জলপাইগুড়ি শহরের পরিচয় সিংহদুয়ার। ছবি: সন্দীপ পাল।
শত আঘাতেও বেঁচে থাকে শহরের স্পিরিট
আটষট্টির বন্যার পরে অনেকেই ভেবেছিলেন, শহর বুঝি অন্যত্র সরাতে হবে। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল, বন্যার বিশাল ক্ষয়ক্ষতির মধ্যেই ফের মাথা তুলে দাঁড়াচ্ছে জলপাইগুড়ি শহর। এটাই আমার জলপাইগুড়ি শহরের ‘স্পিরিট’। শত আঘাত-বঞ্চনাতেও যে ‘স্পিরিট’ ক্ষুণ্ণ হয় না। পত্রিকার ‘আমার শহর’ বিভাগে পাঠকদের মতামত প্রকাশের সুযোগ দেওয়ার জন্য সম্পাদক মহাশয়কে ধন্যবাদ। এই সুযোগে জলপাইগুড়ি নিয়ে আমার কিছু উপলব্ধি তুলে ধরছি।
অবিভক্ত বাংলার রাজশাহী ডিভশনের বিভাগীয় সদর জলপাইগুড়ির পরিচয় ছিল চায়ের রাজধানী হিসেবে। চা উত্পাদন এবং বিভিন্ন চা কোম্পানির সদর দফতর থাকায় সারা দেশেই চায়ের জন্য জলপাইগুড়িকে চিনে নিয়েছিল। চা ছাড়াও কাঠ এূবং তামাকের জন্য জলপাইগুড়ির খ্যাতি ছিল। যদিও, পরবর্তীতে পরিবেশ এবং স্বাস্থ্য নানা কারণে কাঠ এবং তামাক শিল্প ততটা দড় নয়। আমাদের শহরের পুরসভাও উত্তরবঙ্গের অন্যতম পুরোনো। গোড়াপত্তনের সঙ্গেই আভিজাত্য এবং বনেদিয়ানা শহরের নাগরিরক জীবনে গাঁথা হয়ে যায়। খেলা এবং সংস্কৃতি চর্চাতেও শহরের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে।
সময়ের সঙ্গে শহরের ভিতরে বাইরে নানা পরিবর্তন এসেছে। তবে, শহরের জনসংখ্যা এবং যানবাহনের সংখ্যা যে হারে বেড়েছে, তার সঙ্গে পাল্লা দিতে পারেনি শহরের রাস্তাগুলি। প্রয়োজনীয় প্রশস্ততা না থাকায় শহরের গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাগুলিতে যানজট নিত্যসঙ্গী। পরিকল্পিত পার্কিং ব্যবস্থার অভাবে পথচারীদেরও দুর্ভোগে পড়তে হয়। ব্যস্ত সময়ে কিছু রাস্তায় এমন জট তৈরি হয়ে পড়ে যে, রিকশা-গাড়িও এগোতে পারে না, হাঁটাপথও অবরূদ্ধ হয়ে থাকে। শহরের গতিটাই যেন থমকে গিয়েছে বলে মনে হয়। তবে শুনেছি কিছু এলাকায় পার্কিঙের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ বিষয়ে আরও পরিকল্পনা করে এগোলে ভাল হয়।
পরিকল্পতি উদ্যোগ চোখে পড়ছে শহরের বিভিন্ন নর্দমা সংস্কারে। বর্তমানে শহরের বিভিন্ন এলাকায় একসঙ্গে নর্দমা সংস্কার এবং তৈরির কাজ চলছে। বড় আকারের নর্দমাও তৈরি হতে দেখছি। তবে করলা নদীর নাব্যতা ফেরানো এবং বিশেষত শহরের পান্ডাপাড়া এলাকার জলবদ্ধতা সমস্যার সমাধান দ্রুত প্রয়োজনীয় বলে আমার ধারণা। কয়েকটি রাস্তার আধুনিকীকরণ এবং উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন আলো বসানোর কাজও হয়েছে। এই কাজগুলি আরও এগিয়ে চলুক তাই চাই।
আরও একটি বিষয়ের উল্লেখ্য করতেই হবে। তা হল ইন্ডোর স্টেডিয়াম। জলপাইগুড়ি স্পোর্টস ভিলেজে যে ইন্ডোর স্টেডিয়াম তৈরি হয়েছে তা শুধু ক্রীড়াপ্রেমীদের কাছে কেন, সর্বস্তরের শহরবাসীর কাছে গর্ব। এর রক্ষণাবেক্ষণে কোনও খামতি হবে না বলেই আশা করছি। শহরবাসী অনেক আন্দোলন করে স্পোর্টস কমপ্লেক্স আদায় করেছিল। কিন্তু অর্ধনির্মিত স্টেডিয়াম শেষ করার কাজ এখনও শুরু হল না। মাঠটিও খেলার যোগ্য নেই। তবে শুনেছি, মাঠ এবং স্টেডিয়ামের কাজ শুরুর প্রক্রিয়া চলছে। এই স্টেডিয়াম ঘিরে যে স্বপ্ন আমরা দেখেছিলাম তা কবে পূরণ হবে তা জানা নেই। শহরের প্রবীণ ক্রীড়াপ্রেমীরা কী এই স্টেডিয়ামে বসে খেলা দেখার সুযোগ পাবেন, এই প্রশ্ন মাঝেমধ্যে আমাদের তাড়িয়ে বেড়ায়।
সম্প্রতি জেলা ভাগ হওয়ার পরে শহরের গুরুত্বও কিছুটা হলেও কমেছে। বাইরে থেকে আগে যত মানুষ শহরে আসতেন, তাতেও ভাটার টান। তবে একটা কথা মনে রাখা দরকার, আক্ষেপ করে লাভ নেই। যা আছে তাকে সম্বল করে যদি ধাপে ধাপে সমস্যার সমাধান করতে পারি সেটাই প্রাপ্তি। সেটাই জলপাইগুড়ির ‘স্পিরিট’।
সন্টু চট্টোপাধ্যায়। বাবু পাড়া। জলপাইগুড়ি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy