Advertisement
১১ মে ২০২৪

ধসে ব্যাহত জনজীবন

গত ২৪ ঘণ্টায় পাহাড় এবং লাগোয়া সমতলে বৃষ্টিতে জনজীবন অনেকটাই বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। উত্তরবঙ্গ লাগোয়া রাজ্য সিকিমেরও একই দশা। দার্জিলিং পাহাড়ে টানা বৃষ্টির জেরে জনজীবন অনেকটাই বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। শনিবার গভীর রাতে দার্জিলিং থেকে ৯ কিলোমিটার দূরের জোরবাংলো এলাকায় ধসে মাটি, পাথর চাপা পড়ে মাঝবয়সী এক মহিলার মৃত্যু হয়েছে।

রবিবার দার্জিলিঙের ঘুমে ধস।

রবিবার দার্জিলিঙের ঘুমে ধস।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৯ জুন ২০১৫ ০১:৪৮
Share: Save:

গত ২৪ ঘণ্টায় পাহাড় এবং লাগোয়া সমতলে বৃষ্টিতে জনজীবন অনেকটাই বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। উত্তরবঙ্গ লাগোয়া রাজ্য সিকিমেরও একই দশা। দার্জিলিং পাহাড়ে টানা বৃষ্টির জেরে জনজীবন অনেকটাই বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। শনিবার গভীর রাতে দার্জিলিং থেকে ৯ কিলোমিটার দূরের জোরবাংলো এলাকায় ধসে মাটি, পাথর চাপা পড়ে মাঝবয়সী এক মহিলার মৃত্যু হয়েছে।

পুলিশ সূত্রের খবর, মৃতার নাম ফুপু ডোমা শেরপা (৪০)। রাতে টিনের বাড়িতে তিনি একাই ছিলেন। ঘুমের মধ্যেই পাশের পাহাড় থেকে পাথর, কাদামাটি-সহ ধস পড়ে বাড়িটির একটি অংশ চাপা পড়ায় তিনি ঘটনাস্থলেই মারা যান। দার্জিলিঙের জেলাশাসক অনুরাগ শ্রীবাস্তব বলেন, ‘‘ওই মহিলা বাড়িতে একাই ছিলেন বলে জানা গিয়েছে। গভীর রাতেই ঘটনাটি ঘটে। রবিবার সকালে ধস সরিয়ে দেহটি উদ্ধার হয়েছে।’’ অন্য দিকে, সিকিমে ঢোকার মুখে রংপো এলাকায় ধস নেমে জাতীয় সড়ক পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গিয়েছে। আটকে রয়েছে প্রচুর গাড়ি।

এলাকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন, পাশেই এক আত্মীয়র বাড়ি থেকে খাবার খেয়ে ওই মহিলা প্রতিদিনই রাতে নিজের বাড়ি ফিরে আসতেন। স্থানীয় বাসিন্দা রাজেশ জোশি জানান, সন্ধ্যা থেকেই তুমুল বৃষ্টি হচ্ছিল। এতে বাইরে লোকজনও কম ছিল। রাতে ঘটনাটি ঘটলেও বৃষ্টির আওয়াজে কেউ কিছু টের পায়নি। সকালে কয়েকজন ধসে চাপা পড়া বাড়িটি দেখেই চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করেন। ততক্ষণ মহিলা মারা গিয়েছিলেন।

শনিবার থেকে পাহাড়ের তিন মহকুমার জোর বৃষ্টি শুরু হয়েছে। এদিন সকালে দার্জিলিঙে বৃষ্টি থামলেও কালিম্পং মহকুমায় বৃষ্টি চলছেই। রাত থেকে ৩১-এ জাতীয় সড়কটি শ্বেতীঝোড়ায় ফের ধসে নেমে সিকিমের লাইফলাইন বলে পরিচিতি এলাকাটি বন্ধ হয়ে যায়। সকালে সীমান্ত সড়ক সংস্থার কর্মীরা রাস্তা খুললেও পরে কয়েক দফায় রাস্তাটি বন্ধ হয়। শিলিগুড়ি থেকে সিকিম ও কালিম্পং সরকারি যাতায়াত বন্ধ হয়ে যায়। বড় যানজটও হয। বিকাল নাগাদ কিছুটা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।

প্রশাসনিক সূত্রের খবর, ৩১-এ জাতীয় সড়কের (বর্তমানে জাতীয় সড়কটিকে নম্বর বদলে ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক হয়েছে) শ্বেতীঝোড়া ছাড়াও লিকুভির, ২৭ মাইল এলাকায় ধস নামে। তবে প্রতি জায়গায় সীমান্ত সড়ক সংস্থার কর্মীরা দ্রুত গতিতে পাথর, মাটি সরিয়ে রাস্তা খুলে রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে টানা বৃষ্টিতে পাহাড়ের উপর থেকে টানা পা‌থর গড়িয়ে পড়তে থাকায় সমস্যা বেড়েছে। সীমান্ত সড়ক সংস্থার কর্মীরা জানান, ওই এলাকাগুলি ছাড়াও গোটা রাস্তাটিতে নানা জায়গায় ছোট ছোট ধস নামলেও তাতে রাস্তা বন্ধ হয়নি। গত সপ্তাহে শ্বেতীঝোড়ায় দফায় দফায় ধস নামে। গত বৃহস্পতিবার থেকে রাস্তাটি দু’দিন বন্ধ ছিল।

শিলিগুড়ি ও জলপাইগুড়িতেও শনিবার রাত থেকে বৃষ্টি শুরু হয়। রবিবার ছুটির দিন সকাল থেকে কখনও সজোরে কখনও আবার ঝিরঝির বৃষ্টি হয়। রাস্তাঘাটও দুপুর অবধি ফাঁকা ফাঁকাই ছিল। বিকালে বৃষ্টি তেমন না হওয়ায় বাজারঘাটে কিছুটা ভিড় হয়। শহরের বহু জায়গায় কাদাজল জমে যায়। হাঁটাচলা করতে বিপাকে পড়েন বাসিন্দারা। অঠো, বাসও কম চলাচল করেছে। দোকানপাটও কম খোলা ছিল।

এদিকে, সাত দিন ধরে টানা বৃষ্টিতে জেরবার হয়ে পড়েছিলেন মালদহবাসী। কখনও মুসলধারে, কখনও ঝিরঝিরি বৃষ্টি হয়েছে। নিত্যদিনের কাজকর্ম ব্যাহত হচ্ছিল। ব্যবসায়ীদেরকেও ক্ষতির মুখে পড়তে হয়েছে। টানা বৃষ্টিতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল। কিন্তু শনিবার গভীর রাত পর্যন্ত বৃষ্টি হলেও রবিবার সকাল থেকে আর বৃষ্টি হয়নি। সকাল থেকেই আকাশ ছিল মেঘলা।

পাশের জেলা উত্তর দিনাজপুরে শনিবার রাতে রায়গঞ্জ, কালিয়াগঞ্জ, হেমতাবাদ ও ইটাহারে হাল্কা বৃষ্টি হলেও এদিন সকাল থেকে বৃষ্টি হয়নি। আকাশ মেঘলা থাকায় রোদের দেখা মেলেনি। ঠান্ডা বাতাস বয়েছে। ইসলামপুর-সহ মহকুমার বিভিন্ন প্রান্তে হালকা বৃষ্টি হয়েছে। সকাল থেকে কোচবিহারের আকাশ ছিল মেঘলা। সকাল থেকে দিনভর দফায় দফায় বৃষ্টিও হয়েছে জেলা জুড়ে। ফলে জনজীবন ব্যাহত হয়। নদীগুলি ফুঁসলেও কোনটিতেই অবশ্য কোন সঙ্কেত জারি হয়নি। বৃষ্টির জেরে জেলার বিস্তীর্ণ এলাকায় নিচু জমিতে সব্জি ও পাট খেতে জল দাঁড়িয়ে গিয়েছে। টানা বৃষ্টি চললে ফসলের ক্ষতির আশঙ্কা করছেন চাষিরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE