Advertisement
১৬ মে ২০২৪

ভাদ্রের রোদে হাঁসফাস

ছত্রিশ ঘণ্টার মধ্যে বদলে গিয়েছে তাপমাত্রার স্বাভাবিক ওঠানামা। ভাদ্র মাসে রোদের তেজ এমনিতেই চড়া থাকায়, তাপমাত্রাও বাড়তে থাকে। কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়ি দুই শহরে তাপমাত্রার বেড়ে ৩৬ ডিগ্রির কাছাকাছি। গত বৃহস্পতিবার শিলিগুড়ির তাপমাত্রা পৌঁছে যায় ৩৭ ডিগ্রিতে।

রোদ থেকে বাঁচতে। শিলিগুড়িতে ছবিটি তুলেছেন বিশ্বরূপ বসাক।

রোদ থেকে বাঁচতে। শিলিগুড়িতে ছবিটি তুলেছেন বিশ্বরূপ বসাক।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ২৯ অগস্ট ২০১৬ ০১:৫৬
Share: Save:

ছত্রিশ ঘণ্টার মধ্যে বদলে গিয়েছে তাপমাত্রার স্বাভাবিক ওঠানামা। ভাদ্র মাসে রোদের তেজ এমনিতেই চড়া থাকায়, তাপমাত্রাও বাড়তে থাকে। কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়ি দুই শহরে তাপমাত্রার বেড়ে ৩৬ ডিগ্রির কাছাকাছি। গত বৃহস্পতিবার শিলিগুড়ির তাপমাত্রা পৌঁছে যায় ৩৭ ডিগ্রিতে। শুক্র-শনিবারও তাপমাত্রা ছিল তার কাছাকাছি। রবিবারের তাপমাত্রা যাবতীয় রেকর্ড ভেঙে ছুঁয়েছে ৩৮ ডিগ্রি। আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা দাবি করেছেন, এই তাপমাত্রা দিয়েই গরমের আন্দাজ পাওয়া সম্ভব নয়। যে তাপমাত্রা ব্যারোমিটারের স্কেলে দেখা যায়, এবং যে তাপমাত্রা অনুভূত হয় তার মধ্যে ফারাক থাকে। ‘গুগলে’র আবহাওয়া পরিষেবা জানিয়েছে, এ দিন শিলিগুড়ির অনুভূত তাপমাত্রা ছিল ৪৭ ডিগ্রির কাছাকাছি।

চরম দাবদাহের সঙ্গে জুড়েছে লোডশেডিঙের দুর্ভোগ। শহরের বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থার সংস্কারের জন্য গত সপ্তাহ থেকেই শহরের বিভিন্ন এলাকার বিদ্যুৎ সংযোগ দিনভর বন্ধ রাখা হয়েছে। শনিবারের মতো রবিবারও গমর এবং লোডশেডিঙের দাপটে নাকাল হতে হয়েছে শহরবাসীকে।

গত কয়েকদিন রাতের দিকে আকাশে মেঘ দেখা গিয়েছে, ঝোড়ো হাওয়ার সঙ্গে বৃষ্টিও হয়েছে। তবু দিনের তাপমাত্রা কমেনি। রবিবার সকাল থেকে শিলিগুড়িতে চড়া রোদ ছিল। বিকেলের দিকে আকাশে কালো মেঘের আনাগোনা শুরু হওয়ায় রোদের তেজ কিছুটা কমলেও গরম কমেনি। হিলকার্ট রোড-সেবক রোড, কিংবা বিধান রোডের মতো ছুটিরে দিনেও ব্যস্ত রাস্তা এ দিন তুলনামূলক সুনসান দেখা গিয়েছে সকালে-দুপুরে। সিটিবাস, অটোতে যাত্রী সংখ্যা ছিল কম। হেলমেট তো বটেই রোদ থেকে বাঁচতে সারা শরীরে কাপড় জড়িয়ে স্কুটি চালাতে গিয়েছে তরুণী-যুবতীদের। বেড়ে গিয়েছে আইসক্রিম, ঠান্ডা পানীয়ের চাহিদাও।

যাত্রী না পাওয়ায় রাস্তায় অটো-টোটোর সংখ্যাও ছিল অনান্য দিনের তুলমায় কম। অসুস্থ হয়ে পড়ছেন বৃদ্ধ-বৃদ্ধারা। পেটের রোগের সংক্রমণ ছড়ানোর উপক্রম হয়েছে। দাবদাহ বিপর্যস্ত করেছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রাও।

বিদ্যুৎ পর্ষদের তরফে অবশ্য জানানো হয়েছে, বর্ষার সময় লাইন মেরামত-সংস্কার সম্ভব ছিল না। এখনই কাজ না করলে পুজোর সময়ে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবারহ নিয়ে সংশয় তৈরি হবে। তবে তাপমাত্রা এমন চড়া থাকলে আগামী সপ্তাহে কাজ নাও হতে পারে বলে আশ্বাস দিয়েছেন পর্ষদের এক পদস্থ কর্তা। তবে আগামী সপ্তাহেও দাবদাহ চলবে কিনা তা নিয়ে অবশ্য দ্বিমত রয়েছে আবহাওয়া বিশেষজ্ঞদের মধ্যে। সমতলের মতো পাহাড়ের তাপমাত্রাও বেশ চড়া। সকাল থেকে দার্জিলিঙে চড়া রোদ থাকলেও দুপুরের পরে বৃষ্টি কিছুটা স্বস্তি দিয়েছে। কিন্তু সিকিমের গ্যাংটক, তাদঙে তাপমাত্রা সাম্প্রতিক রেকর্ড ছাড়িয়ে গিয়েছে। তাদঙের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৪ ডিগ্রি। কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতরের সিকিমের আধিকারিক গোপীনাথ রাহা জানিয়েছেন, আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে বৃষ্টি হতে পারে। তাতে তাপমাত্রা কিছুটা হলেও কমবে। যদিও উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল বিভাগের প্রাক্তন প্রধান তথা আবহাওয়া বিশেষজ্ঞ সুবীর সরকারের দাবি, মাসখানেক এই পরিস্থি চলতে পারে।

এই অঞ্চলের ওপর থেকে মৌসুমী অক্ষরেখার অবস্থান সরে যাওয়া এবং নিম্নচাপের অভাবেই দাবদাহ চলছে বলে কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে। সুবীরবাবু বলেন, ‘‘এবার কিন্তু উত্তরপূর্ব ভারতে বৃষ্টি কম হয়েছে। সে কারণেই উষ্ণতা বাড়ছে। প্রতি বছরই এই সময়টায় তাপমাত্রা বেশি থাকে, এবারে বৃষ্টি কম হওয়ায় উষ্ণতা মাত্রা ছাড়িয়েছে।’’ সুবীরবাবু দাবি করেছেন, যা পরিস্থিতি তাতে মৌসুমী নিম্নচাপ ফের জাকিয়ে বসবে তেমন কোনও আশা নেই। তার জেরে টানা বৃষ্টিরও সম্ভাবনা নেই। সুবীরবাবুর কথায়, ‘‘মাসখানেক এমন পরিস্থিতি চলতে পারে।’’

অনুভূত তাপমাত্রা কখনও ৪৫ কখনও ৪৭ থেকে ৪৮ এই পরিস্থিতিতে টানা বৃষ্টি না হলে, ছিটেফোঁটা বৃষ্টিতেও স্বস্তি খুঁজছে শহরবাসী।

গোটা বাড়িই যেন রান্নাঘর

শর্মিষ্ঠা ভট্টাচার্য (গৃহবধূ)

দিনের অনেকটা সময় তো রান্নাঘরেই কেটে যায়। তাই উনুনের পাশে কী ভাবে আধা সেদ্ধ হয়ে থাকতে হয় তা বিলক্ষণ জানা আছে। এখন তো গোটা বাড়িটাই যেন রান্নাঘর হয়ে গিয়েছে।

বাইরে তাপমাত্রা যেন মরুশহরকেও পাল্লা দিচ্ছে। তার সঙ্গে শুরু হয়েছে লোডশেডিং। একে চড়া রোদ, তারপরে পাখা চলছে না। সাধারণ মধ্যবিত্তরা থাকবে কী করে। বলা হচ্ছে পুজোর আগে বিদ্যুতের তার সংস্কার করা হচ্ছে। আমার প্রশ্ন, ওদের কী মানবিকতা নেই? তাপমাত্রার এমন অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়া টের পেয়েও এক-দু’দিন কাজ বন্ধ রাখতে পারল না।

গত শনিবারের মতো আজকে রবিবারও সকাল থেকে লোডশেডিং চলছে। বাড়িতে বসে থাকলে মনে হচ্ছে, ফার্নেসে বসে রয়েছি। বাইরে যাওয়ার তো প্রশ্নই নেই। সকালে একবার রান্নাঘরে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলাম। কিন্তু বাড়ির সকলের জন্য রান্না তো করতে হবে। তাই ঘেমে-নেয়েও খুন্তি নেড়ে যাচ্ছি।

নিজেরাই ডাকছি দুর্ভোগ

শ্রীপদ দাস (প্রাক্তন বেতার-কর্তা)

শনিবার আলিপুরদুয়ার যাওয়ার কথা ছিল। বাড়ি থেকে বেড়িয়ে কিছুটা এগিয়েছি। চড়া রোদে মাথা ঘুরে গেল। রোদ তো না, যেন আগুনের দলা পড়ছে ওপর থেকে। হাত-পায়ের রোদ লেগে ফোস্কা পড়ে যাওয়ার উপক্রম। অসুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে আসি, বের হতে সাহস পাইনি। সেই সঙ্গে ঘনঘন লোডশেডিং। দুর্ভোগ একেবারে চরম সীমায় পৌঁছে গিয়েছে। আমার মতো প্রীবণদের আরও বেশি কষ্ট। খবর পেলেমা, অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। কেউ কেউ নার্সিংহোমেও ভর্তি হয়েছেন। তবে এর পুরোটাই কী প্রকৃতি আর বিদ্যুৎ পর্ষদের দোষ? আমার মতো মনে হয় এ দুর্ভোগ নিজেরাই ডেকে এনেছি। যে ভাবে চারদিকে গাছ কেটেছি, আবাসন তৈরি করেছি। তাতে এমনটাই হওয়ার কথা ছিল। খবরে জানলাম নিম্নচাপ নেই বলে মেঘ আসছে না উত্তরের আকাশে। অবাধে গাছকাটা চলতে থাকলে মেঘ আর আসবেও না। তাই সবাইকে গাছ লাগাতে হবে, হাত হাত মিলিয়ে গাছ কাটা আটকাতেও হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

sun weather
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE