গঙ্গারামপুর সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল ভবন। — অমিত মোহান্ত
ঝাঁ চকচকে নীল সাদা রঙের ১০ তলা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল ভবন মাথা উঁচু করে দেখতে ঘাড় ব্যথা হয়ে যায়। গঙ্গারামপুর সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালও বাইরে থেকে সমান ঝাঁ চকচকে। কিন্তু ভিতরে ঢুকলে দেখা যায়, কোনও রোগীকে ভর্তি করিয়ে চিকিৎসা করার ব্যবস্থাই নেই। আদতে গঙ্গারামপুরের ওই সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের সাধারণ স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চেয়েও খারাপ অবস্থা।
দক্ষিণ দিনাজপুরের এই দু’টি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল গত ২৬ ফেব্রুয়ারি কলকাতার ক্ষুদিরাম অনুশীলন মঞ্চ থেকে উদ্বোধন করে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু দু’টি ক্ষেত্রেই এখনও ভবনের ভিতরের নির্মাণ কাজই শেষ করা যায়নি। ওয়ার্ড তৈরি থেকে রং-প্লাস্টার-বিদ্যুদয়নের কাজ এখনও চলেছে বালুরঘাট এবং গঙ্গারামপুর সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে।
এ দিন গঙ্গারামপুর ও বালুরঘাটে নির্মীয়মাণ ওই স্পেশালিটি হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, আপাতত একতলা ও দোতলায় শিশু এবং শল্য বহির্বিভাগ চালু করে রোগীর চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। যে সংস্থা নির্মাণের কাজ করছে, তাদের প্রোজেক্ট ম্যানেজার নির্মলকুমার সাহা বলেন, ‘‘এসএনসিইউ, ব্লাড ব্যাঙ্ক সহ বেশ কিছু বিভাগের নকশায় পরিবর্তন হওয়ায় নতুন করে ইন্ডোর বিভাগে কনস্ট্রাকশনের কাজ চলছে।’’ মাস চারেকের মধ্যে ওই সমস্ত কাজ শেষ হয়ে যাবে বলে নির্মলবাবু দাবি করেন।
বালুরঘাট জেলা হাসপাতাল ভবন চত্বরের পিছনে সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের ১০ তলা ভবনের মধ্যে ৪ তলা এবং গঙ্গারামপুর মহকুমা হাসপাতাল চত্বরে ৫ তলা ভবনের মধ্যে দু’টি তলার অন্তর্বিভাগ তৈরি হয়েছে। আপাতত দু’টি তলাতে শুধু বহির্বিভাগের চিকিৎসা পরিষেবার ব্যবস্থা চালু হয়েছে।
জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, জেলা হাসপাতালের বহির্বিভাগে চালু-চিকিৎসা পরিষেবার ইউনিটগুলিকে ভাগ করে তার কিছু ওই সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের ভবনে উঠিয়ে নিয়ে গিয়ে বহির্বিভাগে রোগী দেখার ব্যবস্থা হয়েছে।
দক্ষিণ দিনাজপুরের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সুকুমার দে জানান, আপাতত বহির্বিভাগ পরিষেবার মধ্যে দিয়ে সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল চালু হয়েছে। যেমন বালুরঘাট জেলা হাসপাতালের পুরনো ভবনের বহির্বিভাগের বদলে সুপার স্পেশালিটির নতুন ভবনের বহির্বিভাগে মা ও শিশু, অস্থি ও সার্জারি বিভাগগুলির চিকিৎসা হচ্ছে। নাক, কান, গলা, দাঁত, মানসিক রোগ, চর্মরোগের বিভাগ পুরনো হাসপাতালের বহির্বিভাগে যেমন হচ্ছিল, তেমনই চলছে। গঙ্গারামপুরেও পুরনো মহকুমা হাসপাতাল ভবনের বহির্বিভাগে মা ও শিশু বিভাগ রেখে বাকি বিভাগগুলির বহির্বিভাগের চিকিৎসা নতুন সুপার স্পেশালিটি ভবনে হচ্ছে। মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের বক্তব্য, আগামী ৪-৫ মাসের মধ্যে নিকটবর্তী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের দিয়ে বালুরঘাট এবং গঙ্গারামপুরে সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের অন্তর্বিভাগ চালু করা হবে।
বালুরঘাটে সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল তৈরির জন্য ১০২ কোটি এবং গঙ্গারামপুরে সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল গড়তে ৫৪ কোটি টাকা বরাদ্দ করে গত ২০১৪ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি নির্মাণ কাজ শুরু হয়। এখনও পর্যন্ত যে টুকু কাজ হয়েছে, তাতেই ভোটের মুখে মুখ্যমন্ত্রী উদ্বোধন সেরে ফেলেন। জেলা তৃণমূল সভাপতি শঙ্কর চক্রবর্তী বলেন, ‘‘বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অভাব বড় সমস্যা। তা মেটানোর চেষ্টা হচ্ছে। ধাপে ধাপে পরিকাঠামো ও চিকিৎসকের অভাব মিটিয়ে পুরো দস্তুর সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের চিকিৎসা পরিষেবা চালু করতে কিছু সময় তো লাগবেই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy