ভোটের মুখে শিলিগুড়িতে টাকা যেন উড়ে বেড়াচ্ছে। নির্বাচন কমিশনের বিধির পরোয়া না করে নোটের তাড়া নিয়ে ঘোরাঘুরির অভিযোগও রোজই ইতিউতি উঠছে। তা যে একেবারে ভিত্তিহীন নয় সেটাও কমবেশি রোজই তল্লাশিতে ধরা পড়ছে। শনিবারও শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেটের অফিসারদের নানা এলাকায় তল্লাশিতে প্রায় ৪ লক্ষ টাকা বাজেয়াপ্ত হয়েছে। তার মধ্যে ৩ লক্ষ টাকা উদ্ধার হয়েছে মাটিগাড়া-নকশালবাড়ি বিধানসভা কেন্দ্রের সিটি সেন্টারের সামনে তল্লাশির সময়ে। তার আগে শুক্রবার রাতেই পুলিশ কমিশনারেটের গোয়েন্দা বিভাগ এনজেপি এলাকা থেকে ২২ লক্ষ টাকা বাজেয়াপ্ত করেছে। ভোট বিধি লাগু হওয়ার পর থেকে এখনও পর্যন্ত শুধু শিলিগুড়ি ও লাগোয়া এলাকায় বাজেয়াপ্ত হয়েছে প্রায় ৫০ লক্ষ টাকা।
শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার মনোজ বার্মা বলেন, ‘‘নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ মেনে বেআইনি টাকা বাজেয়াপ্ত করতে তল্লাশি জোরদার করা হয়েছে। তাতেই এখনও অবধি ৫০ লক্ষ টাকা বাজেয়াপ্ত হয়েছে। গ্রেফতার করা হয়েছে ৫ জনকে।’’ সরকারি সূত্রের খবর, সম্প্রতি শিলিগুড়িতে কমিশনের বিশেষ পর্যবেক্ষক চন্দ্রভূষণ কুমারও ভোটের মুখে শিলিগুড়ি করিডরে বেআইনি টাকা রুখতে বাড়তি নজরদারি নির্দেশ দেন। তাতেই পুলিশ আরও নড়েচড়ে বসে। ওই বৈঠকের পর দিনই খালপাড়া এলাকায় তল্লাশি চালানোর সময়ে প্রায় ২ লক্ষ টাকা বাজেয়াপ্ত করে শিলিগুড়ি থানার পুলিশ। গ্রেফতার করা হয় এক জনকে। পুলিশের দাবি, কোনও ক্ষেত্রেই টাকার উৎস সম্পর্কে স্পষ্ট ও বিশ্বাসযোগ্য তথ্য মেলেনি। ওই টাকা ভোটের কাজে ব্যবহারের জন্যই আমদানি হয়েছে কি না তা নিয়ে পুলিশ তথ্য সংগ্রহ করতে পারেনি।
এই অবস্থায়, শাসক ও বিরোধী দলের নেতাদের ভোটের সময়ে কারা টাকা ছড়াতে পারে তা নিয়ে অভিযোগের চাপানউতোর শুরু হয়েছে। শুক্রবার ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ি বিধানসভা কেন্দ্রের আওতায় থাকা এনজেপির ফকদইবাড়িতে যে ২২ লক্ষ টাকা উদ্ধার হয়েছে তার সঙ্গে রাজনৈতিক কোনও দলের যোগসূত্র নেই বলে দাবি করেছে ধৃতরা। ধৃতদের মধ্যে একজন বিমল সরকারের পরিবারের তরফে লিখিত ভাবে সে কথা পুলিশকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাঁরা জানান, জমির ব্যবসার জন্যই টাকা রাখা হয়েছিল।
ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ির তৃণমূল প্রার্থী তথা বিদায়ী উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব বলেছেন, ‘‘আমরা যে স্বচ্ছভাবে ভোটে বিশ্বাস করি তা সকলেই জানেন। তবুও কুৎসা চলে। প্রমাণ ছাড়া কেউ কারও দিকে অপবাদের আঙুল তুলতে পারে না। আমরা কমিশনের কাছে ব্যবস্থা গ্রহণের আর্জি জানিয়েছি। প্রয়োজনে কুৎসাকারীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ তৃণমূলের ডাবগ্রামের একাধিক নেতা-কর্মীর দাবি, যাঁর বাড়িতে টাকা মিলেছে তাঁর যোগসূত্র কাদের সঙ্গে রয়েছে সেটা পুলিশ খতিয়ে দেখে প্রকাশ্যে জানাক। পক্ষান্তরে, সিপিএম ও কংগ্রেসের তরফে দাবি করা হয়েছে, কমিশনের পক্ষ থেকে যাবতীয় বাজেয়াপ্ত টাকার উৎস ও তা কোথায় যাচ্ছিল সেই ব্যাপারে তদন্ত করে ব্যবস্থ নেওয়া হোক। মাটিগাড়া-নকশালবাড়ির বাম সমর্থিত কংগ্রেস প্রার্থী শঙ্কর মালাকার বলেন, ‘‘টাকা ছড়িয়ে ভোট করানোর চেষ্টা হলে, জনতাই উচিত শিক্ষা দেবেন। আমরাও খোঁজখবর নিচ্ছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy