Advertisement
E-Paper

বেল্টের আড়ালে সোনা পাচারের চেষ্টা, গ্রেফতার

কোমরের বেল্টে পকেট তৈরি করে তাতে সোনার বিস্কুট ভরে পাচারের চেষ্টার অভিযোগে শিলিগুড়ির এক সোনার দোকানের মালিককে গ্রেফতার করেছে। রবিবার রাতে শিলিগুড়ির বর্ধমান রোডের মহানন্দা মোড় থেকে প্রায় ন’কেজি বিদেশি সোনা-সহ ওই ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেন কেন্দ্রীয় রাজস্ব গোয়েন্দারা। কোমরের বেল্টে সাতটি পকেটে সাতটি বিস্কুট ছিল। তার প্রতিটির ওজন এক কেজি করে। সঙ্গে থাকা হাতব্যাগে আরও দু’কেজি সোনার টুকরো ভরে নিয়ে আসে ওই ব্যক্তি।

সংগ্রাম সিংহ রায়

শেষ আপডেট: ১৮ অগস্ট ২০১৫ ০৩:০৯

কোমরের বেল্টে পকেট তৈরি করে তাতে সোনার বিস্কুট ভরে পাচারের চেষ্টার অভিযোগে শিলিগুড়ির এক সোনার দোকানের মালিককে গ্রেফতার করেছে।
রবিবার রাতে শিলিগুড়ির বর্ধমান রোডের মহানন্দা মোড় থেকে প্রায় ন’কেজি বিদেশি সোনা-সহ ওই ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেন কেন্দ্রীয় রাজস্ব গোয়েন্দারা। কোমরের বেল্টে সাতটি পকেটে সাতটি বিস্কুট ছিল। তার প্রতিটির ওজন এক কেজি করে। সঙ্গে থাকা হাতব্যাগে আরও দু’কেজি সোনার টুকরো ভরে নিয়ে আসে ওই ব্যক্তি। আগে থেকে পাওয়া খবরের ভিত্তিতে গোয়েন্দারা ওই এলাকায় তৈরি ছিলেন। আলিপুরদুয়ার-শিলিগুড়ি রুটের একটি বাসে করে শিলিগুড়ি এসে পৌঁছতেই তাকে গ্রেফতার করা হয়। সোমবার তাঁকে শিলিগুড়ি আদালতে পেশ করা হলে তার ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারক বলে জানান গোয়েন্দাদের আইনজীবী রতন বণিক।
রতনবাবু জানান, ধৃত ব্যাক্তির নাম ভরত সোনার। তাঁর বাড়ি শিলিগুড়িরই ইস্কন মন্দির রোড এলাকায়। সেখানে তার একটি সোনার দোকান রয়েছে। জেরায় সে জানিয়েছে, সে ওই সোনা, শহর ও বাইরের বেশ কিছু ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করার জন্য নিয়ে এসেছিল। এর আগেও সে একাধিকবার এমন সোনা কমদামে কিনে ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করেছে। গোয়েন্দারা তদন্তে জানতে পেরেছে, শিলিগুড়ি ছাড়াও কলকাতার বেশ কিছু ব্যবসায়ীও এই পাচারের সঙ্গে যুক্ত। তাদের খোঁজা হচ্ছে বলেও জানানো হয়েছে।
রবিবার ওই ব্যক্তি ভুটান সীমান্তের জয়গাঁ থেকে ওই সোনাগুলি নিয়ে শিলিগুড়িকে এসেছিলেন বলে জানা গিয়েছে। উদ্ধার হওয়া সোনার বাজার মূল্য ভারতীয় টাকায় প্রায় আড়াই কোটি টাকা বলে জানান গোয়েন্দাদের আইনজীবী। সোনার বিস্কুটের গায়ে সুইৎজারল্যান্ডের ছাপ রয়েছে। এই বিপুল পরিমাণ সোনাগুলো চিনে আনা হয়। সেখানে ভুটানের পারোতে নিয়ে যায় পাচারকারীরা। গোয়েন্দাদের ধারণা চিনে সোনার আমদানি শুল্ক কম হওয়ায় সেখানে আমদানি করে পরে ভারত সহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে পাচার করা হয়। ভুটান থেকে ভারতের সীমান্ত শহর জয়গাঁতে আনা হয় ওই সোনা। সেখান থেকে সোনা হাতবদল করে ধৃতের হেফাজতে আসে।

এমনকী যে পথে সোনা আনা হয়েছে, আন্তর্জাতিক সোনা চোরাচালানের ক্ষেত্রে তা নতুন বলে দাবি গোয়েন্দাদের। পুলিশ, গোয়েন্দা ও নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর নজর এড়াতেই নতুন ‘রুট’ বেছে নিয়েছে পাচারকারীরা বলে মনে করছে গোয়েন্দারা। গোয়েন্দাদের আইনজীবী বলেন, ‘‘এর আগে যতগুলি সোনা পাচারের ঘটনা সামনে এসেছে সেগুলো সবই মায়ানমার হয়ে উত্তর-পূর্ব ভারতের মণিপুর, অসম বা অরুণাচল প্রদেশ হয়ে ভারতে প্রবেশ করেছিল। তারপর অনেক সময়ে নেপাল হয়েও শিলিগুড়ি দিয়ে দেশের বাকি অংশে পাচার হচ্ছিল। কিন্তু চিন হয়ে ভুটান রুটে এই পাচারের ইতিহাস নেই।’’ তাঁর দাবি, পুরনো রাস্তায় নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। তাই পাচারের জন্য অপেক্ষাকৃত অরক্ষিত রুট খুঁজে নিয়েছে। গত এক বছরে প্রায় দেড় কুইন্টাল সোনা উদ্ধার করেছে কেন্দ্রীয় রাজস্ব গোয়েন্দারাই। গ্রেফতার হয়েছে ১৫ জন পাচারকারী। এ ছাড়া পুলিশ ও শুল্ক দফতরের হাতেও পাচারের অভিযোগে একাধিক ব্যক্তি ধরা পড়েছে।

ওই ব্যক্তির বাড়িতে গিয়ে এদিন দেখা গেল, তালাবন্ধ। বাড়ির সামনে লাগানো সিএস এন্টারপ্রাইজ নামে একটি বোর্ড। তাতে কর্ণধারের নামের জায়গায় ভরত সোনারের সঙ্গে ছেলে নীরজের নাম ও ফোন নম্বর লেখা। ভরতবাবুর মোবাইল বন্ধ। নীরজের সঙ্গে ওই নম্বরে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘‘বাবা রবিবার সকাল ৯ টা নাগাদ বাড়ি থেকে বেড়িয়েছিলেন কাউকে কিছু না জানিয়েই। রাতে বাড়ি ফেরেননি। মোবাইলও সুইচড অফ ছিল। এদিন সকালে জানতে পারি তাঁকে সোনা পাচারের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে।’’ বাড়ির কাছেই তাদের একটি প্রসাধনী সামগ্রীর দোকান রয়েছে। দোকানে কর্মচারী ছিলেন। তিনি জানেন না বাড়ির সকলে কোথায়। সকালে দোকান খুলেই কাজ আছে বলে বেড়িয়ে যান অভিযুক্তের বড় ছেলে সূরজ। আর তিনি কিছু জানেন না বলে জানান। ভরতবাবু গ্রেফতারের খবরও তাঁর জানা নেই বলেও জানিয়েছেন। তবে এক প্রতিবেশি জানান, এর আগেও কয়েকবার গ্রেফতার হয়েছে ভরত বলে শুনেছেন। তবে পাড়ায় সকলের সঙ্গে তেমনভাবে মেশেন না বলেও জানা গিয়েছে। তাই সঠিক কি কাজ করে তা জানা নেই অনেকেরই।

sangram sinha roy gold smuggling siliguri India
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy