Advertisement
১৮ মে ২০২৪

নগদ নেই, খুশি নেই বড়দিনেও

নোট বাতিলের জেরে এ বার মন্দা বড়দিনের কেকের বাজারেও। বরাত মিলছে না। তাই মাথায় হাত পড়েছে বেকারি মালিকদের। কারণ যাঁরা বরাত দেন সেই সমস্ত পাইকারি ও খুচরো কেক ব্যবসায়ীরা বিক্রি নিয়ে রীতিমতো আশঙ্কায়। উত্তরের সব জেলাতেই ছবিটা মোটের উপর এক।

পসরা সাজিয়ে বসে আছেন দোকানি। তবে খদ্দেরের দেখা নেই। শিলিগুড়িতে। — বিশ্বরূপ বসাক

পসরা সাজিয়ে বসে আছেন দোকানি। তবে খদ্দেরের দেখা নেই। শিলিগুড়িতে। — বিশ্বরূপ বসাক

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১৭ ডিসেম্বর ২০১৬ ০২:৩৬
Share: Save:

নোট বাতিলের জেরে এ বার মন্দা বড়দিনের কেকের বাজারেও।

বরাত মিলছে না। তাই মাথায় হাত পড়েছে বেকারি মালিকদের। কারণ যাঁরা বরাত দেন সেই সমস্ত পাইকারি ও খুচরো কেক ব্যবসায়ীরা বিক্রি নিয়ে রীতিমতো আশঙ্কায়। উত্তরের সব জেলাতেই ছবিটা মোটের উপর এক।

রায়গঞ্জে পাইকারি কেক ব্যবসায়ীদের অনেকেরই নিজস্ব বেকারি ও বড়মাপের ফাস্টফুডের দোকান রয়েছে। বড়দিনের মুখে তাঁরা যেমন খুচরো ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে বরাত নেন তেমনি খুচরো কেকও বিক্রি করেন বাসিন্দাদের। কিন্তু এ বছর খুচরো ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে বরাত না মেলায় কেক তৈরির কাজই শুরু করেননি এখনও।

রায়গঞ্জের নিউমার্কেট এলাকার একটি নামি বেকারির মালিক উত্তম সাহা বলেন, ‘‘নোট বাতিলের জেরে হাতে টাকা নেই। তাই বরাতও আসছে না। এরপর বরাত মিললেও সময়ের অভাবে ব্যবসায়ীদের কেক সরবরাহ করা প্রায় অসম্ভব। পরিস্থিতি যা বোঝা যাচ্ছে তাতে খুচরো বাজারেও এ বছর কেক বিক্রির সম্ভাবনা নেই।’’

রায়গঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় ৫২টি বেকারি থেকে পাইকারি ও খুচরো বাজারে কেক সরবরাহ হয়। বেকারি মালিকদের দাবি, প্রতি বছর ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে খুচরো ব্যবসায়ীরা কেকের বরাত দিয়ে দেন। ২০ ডিসেম্বরের মধ্যে তাঁদের দোকানে কেক সরবরাহের কাজও শেষ হয়ে যায়।

প্রতি বছর একেক জন বেকারির মালিক গড়ে ১৫ কুইন্ট্যাল করে কেক সরবরাহ করেন। একেকজন বেকারির মালিকের লাভ হয় সাড়ে ৭ থেকে ৯ হাজার টাকা। কিন্তু এ বছর ছবিটা একেবারেই অন্য।

উত্তমবাবু বলেন,‘‘ব্যবসায়ীরা পেটিএম, সোয়াইপ মেশিন বা মোবাইল ওয়ালেটের মাধ্যমে ক্যাশলেস প্রক্রিয়ায় বেচাকেনা চালু করতেই পারেন। কিন্তু ওই পদ্ধতিতে কোনও ব্যবসায়ীর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট হ্যাকিং হলে, তার দায় কে নেবে?’’

জলপাইগুড়ির বেকারিগুলিতেও এ বছর ৩০ শতাংশ কম কেক উৎপাদন করা হবে। কারণ গত মাসের আট তারিখের পর টাকার যোগান কমে যাওয়ায় বেকারি শিল্প মার খেয়েছে। বেকারি মালিকরা জানিয়েছেন, এ বছর অন্য বারের তুলনায় পাউরুটি, বিস্কুট এবং অন্যান্য সামগ্রীর চাহিদা ৪০ ভাগ কমে গিয়েছে। বেকারি মালিকদের মুখপাত্র শেখ জাহাঙ্গির বলেন, “ সমস্ত জিনিসের কমে গিয়েছে। তাই কেকের উৎপাদনও আমরা এবার কম করবো।”

জলপাইগুড়িতে বড় বেকারি তিনটি এবং ছোট বেকারির সংখ্যা পাঁচ। বড় বেকারিগুলি যন্ত্রচালিত। গত বছর প্রতিটি বড় বেকারিতে গড়ে ১ কুইন্ট্যাল কেক বড়দিনের আগে তৈরি হয়েছিল। ছোট, বড় বেকারি মিলিয়ে উৎপাদনের পরিমাণ প্রতি বছর ৭ কুইন্ট্যাল হয়। এ বছর এখনও পর্যন্ত যা পরিস্থিতি তাতে ৫ কুইন্ট্যালের বেশি কেক তৈরি হবেনা। কারণ খুচরো টাকা দিয়ে ক্রেতারা কতটা কেক নেবেন তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।

আলিপুরদুয়ার শহরের এক কেক বিক্রেতা অভিজিৎ দাস জানান, বড়দিন উপলক্ষ্যে এই সময় ফ্রুট কেক, চকোলেট কেক ও নানা স্বাদের ক্রীম কেকের চাহিদা তুঙ্গে থাকে। এ বার কিন্তু পরিস্থিতি সম্পূর্ণ অন্য। তিনি বলেন, ‘‘যাতে সোয়াইপ মেশিনে ক্রেতা দাম দিতে পারেন তাঁর ব্যবস্থা করা হচ্ছে। তবে কেকের বাজারে খুব একটা প্রভাব পড়বে বলে মনে হচ্ছে না।’’

কোচবিহারেও মার খাচ্ছে কেকের ব্যবসা। ফোসিনের সদস্য তথা দিনহাটা মহকুমা ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক রানা গোস্বামী দাবি করেন, বহু বেকারির বিক্রি নেমে গিয়েছে। আগে যে দিনে পাঁচ হাজার টাকার জিনিস বিক্রি করত। এখন এক হাজার টাকা বিক্রি করছে। তিনি বলেন, “অনেকেই ব্যবসা নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছেন। টাকা সমস্যায় বাজারে বিক্রি কমে গিয়েছে। স্বাভাবিক ভাবেই চাহিদা কমে গিয়েছে। এই অবস্থা কাটতে কতটা সময় লাগবে বুঝতে পাচ্ছি না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Christmas Demonetisation
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE