এসজেডিএ-তে দফতরের আধিকারিকদের নিয়ে বৈঠক করছেন বিদায়ী মন্ত্রী গৌতম দেব। — নিজস্ব চিত্র
বিরোধীদের আপত্তির মুখে পড়ে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরের বৈঠক ডেকেও বাতিল করলেন বিদায়ী মন্ত্রী গৌতম দেব। বুধবার দুপুর ২টোয় মুখ্যমন্ত্রীর শাখা সচিবালয় উত্তরকন্যায় উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরের বৈঠক ডাকেন গৌতমবাবু।
এ দিন সকালে তাঁর সহকারীরা ‘হোয়াটসঅ্যাপ’-এ মেসেজ পাঠিয়ে দফতরের অফিসার এবং বাস্তুকারদের নিয়ে মন্ত্রী বৈঠক করবেন বলে সংবাদমাধ্যমে জানিয়ে দেন। বিষয়টি জানতে পেরেই ময়দানে নেমে পড়ে সিপিএম। দলের শিলিগুড়ির প্রার্থী অশোক ভট্টচার্যের সঙ্গে আলোচনার পর দার্জিলিং জেলা সম্পাদক জীবেশ সরকার দার্জিলিং এবং জলপাইগুড়ির জেলাশাসকের কাছে এসএমএসে অভিযোগ দায়ের করেন। তখন গৌতমবাবু অবশ্য এসজেডিএ দফতরে গিয়ে একই ভাবে অফিসার, বাস্তুকারদের নিয়ে বৈঠকে ব্যস্ত ছিলেন।
প্রশাসনিক সূত্রের খবর, দুই জেলাশাসকের কাছে অভিযোগ দায়ের হওয়ার পরেই তা জানানো হয় উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরের কমিশনারকে। তিনিই গৌতমবাবুকে টেলিফোন করে এই বৈঠক করা যাবে না বলে জানান। প্রশাসনের তরফে তাঁকে জানানো হয়, কোচবিহার জেলায় আগামী ৫ মে ভোট হবে। তার আগে এ ভাবে দফতরের বৈঠক করা যায় না। এসজেডিএ-তে বৈঠকের পর গৌতমবাবু দাবি করেন, ‘‘একটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল। কোচবিহারে তো ভোট এখনও হয়নি। তাই বৈঠকটি বাতিল করছি।’’ তাঁর আরও বক্তব্য, ‘‘তবে বিরোধীদের চাপে নয়, বিষয়টি আইনের মধ্যে নেই জেনেই তা বাতিল করেছি।’’
এই নিয়ে অশোকবাবু বলেন, ‘‘তৃণমূল দলটা তো আর আইনকানুনের তোয়াক্কা করে না। তাই এ সব করার চেষ্টা করেন। এটা পুরোপুরি নিবার্চন বিধিভঙ্গের সামিল।’’ দার্জিলিঙের জেলাশাসক অনুরাগ শ্রীবাস্তব শুধু বলেছেন, ‘‘অভিযোগ ঠিক কী দেখিনি। আগে মেসেজ পাই, তার পরে বিষয়টি দেখা হবে।’’
গৌতমের নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সিপিএমের জীবেশও। সেখানে বির্তক দেখা দিয়েছে এসজেডিএ-র বৈঠক নিয়েও। জীবেশের দাবি, ‘‘উনি এসজেডিএ-তেও বৈঠক না করলে পারতেন। গৌতম এখন একজন কেয়ারটেকার মন্ত্রী মাত্র। এসজেডিএ-র চেয়ারম্যান তো হবেন নিবার্চিত কোনও বিধায়ক। উনি আগে জিতুন, তার পরে বৈঠক করবেন।’’
তবে জীবেশের আশঙ্কা, ‘‘ভোটের ফলের আগে বিদায়ী চেয়ারম্যান গিয়ে ফাইলপত্র দেখলে অনেক কিছু হতে পারে। আবার ফাইল এলোমেলো হয়ে যেতে পারে। আশা করব, এ ক্ষেত্রে তেমন কিছু হবে না।’’
গৌতমের দাবি, ‘‘বর্ষা আসছে। প্রচুর প্রকল্পের কাজ চলছে। সেগুলি কী পর্যায়ে আছে, তা নিয়ে অফিসারদের কথা বলে গেলাম। এটা কোনও সরকারি বৈঠক নয়।’’ এ পরেই বিদায়ী চেয়ারম্যানের সংযোজন, ‘‘এসজেডিএ দফতর জুড়ে সিসিটিভি ক্যামেরা রয়েছে। কোথাও আলপিন পড়লে অশোকবাবু খবর পান। তাই ফাইল সই, লোপাটের বিষয় কেন উঠছে! আর আমি গৌতম দেব, এক জন দায়িত্বশীল লোক। এটা মাথায় রেখে অন্যদের মন্তব্য করা দরকার।’’
সরকারি সূত্রের খবর, ক্রেতা সুরক্ষা আদালত, পাসপোর্ট সেবা কেন্দ্র, ড্রাইপোর্ট-টি পার্ক নিয়ে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি, পঞ্চম মহানন্দা সেতুর রাস্তা, জলপাইগুড়ির সমাজপাড়ার রাস্তা, রাজবাড়ি দিঘি, পাইনাপেল-ভেজিটেবল পার্ক, মহানন্দা অ্যাকশন প্ল্যান-সহ বিভিন্ন প্রকল্পের পরিস্থিতি নিয়ে অফিসারদের সঙ্গে কথা বলেছেন গৌতমবাবু।
বিভিন্ন প্রকল্পের নিবার্চনী বিধির জন্য টেন্ডার বা ওয়ার্ক অর্ডার করা যাবে না, সেগুলি আলাদা করে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। এসজেডিএ থেকে তিনি সোজা উত্তরকন্যায় গিয়ে নিজের ঘরে বসে অফিসারদের সঙ্গে কথা বলে কলকাতার বিমান ধরতে রওনা দেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy