Advertisement
E-Paper

ফুলছে নদী, ভাঙছে সাঁকো, বৃষ্টিতে বাড়ছে রোগের প্রকোপ

আবার এসেছে আষাঢ়। আবার অঝোরে বৃষ্টি শুরু হয়েছে সিকিম, দার্জিলিঙের বিস্তীর্ণ এলাকায়। প্রতিবেশী দেশ ভুটানও বর্ষণ মুখর। পাহাড়ের ঢাল বেয়ে সেই জলস্রোত নেমে আসছে উত্তরের সমতলে।

কিশোর সাহা

শেষ আপডেট: ১৭ জুন ২০১৬ ০৮:৩৬

আবার এসেছে আষাঢ়। আবার অঝোরে বৃষ্টি শুরু হয়েছে সিকিম, দার্জিলিঙের বিস্তীর্ণ এলাকায়। প্রতিবেশী দেশ ভুটানও বর্ষণ মুখর। পাহাড়ের ঢাল বেয়ে সেই জলস্রোত নেমে আসছে উত্তরের সমতলে। কোথাও রায়ডাক ফুলেফেঁপে উড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে বাঁশের সাঁকো। কোথাও তোর্সাও ভয়ঙ্করী হয়ে ভাসিয়ে দিয়েছে সেতু।

খাস শিলিগুড়িতেও মহানন্দার জল অনেকটা বেড়ে যাওয়ায় নির্মীয়মাণ পঞ্চম সেতুর নীচে থাকা বাঁশের সেতুটি উড়িয়ে ভাসিয়ে নিয়ে গিয়েছে। আলিপুরদুয়ার থেকে কোচবিহার, জলপাইগুড়ি থেকে মালবাজার, অন্তত ১৫টি পুরানো কালভার্ট এখন বিপজ্জনক হয়ে পড়েছে। অনেক এলাকা জলময়। কিন্তু, সে সব জায়গায় নিরাপদ পানীয় জলের বড়ই অভাব দেখা দিয়েছে। তাতে বাড়ছে নানা রোগের প্রকোপও।

সে খবর পৌঁছেছে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরেও। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ নির্দেশ দিয়েছেন, যে সব এলাকায় সাঁকো ভেঙে গিয়েছে, সেখানে ঘুরপথে যাতায়াতের ব্যবস্থা করবে জেলা প্রশাসন। কোথাও নৌকা নামানোর নির্দেশও দিয়েছেন। মন্ত্রী বলেন, ‘‘এ বার ভারী বর্ষার আভাস মিলছে। তাই বাড়তি সতর্কতা নিতে জেলাশাসকদের বলা হয়েছে।’’

উত্তরে এ বার জমাটি বর্ষণের আভাস দিয়েছে আবহাওয়া অফিস। একই কথা জানিয়েছেন উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল বিভাগের অধ্যাপক রঞ্জন রায়ও। তিনি জানাচ্ছেন, মৌসুমী বায়ু এখন হিমালয় সংলগ্ন উত্তরবঙ্গ ও সিকিমে সক্রিয়। ফলে, আগামী কয়েক দিন সিকিম ছাড়াও আলিপুরদুয়ার, কোচবিহার, জলপাইগুড়ি ও দার্জিলিং জেলায় জোরদার বৃষ্টির সম্ভাবনা। তাতেই নিচু এলাকা জলে ভেসে যাওয়ার আশঙ্কা— বলছে সেচ দফতরও।

ফলে, বৃহস্পতিবারও কলকাতা থেকে দফায় দফায় কোচবিহার, জলপাইগুড়ি, শিলিগুড়ির পরিস্থিতি নিয়ে খোঁজখবর নিয়েছেন সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। মন্ত্রী বলেন, ‘‘আমরা কয়েকটি এলাকায় বাঁধের দিকে ২৪ ঘণ্টা নজরদারি করার ব্যবস্থা করেছি।

উদ্বেগ বেড়েছে স্বাস্থ্য দফতরেও। কারণ, জলের হাত ধরেই হাজির হচ্ছে নানা রোগের আশঙ্কা। মালদহ, রায়গঞ্জ, হলদিবাড়ি-সহ বেশ কয়েকটি এলাকায় পেটের রোগের প্রকোপ বাড়তে শুরু করেছে। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজেও ডায়েরিয়া-সহ নানা পেটের রোগে আক্রান্তের সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে। বর্ষার জমা জল মশার বংশবিস্তারের আদর্শ বলে ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়ার প্রকোপ ফের দেখা দেবে কি না, তা নিয়েও দুশ্চিন্তায় রয়েছে স্বাস্থ্য দফতর। ইতিমধ্যেই সাতটি জেলা হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির বৈঠকে বর্ষাকালীন রোগ প্রতিরোধের জন্য বিশেষ টিম তৈরির সিদ্ধান্ত হয়েছে। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকদের কয়েক জন জানান, বর্ষায় চারদিক জলমগ্ন হয়ে গেলেও গ্রামাঞ্চলের অনেক জায়গায় নিরাপদ পানীয় জলের আকাল দেখা যায়। তাই পেটের রোগ হু হু করে বাড়ে।

উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালের সুপার নির্মল বেরার কথায়, ‘‘বর্ষার এই মরসুমে ফ্লু বা ভাইরাল জ্বরের প্রকোপও খুব বেশি। জল বাহিত রোগ তো রয়েইছে। সে জন্য যেখানে সেখানে জল না খেতে বলা হয়।’’ তাঁর কথায়, ‘‘জ্বরে আক্রান্ত রোগীদের বেশি কাছে না ঘেঁষাই উচিত। তাতে সংক্রমণ আটকানো যায়। ঠান্ডা-গরমে আরও সাবধান হতে হবে। ভাইরাল জ্বর যদি সহজে না কমে বা বেশি দিন ধরে চলে, তা হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।’’

এ ছাড়া বর্ষার জল জমে মশার উপদ্রব বেশি হয়। বেশি মাত্রায় বৃষ্টি হলে মশার লার্ভা ধুয়ে যায়। কিন্তু হালকা বৃষ্টি, তার পর গরম মশার বংশ বিস্তারে আদর্শ। তাই মশা বাহিত ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গি, অ্যাকিউট এনসেফ্যালাইটিস সিনড্রমের আশঙ্কা রয়েই যায় বর্ষার সময়। গত কয়েক বছর ধরে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় এইএসে অনেক রোগী আক্রান্ত হয়েছেন। খেতে যারা কাজ করতে যান, তাঁদের ক্ষেত্রে আশঙ্কা আরও বেশি। কারণ, খেতে মশার কামড়ের সম্ভাবনা বেশি থাকে। এ সব ক্ষেত্রে আগে থেকে সাবধান হওয়া উচিত। এখন যে সমস্ত প্রতিষেধক দেওয়া হচ্ছে তা না নেওয়া থাকলে নিতে হবে।

পেটের রোগ শুধু নয়, শহরেও ইদানীং বর্ষায় বেহাল নিকাশির কারণে চর্মরোগের প্রকোপ বেড়ে গিয়েছে বলে হাসপাতাল সূত্রের খবর। শিলিগুড়ি, জলপাইগুড়ির অনেক এলাকায় নিকাশি নালার জল রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। সেই জলকাদা মাড়িয়ে যাতায়াত করতে গিয়ে ছাত্রছাত্রীরা নানা সংক্রমণের শিকার হচ্ছে বলে হাসপাতাল সূত্রেই জানা গিয়েছে।

শিলিগুড়ির উপকণ্ঠে পতিরামজোতের কথাই ধরা যাক। সেখানে শিলিগুড়ি থেকে সহজে যাতায়াতের জন্য একটি সেতু প্রায় তৈরি হয়ে গিয়েছে। কিন্তু, ‘আপ্রোচ রোড’-এর জন্য সেতুর উদ্বোধন করতে পারেনি প্রশাসন। ফলে, বাঁশের সাঁকো দিয়ে যাতায়াত করছিলেন বাসিন্দারা। মহানন্দার জল বাড়ায় সেই সাঁকো নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছে। এখন মাটিগাড়ার পতিরাম থেকে তাড়াতাড়ি শিলিগুড়ি শহরে যাতায়াতের জন্য নৌকাই ভরসা। বিনয় দাস, সুপ্তি বর্মনের মতো ছাত্রছাত্রীরা রোজই ওই নৌকায় করে শিলিগুড়িতে যাতায়াত করে। সুপ্তি বলে, ‘‘সেতুটা চালু হলে সমস্যা থাকত না। এখন জলকাদা পেরিয়ে যাতায়াত করতে গিয়ে অনেক সমস্যা হচ্ছে। জল বেশি বাড়লে তো নৌকায় চলাফেরা করাও মুশকিল হয়ে যাবে। তখন ঘুরপথে যাতায়াত করতে হবে।’’

rainy season disease
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy