Advertisement
২৭ মার্চ ২০২৩

ঘুম কেড়েছে আতঙ্ক

কয়েকদিন থেকে তোর্সার জল বাড়ছে। বৃহস্পতিবার শুরু হয় ভাঙনও। কোচবিহারের ওই নদী চরের দুটি ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের অনেকের তাই ঘুম উবে গিয়েছে।

ময়নাগুড়ির বাসুসুবার সঙ্গপাড়ায় এ ভাবেই ঝুঁকি নিয়ে পড়ুয়ােদর যেতে হচ্ছে স্কুলে। ছবি: দীপঙ্কর ঘটক

ময়নাগুড়ির বাসুসুবার সঙ্গপাড়ায় এ ভাবেই ঝুঁকি নিয়ে পড়ুয়ােদর যেতে হচ্ছে স্কুলে। ছবি: দীপঙ্কর ঘটক

নিজস্ব সংবাদদাতা
কোচবিহার শেষ আপডেট: ০৬ জুলাই ২০১৮ ০৩:১২
Share: Save:

কয়েকদিন থেকে তোর্সার জল বাড়ছে। বৃহস্পতিবার শুরু হয় ভাঙনও। কোচবিহারের ওই নদী চরের দুটি ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের অনেকের তাই ঘুম উবে গিয়েছে।

Advertisement

বাসিন্দাদের অনেকে আগ্রাসী তোর্সার কবল থেকে বাঁচতে বসতবাড়ি ভেঙে নিতেও শুরু করেছেন। ভবিষ্যতের মাথা গোজবার ঠাঁইয়ের খোঁজে কেউ আল্লাকে ডাকছেন। কেউ ভগবানকে। ভুক্তভোগীদের অনেকেরই অভিযোগ, ‘‘আমাদের কথা কেউ ভাবেন না। ফি বছর বর্ষার মরসুমে তাই চিন্তাও বেড়ে যায়। উপরওয়ালা একমাত্র আমাদের সবার ভরসা।’’

কোচবিহার শহরের তোর্সা বাঁধের ওপারে নদীর চরে ১৬ ও ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের কিছু এলাকা রয়েছে। সবমিলিয়ে দুই ওয়ার্ডের শতাধিক পরিবার সেখানে বসবাস করেন। এ বারেও নদী ফুঁসতে শুরু করতেই দিশেহারা অবস্থা সকলের। তাদের মধ্যে একেবারে নদী সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দাদের অবস্থা সবচেয়ে উদ্বেগজনক।

বৃহস্পতিবার থেকে বাড়ি ভেঙে সরানোর কাজেও নেমেছেন অনেকে। ভুক্তভোগীদের একজন সায়র আলি বলেন, “নদী আর ঘরের দূরত্ব এখন খুব অল্প। বাধ্য হয়েই এতদিনের পুরনো বসতবাড়ি ভেঙে নিতে হচ্ছে।” তার পাশে দাঁড়ানো জয়নাল মিঁয়া বলেন, “আমি ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা। গতবারেই নদীর গ্রাস এড়াতে আমার বাড়ি সরিয়ে নিতে হয়েছে। তারপরেও কোনও ব্যবস্থা হয়নি। এ বারেও তাই অনেকে বিপদের মুখে পড়েছেন। জানিনা এ ভাবে কতদিন চলবে। আল্লা আমাদের ভরসা।”

Advertisement

বাড়ি ভেঙে সরানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন ওই এলাকার বাসিন্দা নিধু দাস। তিনি বলেন, “রিকশা চালিয়ে যা আয় হয় তা দিয়ে সংসার চালানোই দায়। নিরাপদ জায়গায় জমি কিনে বসতবাড়ি করার সাধ্য নেই। তাই নদীর চরেই আশ্রয় নিতে হয়েছে। এ বার যা অবস্থা তাতে সেই বাড়ি আর রাখা যাবে বলে মনে হচ্ছে না। তাই শুধু ভগবানকেই স্মরণ করে যাচ্ছি।”

বিরোধীদের অভিযোগ, নদীর চরের বাসিন্দাদের ‘মাথা গোঁজার’ আশ্রয় রক্ষার ব্যাপারে পুরসভা, প্রশাসন থেকে সেচ দফতরের নানা মহলে গতবারেও বহু আর্জি জানানো হয়েছিল। তবে আখেরে কাজের কাজ কিছু হয়নি।

১৮ নম্বর ওয়ার্ডের সিপিএম কাউন্সিলর পার্থপ্রতিম সেনগুপ্ত বলেন, “যা অবস্থা তাতে জরুরি ভিত্তিতে ওই ভাঙন ঠেকাতে পদক্ষেপ করা ভীষণ জরুরি।” পুরসভার চেয়ারম্যান, তৃণমূলের ভূষণ সিংহ বলেন, “বিষয়টি প্রশাসন ও সেচ দফতরের নজরে আনা হচ্ছে।”

প্রশাসনের এই আশ্বাসে অবশ্য আশ্বস্ত হতে পারছেন না স্থানীয় বাসিন্দারা। তাঁদের অভিযোগ, আগেও সেচ দফতরের কর্তারাও ওই ব্যাপারে স্পষ্ট আশ্বাস দিতে পারেননি। বরং নদীর পাড়ে তাদের কিছু করার সুযোগ নেই বলে বিষয়টি প্রায় এড়িয়ে যান। প্রশাসনের তরফে বালির বস্তা, বাঁশ দিয়ে কিছু চেষ্টা হলেও লাভ হয়নি।

সেচ দফতরের কোচবিহারের এক কর্তা জানান, নদীর পাড়ে জরুরি ভিত্তিতে কিছু করতে হলে প্রশাসনের মাধ্যমে উদ্যোগ চাই। আমাদের সেখানে কাজের সুযোগ সেভাবে নেই। প্রশাসনের তরফে এক আধিকারিক বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখার কথা জানান। ভুক্তভোগীদের বক্তব্য, নদী যেভাবে এগোচ্ছে তাতে দ্রুত কাজ না হলে এলাকাই নিশ্চিহ্ন হতে পারে। ভরসা তাই ‘উপরওয়ালা’ই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE
Popup Close
Something isn't right! Please refresh.