Advertisement
E-Paper

ঝড়ে উড়ল বাড়ির চাল, ভাঙল গাছ

মঙ্গলবার রাতে প্রবল ঝড়ে জলপাইগুড়ি কোতোয়ালি থানার দু’টি গ্রামপঞ্চায়েত এলাকার প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। দুটি গ্রামপঞ্চায়েত হল নগর বেরুবাড়ি এবং দক্ষিন বেরুবাড়ি। খারিজা বেরুবাড়ির ২ নন্বর গ্রামপঞ্চায়েত এলাকার একটি এলাকাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দুটি গ্রামপঞ্চায়েত এলাকায় শতাধিক বাড়ি নষ্ট হয়েছে।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৯ মে ২০১৬ ০১:৫০
বট গাছ উল্টে পড়ে ভেঙে গিয়েছে অনেকগুলি দোকান। ছবি: রাজা বন্দ্যোপাধ্যায়।

বট গাছ উল্টে পড়ে ভেঙে গিয়েছে অনেকগুলি দোকান। ছবি: রাজা বন্দ্যোপাধ্যায়।

মঙ্গলবার রাতে প্রবল ঝড়ে জলপাইগুড়ি কোতোয়ালি থানার দু’টি গ্রামপঞ্চায়েত এলাকার প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। দুটি গ্রামপঞ্চায়েত হল নগর বেরুবাড়ি এবং দক্ষিন বেরুবাড়ি। খারিজা বেরুবাড়ির ২ নন্বর গ্রামপঞ্চায়েত এলাকার একটি এলাকাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দুটি গ্রামপঞ্চায়েত এলাকায় শতাধিক বাড়ি নষ্ট হয়েছে। স্কুল বাড়ির টিনের চাল উড়ে গেছে। অনেক বিদ্যুতের খুঁটি পড়ে গেছে। পাট এবং সব্জি খেত নষ্ট হয়ে গেছে। গোটা বেরুবাড়ি এলাকা নিস্প্রদীপ। পানীয় জল সরবরাহ বন্ধ। টিনের চাল চাপা পড়ে এক জন মহিলা গুরুতর আহত হয়েছেন। ঝড়ের হাত থেকে বাদ যায়নি বিএসএফ ক্যাম্প। বুধবার সকালে ঘুরে যান জলপাইগুড়ি সদরের বিডিও, বিধায়ক, সাংসদ এবং সদর ব্লকের পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি।

মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকেই বেরুবাড়ি এলাকায় বৃষ্টি হচ্ছিল। এলাকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন রাত সাড়ে আটটা নাগাদ আচমকা শোঁ শোঁ শব্দ করে ঝড় আসে। পাঁচ থেকে সাত মিনিট প্রবল ঝড় হয়। তারপর দেড়ঘন্টা ধরে জোরে হাওয়া বয়ে যায়। রাতে বোঝা যায়নি। সকালে দেখা যায় গাছ পড়ে নগর বেরুবাড়ির সাকাতি এলাকা এবং দক্ষিণ বেরুবাড়ি এলাকার অধিকাংশ রাস্তাঘাট বন্ধ।

প্রচুর বাড়ির টিনের চাল উড়ে গিয়েছে। জলপাইগুড়ি সদর ব্লকের বিডিওর দেওয়া পরিসংখ্যান অনুযায়ী কেবল নগর বেরুবাড়ি গ্রামপঞ্চায়েত এলাকায় ৭৫টি বাড়ি পুরোপুরি ভেঙে গেছে। ৩৯৪টি বাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

দক্ষিণ বেরুবাড়ি গ্রামপঞ্চায়েত এলাকায় ২০০টি বাড়ি পুরোপুরি ভেঙে গিয়েছে, ৭০০টি বাড়ির আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সাকাতির সিএস প্রাথমিক বিদ্যালয়ের টিনের চাল একটি অংশ থেকে উড়ে যায়। মিডডে মিল তৈরির ঘরের চালও উড়ে গেছে। বোনাপাড়া হাইস্কুলের মিডডে মিল তৈরির রান্না ঘরের চালও উড়ে যায়। ঘরের ওপর গাছ পড়ে বুড়ির জোত এলাকার একজন মহিলা গুরুতর আহত হন। তিনি এখন উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজে চিকিৎসাধীন আছেন। দুটি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় ১১টি গবাদি পশু মারা গেছে। সাতকুড়া এলাকার বিএসএফের দুটি ক্যাম্পের টিনের চাল উড়ে গেছে। দুটি গ্রামপঞ্চায়েত এলাকায় ১০০টির বেশি বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙেছে। গোটা বেরুবাড়ি এলাকা নিস্প্রদ্বীপ হয়ে আছে। বিদ্যুতের অভাবে পানীয় জল সরবরাহ বন্ধ আছে।

নগর বেরুবাড়ির ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামগুলি হল নেকিপাড়া, মালকানিপাড়া, রায়পাড়া, গিদলপাড়া, কুড়িপাড়া, হারুয়াডাঙা, ঝাকুয়াপাড়া, যোহগ্রাম, প্রধানপাড়া, অনুপম কলোনি, বন্ধুপাড়া এবং জয়পুর। দক্ষিণ বেরুবাড়ির ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামগুলি হল সাতকুড়া, বিন্নাগুড়ি, গৌরাঙ্গবাজার, বুড়িরজোত, ব্রামহনপাড়া, নলজোয়াপাড়া, মানিকগঞ্জ, গৌড়চন্ডি এবং দেওনিয়াপাড়া।

নগর বেরুবাড়ি গ্রামপঞ্চায়েতের সাকাতি এলাকার পঞ্চায়েত সদস্য অবনী রায় এবং দক্ষিণ বেরুবাড়ি গ্রামপঞ্চায়েতের প্রধান রীতা মালপাহাড়ি বলেন, “জলপাইগুড়ির সদর ব্লকের বিডিওর কাছে অবিলম্বে ত্রাণের ব্যবস্থা করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।” দক্ষিণ বেরুবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতর প্রাক্তন প্রধান সারদা প্রসাদ দাস বলেন, “ইতিমধ্যে পানীয় জলের সমস্যা দেখা দিয়েছে। অবিলম্বে বিদ্যুৎ সরবরাহর ব্যবস্থা না করলে পানীয় জল সরবরাহ হবে না। এলাকয় রোগ দেখা দেবে।” জলপাইগুড়ির বিডিও থেন্ডুপ ভুটিয়া বলেন, “আপাতত যাদের বাড়ি পুরোপুরি নষ্ট হয়েছে তাদের জন্য পলিথিন শিট পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। বাকি সমস্যাগুলির সমাধান করা হবে। কতটা কৃষিজমির পাট এবং সব্জি নষ্ট হয়েছে তার একটা হিসেব পাঠানোর জন্য কৃষি দফতরকে জানানো হয়েছে।”

এদিন সকালে বিডিওর সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা ঘুরে দেখেন সদর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি রাখী বর্মন। দুপুরে ঘুরে যান বিধায়ক সুখবিলাস বর্মা এবং সাংসদ বিজয় চন্দ্র বর্মন।

অন্যদিকে, মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টা থেকে প্রায় আধঘণ্টার ঝড়ে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে উত্তর দিনাজপুরের জনজীবন! রাত ১১টা নাগাদ রায়গঞ্জ, কালিয়াগঞ্জ, হেমতাবাদ, ইটাহার, করণদিঘি, ইসলামপুর, চোপড়া, গোয়ালপোখর ১ ও ২ ব্লকের বিভিন্ন এলাকায় বৃষ্টি শুরু হয়! সাড়ে ১১টা নাগাদ বৃষ্টি থামলেও তার কিছুক্ষণ পর থেকে রাতভর দফায় দফায় বৃষ্টি হয়! জেলার বিভিন্ন এলাকায় বাজ পড়লেও হতাহতের কোনও ঘটনা ঘটেনি! বুধবার দিনভর জেলায় আকাশ মেঘলা ছিল! অন্যান দিনের তুলনায় তাপমাত্রা কম থাকায় বাসিন্দারা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেন! ঝড় ও বৃষ্টির জেরে মঙ্গলবার রাত থেকে এদিন সকাল পর্যন্ত জেলাজুড়ে দফায় দফায় লোডশেডিং হয়! প্রশাসনিক সূত্রের খবর, ঝড় ও বৃষ্টির জেরে জেলায় তেমন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি! এদিন দুপুরে বিভিন্ন গ্রাম পঞ্চায়েতের মাধ্যমে প্রশাসনের কাছে কালিয়াগঞ্জ, গোয়ালপোখর ও চাকুলিয়ার বিভিন্ন এলাকা থেকে বেশকিছু কাঁচাবাড়ি ভেঙে পড়ার খবর এসেছে!

জেলাশাসক রণধীর কুমারের দাবি, ঝড় বৃষ্টিতে জেলায় তেমন কোনও ক্ষয়ক্ষতির খবর মেলেনি! কোথাও কাঁচাবাড়ি ভেঙে থাকলে ব্লক প্রশাসনের তরফে দুর্গতরা সরকারি নিয়মে ত্রাণ ও ভবিষ্যতে আর্থিক সাহায্য পাবেন!

Thunder and lightening Storm
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy