গরমের দুপুরে। নিজস্ব চিত্র।
তাপমাত্রায় কলকাতা-বাঁকুড়াকে টেক্কা দিচ্ছে শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়ি। গত কয়েকদিন ধরেই শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়ি সহ উত্তরবঙ্গের কয়েকটি জেলায় গরমের দাপাদাপি চলছে। চলতি মাসের প্রথম দিকে টানা বৃষ্টি চললেও, গত কয়েক দিন ধরে গরমের দাপটে দক্ষিণবঙ্গকে ছুঁয়ে ফেলেছে উত্তরবঙ্গ। কিছু ক্ষেত্রে তাপমাত্রা টেক্কাও দিচ্ছে। কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় কলকাতার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩২ ডিগ্রি, বাকুঁড়া এবং আসানসোলের তাপমাত্রা ৩৩ ডিগ্রির কাছাকাছি। অন্য দিকে, জলপাইগুড়ি শহরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৫ ডিগ্রি, স্বাভাবিকের থেকে অন্তত ৩ ডিগ্রি বেশি। কোচবিহারের তাপমাত্রা ছিল ৩৬ ডিগ্রি ছুঁইছুঁই। এ সময়ের স্বাভাবিক তাপমাত্রা থেকে অন্তত ৪ ডিগ্রি বেশি। রবিবার দুপুরে শিলিগুড়ি শহরের তাপমাত্রাও ৩৩ থেকে ৩৫ ডিগ্রির মধ্যে ঘোরাফেরা করেছে।
যদিও, উত্তরবঙ্গে বর্ষা ঢুকেছে সপ্তাহ দু’য়েক আগেই। আকাশে টুকরো টুকরো মেঘও আছে। কিন্তু বৃষ্টির দেখা নেই। তিন দিন ধরে দাবদাহ চলছে উত্তরবঙ্গ জুড়ে। কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে, জলপাইগুড়ি, শিলিগুড়ি, কোচবিহারের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা অন্তত ৪ ডিগ্রি বেশি রয়েছে। চলতি মাসের শুরুতেই টানা বৃষ্টি চলেছে উত্তরবঙ্গে। পাহাড় সমতলের বৃষ্টির জেরে তিস্তা, জলঢাকা, তোর্সা, রায়ডাক নদীর জল বেড়ে যায়। বিপদসামার উপর দিয়ে বইতে থাকায় টানা পাঁচ দিন ধরে জলপাইগুড়ি শহর লাগোয়া এলাকা থেকে বাংলাদেশ পর্যন্ত লাল সর্তকতা জারি ছিল। সপ্তাহখানেক পর থেকেই পরিস্থিতি পাল্টে যায়। বৃষ্টির পরিবর্তে শুরু হয়েছে গরমের দাপট। আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, কিছু দিন আগে নিম্নচাপের টানে বৃষ্টি শুরু হয়েছিল উত্তরবঙ্গে, সেই নিম্নচাপ সরে যাওয়াতেই বৃষ্টির দেখা মিলছে না। আকাশে ছেঁড়া ছেঁড়া মেঘ ভেসে বেড়ালেও নিম্নচাপের টান না থাকায় বৃষ্টি নেই। সে কারণে তাপমাত্রা ক্রমাগত বেড়েই চলছে।
উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল বিভাগের প্রধান সুবীর সরকার জানিয়েছেন, মে মাসের শেষের দিকে বঙ্গোপসাগরে একের পর এক নিম্নচাপ তৈরি হওয়ায়, সেই টানেই উত্তরবঙ্গে তড়িঘড়ি বর্ষা ঢুকে যায়। জুন মাসের প্রথম সপ্তাহের পরেই নিম্নচাপের টানে বর্ষা ঢুকেছে উত্তরবঙ্গে। তারপরে নিম্নচাপের প্রভাব না থাকলেও, বঙ্গোপসাগর থেকে ছুটে আসা জলীয় বাস্পের প্রভাবে বৃষ্টিও চলেছে। তবে গত কয়েকদিন ধরেই নিম্নচাপ বা জলীয় বাস্প কোনও কিছুরই দেখা নেই। তার জেরেই দাবদাহে পুড়ছে উত্তরবঙ্গ। রবিবার সকাল থেকেই শিলিগুজডি-জলপাইগুড়ির রাস্তায় তুলনামুলক কম ভিড় ছিল। রবিবার ছুটির দিন হওয়ায় চড়া রোদে দুপুরের পরে শিলিগুড়ির হিলকার্ট রোড, সেবক রোডের কিছু অংশ সুনসান হয়ে যায়। জলপাইগুড়ির দিনবাজার, ডিবিসি রোজ, স্টেশন রোডের চেহারাও ছিল একইরকম। জলপাইগুজডি-শিলিগুড়ির তুলনায় কোচবিহারের তাপমাত্রা ছিল আরও বেশি। কোচবিহারের রাস্তাতেও এ দিন যানবাহনের সংখ্যা কম ছিল।
সুবীরবাবুর কথা, ‘‘কোনও এলাকায় মৌসুমী বায়ু সক্রিয় হলে বৃষ্টিপাত হয়। উত্তরবঙ্গে এখন মৌসুমী বায়ু সক্রিয় নয়, সে কারণেই বৃষ্টি হচ্ছে না। বৃষ্টি না হওয়াতে পাল্লা দিয়ে গরম বেড়েছে। নিম্নচাপ তৈরি হলে ফের বৃষ্টি শুরু হবে। ইতিমধ্যে উত্তরবঙ্গের দিকে মেঘ আসতে শুরু করেছে।’’
সুবীরবাবুর মতোই আশার কথা শুনিয়েছে কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতরের বিশেষজ্ঞরাও। তাঁরা জানিয়েছেন, বঙ্গোপসাগর থেকে অল্প হলেও জলীয় বাস্প উত্তরবঙ্গের দিকে ঢুকতে শুরু করেছে। তার জেরে যে কোনও সময়ে বিক্ষিপ্ত ভাবে বৃষ্টি হতে পারে। তারপরে ফের দাবদাহ শুরু হওয়ারও আশঙ্কা রয়েছে। পাকাপাকি ভাবে নিম্নচাপ তৈরি না হলে টানা বৃষ্টি অথবা দাবদাহের থেকে মুক্তি সম্ভব নয়। কবে বৃষ্টি সেই স্বস্তি আনবে এখন উত্তরবঙ্গ সে অপেক্ষাতেই রয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy