সরকারি অতিথিনিবাসগুলিতে পরিষেবা নিয়ে অভিযোগ ভুরিভুরি। এ বার পেশাদারি পথে পা ফেলতে নতুন অতিথিনিবাসগুলি দেখভালের দায়িত্ব বেসরকারি সংস্থার হাতে তুলে দেবে রাজ্যের পর্যটন দফতর। পুজোর আগেই ডুয়ার্সে নতুন ১৭টি পর্যটন প্রকল্প চালু করতে চলেছে দফতর। তার মধ্যে আলিপুরদুয়ার, কোচবিহারে কয়েকটি উদ্যান, জলাশয় সৌন্দর্যকরণ ও সংস্কার সহ একাধিক কটেজ এবং অতিথিশালা রয়েছে। সবগুলি মিলে দু’শো জন পর্যটকের রাত্রিবাসের ব্যবস্থা হবে। এই কেন্দ্রগুলির কোনটিকেই সরকারি নিয়ন্ত্রণে রাখা হবে না বলে বুধবার সিদ্ধান্ত নিল পর্যটন দফতর।
এলাকার কোনও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন অথবা স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েত-পুরসভার মাধ্যমে বিজ্ঞাপন প্রকাশ করে ওই অতিথিশালার ভার ইচ্ছুক সংস্থার হাতে তুলে দেওয়া হবে। রাজ্যের পর্যটন মন্ত্রী গৌতম দেব বুধবার এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন। তাঁর দাবি, বেসরকারি হাতে দিলেও অতিথিনিবাসগুলি নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব নিজেদের হাতেই রাখছে দফতর। সংশ্লিষ্ট জেলাশাসকদের সঙ্গে পরিষেবা এবং রক্ষণাবেক্ষণের বিস্তারিত শর্ত দিয়ে চুক্তিপত্র তৈরি হবে। সরকারি খরচে তৈরি কেন্দ্রগুলির জন্য বছরে ২০ শতাংশ লভ্যাংশও নেবে দফতর।
এ বার থেকে নতুন কেন্দ্রগুলির ক্ষেত্রেই এই ‘মডেল’ অনুসরণ করবে দফতর। মন্ত্রী গৌতমবাবু বলেন, ‘‘পর্যটকদের আতিথেয়তায় যাতে পেশাদারি কায়দা অনুসরণ করা হয় তার জন্যই এই সিদ্ধান্ত। তার সঙ্গে স্থানীয় স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলিকেও সামিল করা হবে। যদি সেই এলাকায় কোনও যোগ্য স্বনির্ভর গোষ্ঠী থাকে, তবে তাদের হাতেই রান্নার দায়িত্ব দেওয়া যেতে পারে। সে সবই দেখে নেওয়া হবে।’’
বিভিন্ন জেলায় অতিথিনিবাস, কটেজ মিলিয়ে রাজ্যের পর্যটন দফতরের হাতে অন্তত ৯৫টি সম্পত্তি বা ভবন রয়েছে। রক্ষণাবেক্ষণ থেকে পরিষেবা সব নিয়েই অভিযোগ রয়েছে। কোথাও বিছানার চাদরে নোংরার পুরু আস্তরণ, কোথাও বা দেওয়ালের পলেস্তার খসে নোনা ধরেছে। ঘরে বাতানুকূল যন্ত্র থাকলে, কোথাও তা চলে না আবার চললে ঘড়ঘড় শব্দে ঘুমের দফারফা। অভিযোগ রয়েছে খাবারের মান নিয়েও। এমনই শতশত অভিযোগ থেকে মুক্তি পেতেই এ বারে বেসরকারি হাতে দেওয়ার সিদ্ধান্ত।
সেই সঙ্গে, শিলিগুড়িতে পর্যটন মন্ত্রীর অফিস যেখানে সেই মৈনাক পর্যটন আবাসের খাবারের দায়িত্ব বেসরকারি হাতে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। মৈনাকের খাওয়ার চেখে দেখে অসন্তুষ্ট হয়ে দ্রুত ওই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বুধবার মৈনাকেই ডুয়ার্সের মেগা ট্যুরিজম প্রকল্প নিয়ে মন্ত্রী বৈঠক করেছেন। দার্জিলিং, আলিপুরদুয়ার এবং কোচবিহারের জেলাশাসকরা ছাড়াও পর্যটন উন্নয়ন নিগমের ম্যানেজিং ডিরেক্টর সহ অন্য কর্তারা বৈঠকে ছিলেন। হাসিমারা, ময়নাগুড়ি, বাতাবাড়ি, চামুর্চি, মেটেলি, রামসাই, লাটাগুড়ির মধুবনী, মালবাজার, জঁয়গা সহ এই তিন জেলায় মোট ১৭টি প্রকল্পের উদ্বোধনের দিন ক্ষণ এ দিন স্থির হয়েছে। দিঘি, উদ্যান সংস্কার, নতুন উদ্যান তৈরি সব মিলে দফতরের খরচ হয়েছে প্রায় ২৫ কোটি টাকা।