এই গজলডোবাতেই হবে ট্যুরিজম হাব। নিজস্ব চিত্র।
জল, প্রকৃতি, চা এবং হাতি। এই চারটি মুখ্য বিষয়কে ঘিরে গড়ে উঠবে গজলডোবা ট্যুরিজম হাব। ওই এলাকায় পর্যটন বিকাশের ‘ইউএসপি’ হিসেবে এটাই মাথায় রাখছে পর্যটন দফতর।
‘জল’ মানে তিস্তা নদী, তার ক্যানাল এবং বদ্ধ জলাশয় গুলিতে বোটিং, সুন্দরবনের আদলে বজরা করে ঘোরানোর ব্যবস্থা। ‘প্রকৃতি’-র মধ্যে রয়েছে গজলডোবার নদী-জঙ্গল আর দূরের কাঞ্চনজঙ্ঘার সামগ্রিক সৌন্দর্যের সঙ্গে পরিযায়ী পাখিও। আবার ডুয়ার্সের বিভিন্ন চা বাগানে ঘুরে আসার জন্যও গজলডোবা আদর্শ। তাই রয়েছে ‘চা’। আর কুনকি হাতির বিরাট পিলখানা, হাতি পুনর্বাসন কেন্দ্র এবং হাতি বিষয়ক সংগ্রহশালা হবে গজলডোবায়। জঙ্গল সাফারি এবং হাতির স্নানের দৃশ্য উপভোগ করার ব্যবস্থাও থাকবে এখানে। তাই আগের তিনটি বিষয়ের সঙ্গে ‘হাতি’কেও পর্যটন টানার অন্যতম বিষয় করে ফেলেছেন পর্যটন আধিকারিকেরা।
বৃহস্পতিবার এ ভাবেই লগ্নিকারীদের গজলডোবার ভবিষ্যৎ লক্ষ্য বুঝিয়ে উৎসাহ দেবার চেষ্টা করলেন রাজ্য পর্যটন দফতরের কর্তারা। এ দিন পর্যটন দফতরের উদ্যোগে গজলডোবা তিস্তা ব্যারাজ লাগোয়া হাওয়ামহলে সম্ভাব্য লগ্নিকারীদের নিয়ে বৈঠক করা হয়। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন রাজ্য পর্যটন দফতরের সচিব অজিতরঞ্জন বর্ধন, দফতরের যুগ্ম অধিকর্তা সুনীল অগ্রবাল। বৈঠকে যোগ দেন সিআইআই কর্মকর্তারা-সহ শিলিগুড়ি এবং উত্তরবঙ্গের জনা ত্রিশেক উৎসাহী লগ্নিকারীরা। ছিলেন পর্যটন ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত ট্যুর অপারেটরেরাও।
বৈঠকের শুরুতেই সচিব অজিতবাবু জানান, গজলডোবা ট্যুরিজম হাবে হোটেল তৈরি করার জন্যে জমি নিলাম প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। দু’বছর আগে একবার জমি নিলামের চেষ্টা হলেও পরিকাঠামোগত উন্নয়ন না হওয়ায় সে প্রক্রিয়া ফলপ্রসূ হয়নি। এ বারে সড়ক, নিকাশি, আলো, পানীয় জলের মত গুরুত্বপূর্ণ পরিকাঠামো রূপায়ণের পরই প্রথম দফার জমি নিলাম প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ২০ ফেব্রুয়ারি থেকে জমি নিলামের জন্যে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। আগামী ২২ এপ্রিল পর্যন্ত দরপত্র নেওয়া হবে। এ বারের জমি নিলাম প্রক্রিয়ায় শুধুমাত্র একতারা সম্পন্ন হোটেল এবং অপেক্ষাকৃত কম খরচের হোটেল অর্থাৎ বাজেট হোটেল নির্মাণের জন্যে জমি নিলাম প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এই স্তরের হোটেল নির্মাণ করতে শিলিগুড়ি এবং উত্তরবঙ্গের স্থানীয় শিল্পপতিদের উৎসাহ দিতেই এ দিনের আলোচনা সভা বলে জানান পর্যটন দফতরের আধিকারিকেরা।
১.৭৫ একরের জমির ওপরে মোট বাজেট হোটেলগুলি নির্মাণ করতে হবে। প্রতিটি হোটেলে ৩০টি শোওয়ার ঘর থাকতে হবে। পুরো গজলডোবা প্রকল্পে বিলাসবহুল, স্বল্পখরচের হোটেল মিলিয়ে মোট ৪০০ শয্যার ব্যবস্থা থাকবে, ২০৮ একরের এই হাবে গলফ কোর্স, আয়ুর্বেদিক স্পা থাকবে। একটি বিরাট সাংস্কৃতিক কেন্দ্রও হবে বলে জানান আধিকারিকেরা।
এ দিন আলোচনা বৈঠকের পর জমি দেখতে উৎসাহী লগ্নিকারীদের এলাকা ঘুরেও দেখান আধিকারিকেরা। বৈঠকে উপস্থিত লগ্নিকারী এবং ট্যুর অপারেটররা নিজস্ব মতামতও জানান। ইস্টার্ন হিমালয়া ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশনের কার্যকরী সম্পাদক সম্রাট সান্যাল বলেন, ‘‘সাংস্কৃতিক ক্ষেত্র গড়ে তোলাটা ভাল উদ্যোগ। লাগোয়া অন্যান্য পর্যটনক্ষেত্রগুলিতেও সাংস্কৃতিক চর্চার জন্যে পৃথক কোন জায়গা নেই। তাই এটিকে যাতে আন্তর্জাতিক মানের একটি সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হিসাবে গড়ে তোলা যায় সেটি ভেবে দেখা দরকার।’’ অজিত বর্ধন জানান, দ্রুত কলকাতা এবং দিল্লিতেও গজলডোবাকে নিয়ে আলোচনা সভা করে সেখানকার শিল্পপতিদেরও আকৃষ্ট করার চেষ্টা চালানো হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy