নিঃস্ব: আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত কাদেরগঞ্জের বাসিন্দারা। ফাইল চিত্র
গ্রামের পাশ দিয়েই গিয়েছে সীমান্ত সড়ক। সড়কের এক পাশে কাঁটাতারের বেড়া। তারও ওপারে বাংলাদেশ।আর এপারে কাদেরগঞ্জ গ্রাম।
উত্তর দিনাজপুরের করণদিঘির ওই গ্রামের অধিকাংশ মানুষই প্রান্তিক চাষি। কেউ বা দিনমজুর। ছোট্ট ওই জনবসতিতে হিন্দু-মুসলিম একসঙ্গেই বসবাস। স্থানীয়রা জানান, সাত পুরুষ ধরে এ ভাবেই চলছে সব। এখানে একসঙ্গে দুই সম্প্রদায়ের মানুষ সবার উৎসবে শামিল হন। একে অন্যের বিপদে এগিয়ে আসেন।
সব ঠিকই চলছিল। কিন্ত নতুন নাগরকিত্ব আইনের জেরে আশঙ্কার ছায়া পড়েছে সেই গ্রামে। ঘুম উড়েছে কয়েকটি পরিবারের। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গত নভেম্বর মাসে ওই গ্রামের একটি পাড়ায় আগুন লাগে। পুড়ে যায় ন’টি পরিবারের সব কিছু। তার মধ্যে পাঁচটি মুসলিম পরিবার। তাঁরা জানান, আগুনে পুড়েছে সব নথিও। ভোটার কার্ড, আধার কার্ডও ছাই।
গ্রাসবাসী বাবলু মাহালদার জানান, তাঁদের জীবিকা জনমজুরি, বাঁশের কাজ, কুঁচিকাঠির ঝাঁটা তৈরি। কখনও অন্যের জমিতে কাজ করেন কেউ কেউ। ১৫ নভেম্বর রাতে আগুন লাগে গ্রামে। পুড়ে যায় ন’টি বাড়ি। বাবলু বলেন, ‘‘ঘর থেকে একটা কিছুও বের করতে পারিনি।’’ ওই গ্রামেরই বধূ হামিদা খাতুন বলেন, ‘‘রাতে তখন সকলেই ঘুমিয়ে। আচমকা আগুন লেগেছিল। মহূর্তের তা ছড়িয়ে পড়ে। প্রাণে বাঁচলেও ঘরের সব কিছু ছাই হয়ে যায়। মরে যায় গবাদি পশুগুলোও।’’
এলাকাবাসী জানান, নসিব, বিষ্ণুদের সেই রাতের ‘ক্ষত’ এখনও টাটকা। নতুন নাগরিকত্ব আইনে সীমান্তের গ্রামের ওই সব সংখ্যালঘু পরিবারের লোকেরা ফের আশঙ্কায়। তাঁদের কাছে নেই কোনও নথি। নথির খোঁজে কখনও ব্লক অফিস, কখনও পঞ্চায়েতে যাচ্ছেন সকলে।
গ্রামবাসী মহম্মদ মুজাহের বলেন, ‘‘এই মরসুমে কাজ করে কিছু টাকা হাতে পাই। কিন্ত এখন নথির খোঁজে সব ফেলে ঘুরতে হচ্ছে। আগুনে বাড়ি তো হারিয়েছি। নথি না পেলে এ বার দেশ না হারাতে হয়।’’ বিষ্ণু বলছেন, ‘‘আমার নথি না থাকলেও নাকি শরণার্থী হিসেবে নাগরিকত্ব পাব। মুজাহেররা যদি নথি না দেখাতে পারে? তা হলে ওদের কি অনুপ্রবেশকারী বলে দেশ থেকে তাড়ানো হবে? এ কেমন আইন!’’
জেলা পরিষদ সদস্য সোহর বানু ও স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধান রিঙ্কু মজুমদার বলেন, ‘‘আগুনে সব হারানো পরিবারের লোকেরা নথি নিয়ে চিন্তায় রয়েছেন। নথি উদ্ধারে কী ভাবে ওদের সাহায্য করা যায় দেখা হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy