Advertisement
০১ মে ২০২৪

জল নামতে ধসছে পাড়

চর অনুপনগরের ভাঙনে ভিটে হারিয়ে গাঁ ছেড়েছেন বৃদ্ধা কমলা রায়। আশ্রয় নিয়েছেন গাজলে এক পরিজনের ভিটেয়। আতঙ্ক এখনও লেগে চোখেমুখে। ঠিক করেছেন, এ বার গাজলেই নতুন করে ভিটে করবেন। গঙ্গার চরে ফিরবেন না।

এখনও চলছে গঙ্গার ভাঙন। —নিজস্ব চিত্র।

এখনও চলছে গঙ্গার ভাঙন। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৯ অগস্ট ২০১৭ ০৯:৫০
Share: Save:

ত্রিপলের ছাউনির এক পাশে বাঁধা বাছুর। পাশে ফুটফুটে শুয়ে একটি বাচ্চা। এক কোণে ক’টা ইট ঠেকনা দিয়ে কোনও মতে গড়া উনুনে ভাতের হাঁড়ি বসানো।

দিন চারেক আগে চোখের সামনে তলিয়ে গিয়েছে জিতেন বিশ্বাসের বাড়ি। পাকা ছাদ খুইয়ে সংসার পেতেছেন ত্রিপলের নীচে। কেঁদে ফেলে তিনি বলেন, “কত শখ করে বানিয়েছিলাম বাড়িটা। সব শেষ!”

শুধু জিতেন বিশ্বাসের বাড়ি তো নয়, গত তিন সপ্তাহে গঙ্গার ভাঙনে তলিয়ে গিয়েছে গিয়েছে অন্তত ৮০টি বাড়ি। ভিটেমাটি হারিয়েছেন কমবেশি চারশো মানুষ।

মালদহের কালিয়াচক ৩ নম্বর ব্লকের অধীনে হলেও পারলালপুর, চর অনুপনগর ও চর পরানপাড়ার বাসিন্দাদের বাজার-হাট, চিকিৎসা থেকে পড়াশুনো সবেতেই ভরসা করতে হয় মুর্শিদাবাদের ধুলিয়ানের উপরে। গত কয়েক সপ্তাহে ভাঙনে ওই তিন গ্রামে তলিয়ে গিয়েছে একের পর এক বাড়ি। আরও কিছু বাড়ি যে কোনও সময়ে তলিয়ে যেতে পারে। সর্বনাশের প্রহর গুনছে প্রাথমিক স্কুলের বাড়িটিও।

ক’দিন আগেও স্কুল থেকে নদী ছিল স্কুল থেকে প্রায় তিনশো হাত দূরে। কখন জল জমি খেতে-খেতে এগিয়ে এসেছে। সোমবার সকালের মধ্যে তা এতটাই এগিয়ে এসেছে, স্কুলবাড়িটা ঝুলছে প্রায় নদীর উপরে। স্কুলবাড়ি ক্লাস আগেই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। এখন শিক্ষকেরা পড়ুয়াদের নিয়ে বসেছেন গাছতলায়।

চর অনুপনগরের ভাঙনে ভিটে হারিয়ে গাঁ ছেড়েছেন বৃদ্ধা কমলা রায়। আশ্রয় নিয়েছেন গাজলে এক পরিজনের ভিটেয়। আতঙ্ক এখনও লেগে চোখেমুখে। ঠিক করেছেন, এ বার গাজলেই নতুন করে ভিটে করবেন। গঙ্গার চরে ফিরবেন না।

কেন এমন ভাঙন?

নদী বিশেষজ্ঞ কল্যাণ রুদ্র জানাচ্ছেন, বর্ষায় নদীতে জল বাড়ার সময়ে স্রোতে পাড়ের নীচের দিকটায় মাটি ক্ষয়ে গিয়েছে। এখন জল নামার সময়ে পাড়ের ভূগর্ভস্থ বালির স্তরে যে জল ঢুকেছিল, তা-ও ফিরে যাচ্ছে নদীতে। আর যাওয়ার সময়ে আলগা করে খসিয়ে দিচ্ছে বালির স্তর। ধস নামছে তাই। সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে আরও ধস নামার সম্ভাবনা রয়েছে। কালিয়াচক ৩-এর বিডিও খোকন বর্মনের দাবি, “সেচ দফতর জরুরি ভিত্তিতে কাজ শুরু করেছে।’’

ফের বিহারে ভারী বৃষ্টিপাত হওয়ায় ঘন্টায় ঘন্টায় জল বাড়তে শুরু করেছে ফুলহার নদীর। যদিও জলস্তর নামছে জেলার অপর দুই নদী গঙ্গা এবং মহানন্দা। তবে ফুলহারের জল নতুন করে বাড়তে শুরু করায় ফের আতঙ্কে ভুগতে শুরু করেছেন সাধারন মানুষ। যদিও এখনই আতঙ্কের বিষয় নেই বলে দাবি করেছেন জেলা প্রশাসনের কর্তারা।

তাঁদের দাবি, বিহারের বৃষ্টির জন্য ফুলহারের জন্য এদিন বেড়েছে ঠিকই। তবে অন্য দুই নদীর জল নামছে। ফলে বন্যা পরিস্থিতি ক্রমশ স্বাভাবিক হচ্ছে মালদহ জেলায়। রবিবার মহানন্দা ২৩.২৩ মিটার, গঙ্গা ২৪.৩১ মিটার এবং ফুলহার ২৬.৬৪ মিটার উচ্চতায় বইছিল। তিনটি নদীর জলস্তর নামছিল। সোমবারও গঙ্গা এবং মহানন্দার জল কমলেও জলস্তর বাড়তে শুরু করেছে ফুলহারের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Flood River Erosion Ganges
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE