কোচবিহারের বড়দেবী। — নিজস্ব চিত্র
রাজা নেই। রাজ পরিবারের সেই নিয়ম অটুট রয়েছে কোচবিহার বড়দেবীবাড়িতে। এখনও নররক্তে পূজিত হন বড়দেবী। কথিত আছে, এক সময় নরবলি হত দেবীর পুজোয়। তা নিয়ে অবশ্য নেই কোনও প্রকৃত তথ্য। তবে নররক্ত এখনও গভীর রাতের গুপ্তপুজোয় দেবীর উদ্দেশ্যে দেওয়া হয়।
বংশ পরম্পরায় কালজানির এক বাসিন্দা শিবেন রায় সেই রক্ত দেন। সেই রক্তে ভেজা পুতুল বলি দেওয়া হয় সেখানে। শিবেনবাবু বলেন, “বংশ পরম্পরায় চলে আসা ওই নিয়ম মেনে আমরা এখনও রক্ত দিচ্ছি দেবীর পুজোয়।” শুধু ওই টুকুই নয়, দেবীর পুজোয় সপ্তমীর দিন থেকেই শুরু হয় বলি। চলে একের পর এক বলি। লাইন দিয়ে ভক্তরা বলির উপকরণ হাতে দাঁড়িয়ে থাকেন মন্দিরের সামনে। কোচবিহারের মহকুমাশাসক দেবোত্তর ট্রাস্ট বোর্ডের সদস্য অরুন্ধতী দে বলেন, “নিয়ম মেনেই ওই পুজো হয়।”
দেবোত্তর ট্রাস্ট বোর্ড সূত্রে জানা গিয়েছে, পাঁচশো বছরের বেশি বছর ধরে ওই পুজো হয়ে আসছে। রাজ আমলের প্রাচীন এই পুজোয় নিয়ম মেনে আট ফুট লম্বা ময়না গাছের ডাল কেটে তা দেবী রূপে পূজা করা হয়। তার পর তা শক্তিদন্ড হিসেবে কাঠামোয় বসিয়ে তৈরি করা হয় বড়দেবীর প্রতিমা। বংশ পরম্পরায় ওই প্রতিমা তৈরির কাজ করছেন প্রভাত চিত্রকর। বড়দেবী এখানে রক্তবর্ণা। দেবীর একদিকে সাদা সিংহ, অন্য দিকে বাঘ রয়েছে। দুই পাশে কার্তিক, গণেশ কিংবা লক্ষ্মী সরস্বতীর বদলে আছে জয়া-বিজয়া।
জনশ্রুতি রয়েছে, মহারাজা নরনারায়ণের স্বপ্নে দেখা দেবীরূপ প্রতিমায় ফুটে উঠেছে। সপ্তমী থেকে দশমী ওই পুজোয় চলে অজস্র বলি। মহিষ, পাঠা, হাঁস, মুরগি থেকে মাগুর মাছ ওই পুজোয় বলি দেওয়া হয়। বিশেষ করে অষ্টমীর দিন হাজার হাজার মানুষ তাঁদের মানস পূরণে বড়দেবী বাড়িতে হাঁস, মুরগি বলি দেন। সব ঘিরে সেখানে মেলা বসে যায়। কোচবিহার তো বটেই অসম সহ উত্তরবঙ্গ এমনকি দক্ষিণবঙ্গের নানা জেলা থেকে হাজার হাজার মানুষ যান দেবীর পুজো দেখতে।
দেবোত্তর ট্রাস্ট বোর্ডের এক কর্মী জয়ন্ত চক্রবর্তী জানান, পুজোয় যাতে নিয়মে কোনও সমস্যা না হয়, সে জন্য ময়না কাঠের দণ্ড থেকে শুরু করে বলির জন্য মোষ সহ সব জিনিস আগাম জোগাড় করে রাখা হয়। তিনি বলেন, “ঐতিহ্য এবং নিয়ম নিষ্ঠার সঙ্গে ওই পুজো হয়। সেখানে কোনও খামতি রাখা হয় না।” ওই পুজো ঘিরে পর্যটনের সম্ভাবনা রয়েছে বলে দাবি করেন কোচবিহার হেরিটেজ সোসাইটির সম্পাদক অরূপ মজুমদার। তিনি বলেন, “রাজ পরিবারের ওই পুজো মানুষের মধ্যে উন্মাদনা রয়েছে। বহু দূর থেকে মানুষ এসে ওই পুজোয় অংশ নেন। সঠিক ভাবে তা তুলে ধরা হলে পর্যটকরা আকৃষ্ট হবেন।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy