুরু করেন। যার প্রতিফলন ঘটল বৃহস্পতিবার এ পর্যন্ত দলের সব চেয়ে বড় ভাঙনে।

পাহাড়ের রাজনীতিতে আলোচনাটা বেশ ভাল রকম শুরু হয়েছিল। জিএনএলএফ থেকে বেরিয়ে আসার পরে, গত এক বছরে যেন ‘স্বপ্নের উড়ানে’ বসেছিলেন অজয় এডওয়ার্ড। নতুন দল হামরো পার্টি গড়ার পর মাত্র তিন মাসের মাথায় দার্জিলিং পুরসভা দখল করেন। জিটিএ ভোটেও প্রতিপক্ষকে জোর টক্কর দিয়ে প্রধান বিরোধী দল হয় তাঁর দল। কিন্তু পুজোর পর থেকেই দলের অভ্যন্তরে যেন কোথায় যেন ‘তাল কেটেছে’। ধীরে ধীরে তাঁরই বিশ্বস্তেরা ছাড়ছেন দল৷ প্রথমে প্রোমোসকর ব্লোন-সহ দু’জন জিটিএ সদস্য দল ছেড়েছেন। এ দিন বিষ্ণু মাল্লা-সহ পুরসভার পাঁচ জন কাউন্সিলর একই পথে হাঁটলেন।

দলত্যাগীদের অভিযোগ, অজয় এডওয়ার্ড নিজে পুরসভায় হেরেছেন। জিটিএ সদস্য হলেও, ক্ষমতায় বসতে পারেননি। শুধু সভাপতি হয়ে সেই জায়গা থেকে দল, পুরসভা একক সিদ্ধান্তে চালাচ্ছেন। তাতে বাড়ছে দলের বিপদ। দলের অন্দরের খবর, এ দিন বিকেলেই দলের প্রথম সারির কয়েকজ নকে নিয়ে সঙ্কট পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেছেন অজয়। বাকি জিটিএ সদস্য, পুরসভার বাকি কাউন্সিলরদের এক যোগে সভা ডাকার বিষয়েও আলোচনা হয়। দলের অনেকেই মনে করছেন, রাজনীতির কাছে আবেগ হেরে যাচ্ছে। ‘নতুন দার্জিলিং’ গড়ার ডাক দিয়ে হামরো পার্টি পুরসভা জিতলেও কাজ তেমন কিছু হচ্ছিল না বলে অভিযোগ। নাগরিক পরিষেবা নিয়েও প্রশ্নও মাঝেমধ্যে সামনে আসছিল।

জিটিএ চিফ তথা প্রজাতান্ত্রিক মোর্চার সভাপতি অনীত থাপা বলেন, ‘‘মিশন এবং ভিশন নিয়ে দার্জিলিঙে কাজ হবে। আবেগ দিয়ে উন্নয়ন, পরিষেবার কাজ হয় না।’’

সূত্রের খবর, জিএনএলএফের দার্জিলিং শাখার সভাপতি থাকার সময় অজয় একা অনেক কিছু করতেন। মন ঘিসিংয়ের বন্ধু হওয়ায়, বাকি নেতারা অনেক সময়ই কিছু বলার সুযোগ পেতেন না বলে অভিযোগ। সে ধারা হামরো পার্টিতেও বজায় ছিল অভিযোগ। দলত্যাগীরা এ দিন জানান, রীতেশ পোর্টেল চেয়ারম্যান হলেও পুরসভা কার্যত অজয়ই চালান। পার্টি অফিস বা বাড়ি থেকে পুরসভা সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নেন। বিষ্ণু মাল্লাকে চেয়ারম্যান করার কথা হলেও, করা হয়নি। তা না করায় দলের মধ্যে অসন্তোষ বাড়তে শুরু করে বলে খবর।

গত কয়েক মাসে সে পরিস্থিতি যে পাল্টে যাচ্ছে তা অবশ্য টের পেয়েছিলেন অজয়। ফেসবুকে লাইভে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তৃণমূলের সর্বভারতীয় সা‌ধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে ‘দল ভাঙানোর খেলা’ বন্ধ করার আর্জি জানিয়েছিলেন। অনীত থাপার বিরুদ্ধে এ নিয়ে বার বার সরব হচ্ছিলেন।

এ দিনও সকাল থেকে তিনি কার্শিয়াঙেই ছিলেন। দলবদলের অনুষ্ঠানস্থল টাউন হলের ভিডিয়ো সামজিক মাধ্যমে দিয়ে ঘোড়া কেনাবেচার অভিযোগ করেন। অজয় বলেন, ‘‘পাহাড়ে গণতন্ত্র নষ্ট করা হচ্ছে। টাকা, বাড়ি দিয়ে জনপ্রতিনিধি কেনা হচ্ছে।’’ তাঁর আরও দাবি, দার্জিলিং পুরসভা বেআইনি নির্মাণ ভাঙছিল। তাতে অনেকের আঁতে ঘা লেগেছে।

তবে তৃণমূলের অন্যতম শীর্ষ নেতা তথা রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের মন্তব্য, ‘‘রেস্তরাঁ চালাতে চালাতে পুরসভা চালাতে চলে এসেছেন। পারছেন না হয়তো। যাঁরা ভবিষ্যতে দায়িত্ব নেবেন, তাঁরা নিশ্চয় ভাল করে পুর-পরিষেবা দিতে পারবেন।’’

তথ্য সহায়তা: রবিশঙ্কর দত্ত

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Ajoy Edwards GTA
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE