ছাত্র-ছাত্রীদের পড়িয়ে বাড়তি প্রাপ্য চাইব কেন, এই প্রশ্ন তুলে হলফনামায় সই করতে অস্বীকার করেছেন কয়েকজন শিক্ষক। তার জেরেই প্রায় তিন বছর ধরে আটকে রয়েছে শিলিগুড়ির হায়দারপাড়া বুদ্ধ ভারতী হাইস্কুলের উচ্চ মাধ্যমিকের অনুমোদন।
কোনও স্কুলকে উচ্চ মাধ্যমিকে উন্নীত করার শর্ত হিসেবে, বর্তমান শিক্ষকদের একটি হলফনামা জমা দিতে হয়। সেই হলফনামায় লিখতে হয়, উচ্চ মাধ্যমিকের পড়ুয়াদের পড়ানোর জন্য তাঁরা কোনও অতিরিক্ত অর্থ দাবি করবেন না। হায়দারপাড়ার শিক্ষকদের কয়েকজনের দাবি, ছাত্র-ছাত্রীদের পড়াশোনা করানোই তাঁদের কাজ। সে কাজের জন্য কেন অতিরিক্ত পাওনা দাবি করবেন প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা। অভিযোগ করেছেন, এই হলফনামা অত্যন্ত অসম্মানজনক, সে কারণে তাঁদের পক্ষে সই করা
সম্ভব নয়।
এ দিকে, শিক্ষকদের হলফনামা ছাড়া উচ্চ মাধ্যমিকের অনুমোদন দেওয়াও সম্ভব নয় বলে কাউন্সিল জানিয়ে দিয়েছে। এই টানাপড়েনেই প্রায় চার বছর ধরে আটকে রয়েছে স্কুলের উচ্চ মাধ্যমিকে উন্নীত হওয়ার অনুমোদন। টানাপড়েনে ভুগতে হচ্ছে পড়ুয়াদেরও। মাধ্যমিকের পর উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তি নিয়ে ফি বছর সমস্যা হয় শিলিগুড়ি মহকুমায়। বছর চারেক আগে শিলিগুড়ি মহকুমা শাসকের দফতরে ভর্তি সংক্রান্ত সমস্যা সমাধানের জন্য ডাকা বৈঠকে হায়দারপাড়া স্কুলকে দ্রুত উচ্চমাধ্যমিক স্তরে উন্নীত করার প্রক্রিয়া শুরু করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। সে নির্দেশ রূপায়ণও আটকে রয়েছে শিক্ষকদের তোলা অসম্মানের প্রশ্নে।
নামের সঙ্গে হাইস্কুল শব্দটি জোড়া থাকলেও, বুদ্ধভারতী উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল নয়।
স্কুলকে উচ্চমাধ্যমিক স্তরে উন্নীত করতে ২০১০ সাল থেকে কয়েক দফায় পরিদর্শন হয়েছে। পরিকাঠামোল সংক্রান্ত নানা মাপকাঠি এই স্কুল পূরণ করেছে বলে জেলা স্কুল শিক্ষা দফতর থেকে উচ্চ মাধ্যমিক কাউন্সিলে রিপোর্টও পাঠিয়েছে। সমস্যা তৈরি হয়েছে শুধুমাত্র একটি হলফনামা জমা দেওয়া নিয়ে। শেষবার স্কুলে পরিদর্শন হয়েছিল ২০১৪ সালে। সে সময় স্কুল থেকে যাবতীয় রিপোর্ট সংগ্রহ করেছিল পরিদর্শনকারী দলটি। সেই দলে ছিলেন জলপাইগুড়ি জেলার সহকারী স্কুল পরিদর্শক বিমল রায়। বর্তমানে তিনি দক্ষিণ দিনাজপুর জেলায় রয়েছেন। এ দিন তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘‘সমস্যার কথা জানি। স্কুলে পরিকাঠামোগত কোনও সমস্যা নেই। শুধুমাত্র শিক্ষকদের একটি হলফনামা জমা দেওয়া বাকি। নিয়মানুযায়ী সেই হলফনামা জমা দিতে হয়।’’
নিয়ম অনুযায়ী, কোনও মাধ্যমিক স্কুলকে উচ্চ মাধ্যমিকে উত্তীর্ণ হলে অতিরিক্ত শিক্ষক, কর্মী, গ্রন্থাগারিক পদও অনুমোদন হয়। যতদিন না বাড়তি শিক্ষক পাওয়া যায়, ততদিন একাদশ এবং দ্বাদশ শ্রেণির ক্লাস নেওয়ার জন্য পুরোনো শিক্ষকরা বাড়তি আর্থিক সুবিধে চাইবে না বলে হলফনামা দিতে হয়। এখানেই আপত্তি বুদ্ধভারতী স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের একাংশের। এক শিক্ষকের প্রশ্ন, ‘‘আমরা সরকারে বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করছি না। কিন্তু এটা কী আমাদের পক্ষে অসম্মানজনক নয়? ছাড়দের পড়ানোই তো আমাদের কাজ, তার জন্য অতিরিক্ত টাকা চাইব কেন?’’ এক শিক্ষিকা দাবি করেন, ‘‘শিক্ষকতা কিন্তু আর পাঁচটা পেশার থেকে আলাদা। এই হলফানামা সই করানোর নিয়ম কিন্তু শিক্ষকদের অপমান করা।’’
ঘটনা হল, বছর কয়েক আগে কয়েকজন শিক্ষক সইও করেছিলেন। তারপরে অন্য কয়েকজন আপত্তি করায় কেউ হলফনামা জমা দেননি। স্কুলের প্রধান শিক্ষক স্বপনেন্দু নন্দী বলেন, ‘‘যাবতীয় পরিকাঠামো রয়েছে। শিক্ষকদের হলফনামা দেওয়া বাকি। আমার আর্জি পড়ুয়াদের স্বার্থেই উচ্চ মাধ্যমিকে পড়াশোনার দ্রুত অনুমোদন দেওয়া হোক।’’
এ বছর স্কুলে মাধ্যমিকে পাশের হার ৯৭ শতাংশ। ১১৮ জন পড়ুয়া পাশ করেছেন। তাদের অনেকেই এখনও অন্য কোনও স্কুলে ভর্তি হতে পারেনি। ভর্তির সমস্যা রয়েছে আশেপাশের অনেক স্কুলেও। স্কুলের পরিচালন সমিতির সভাপতি হারাধান সাহা বলেন, ‘‘শিক্ষকদের হলফনামা দিতেই হবে এমন নিয়ম বাধ্যতামূলক নয় বলেই শুনেছি। শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার চেষ্টা করছি। আশা করছি দ্রুত সমাধান হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy