Advertisement
০৩ মে ২০২৪

মালদহের চিঠি

মহানন্দা নদীর পাড়ে অবস্থিত ব্রিটিশ আমলের ইংরেজবাজার পুরসভা। পুরসভার ওর্য়াড ক্রমশ বাড়ছে। এই বছর ২৯টি ওয়ার্ড হয়েছে। শুনতে পাই আমাদের পুরসভা সি গ্রেড থেকে এ গ্রেড হয়েছে। তবে পুর পরিষেবা কিন্তু আমাদের সেই সি গ্রেডই রয়ে গিয়েছে। শহরের কিছু উন্নয়ন হয়েছে।

রাস্তার আবর্জনায় প্রাণ ওষ্ঠাগত শহরবাসীর। ছবি: মনোজ মুখোপাধ্যায়।

রাস্তার আবর্জনায় প্রাণ ওষ্ঠাগত শহরবাসীর। ছবি: মনোজ মুখোপাধ্যায়।

শেষ আপডেট: ২০ এপ্রিল ২০১৫ ০২:৩৩
Share: Save:

জঞ্জাল মুক্ত শহরে আর্সেনিক মুক্ত জল চাই

মহানন্দা নদীর পাড়ে অবস্থিত ব্রিটিশ আমলের ইংরেজবাজার পুরসভা। পুরসভার ওর্য়াড ক্রমশ বাড়ছে। এই বছর ২৯টি ওয়ার্ড হয়েছে। শুনতে পাই আমাদের পুরসভা সি গ্রেড থেকে এ গ্রেড হয়েছে। তবে পুর পরিষেবা কিন্তু আমাদের সেই সি গ্রেডই রয়ে গিয়েছে। শহরের কিছু উন্নয়ন হয়েছে। ট্রাফিক মোড়গুলিতে রবীন্দ্রনাথের গান বাজছে, শহরের বৃন্দাবনী মাঠ সংস্কার হয়েছে। মহানন্দা নদীর পাড়ে অর্থাৎ বাঁধ রোডে পরিবেশ মনোরম করা হয়েছে। এই সব উন্নয়ন হলেও আামরা পুরসভার ন্যূনতম পরিষেবা থেকে বঞ্চিত রয়ে গিয়েছি। মালদহ জেলা আর্সেনিক কবলিত এলাকা। ইংরেজবাজারেও আর্সেনিকের প্রকোপ রয়েছে। আমরা যে জল খাচ্ছি, তাতে আমাদের ভয় হচ্ছে। কারণ শহরে আর্সেনিক মুক্ত জলের কোনও ব্যবস্থা নেই। ফলে শহরবাসীকে পেটের সমস্যায় ভুগতে হয়। শুধু আর্সেনিক মুক্ত জলেরই সমস্যা নয়, পানীয় জলের সমস্যাও রয়েছে। শহরে পর্যাপ্ত পাম্প হাউস নেই। জন ঘনত্ব দিনকে দিন বাড়লেও পাম্প হাউসের সংখ্যা বাড়েনি। পুরসভা ওর্য়াডে-ওর্য়াডে বেশ কয়েকটি করে পানীয় জলের জলাধার করেছে। তবে সেগুলিতে পুরকর্তারা নজর দেওয়ার সময় পান না। ফলে সেগুলি সংস্কারের অভাবে ধুঁকছে। একই সঙ্গে শহরে বহুতল বাড়ির সংখ্যা বেড়েই চলেছে। তারা জলের জন্য সাব মার্সিবল পাম্প বসাচ্ছে। এমন চলতে থাকলে ভূগর্ভস্থ জল নিচে নেমে যাবে। অদূর ভবিষ্যতে শহরে পানীয় জলের চরম আকাল দেখা দেবে। তার জন্য এখন থেকে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। শুধু পানীয় জলের সমস্যা নয়, শহরে জঞ্জাল সমস্যাও রয়েছে। রাস্তা দিয়ে চলা ফেরা করা যাচ্ছে। দিনের পর দিন বিভিন্ন স্থানে জমে থাকছে নোংরা আবর্জনা। যা থেকে খুবই দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। মুখে কাপড় দিয়েও সেই দুর্গন্ধের হাত থেকে রেহাই পাওয়া যাচ্ছে না। সেই সঙ্গে মশা, মাছির উপদ্রব। জঞ্জালের মতো জল নিকাশি ব্যবস্থা মুখ থুবড়ে পড়েছে। ফলে সামান্য বৃষ্টি হলেই আমরা জলে ডুবে যাই। গত বর্ষায় শহরের বিভিন্ন জায়গায় জল জমে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল। সংবাদ মাধ্যমে দেখেছিলাম বৃষ্টির জলে ডুবে মৃত্যুও হয়েছিল। শহরে এখনও আমরা প্লাস্টিক অনায়াসে দোকানে পেয়ে যাচ্ছি। কেউ কোনও বাধা দিচ্ছে না। আমরা নিচ্ছি, আর দোকানদারেরা দিচ্ছেন। অন্যান্য শহরগুলিতে প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধ হয়ে গিয়েছে। আমাদের শহরে এখনও তার ব্যবহার চলছে। এ ছাড়া শহের যানযট বাড়ছে। আমরা ফুটপাথ ব্যবহার করতে পারছি না। সব জবর দখল হয়ে গিয়েছে। নদীতে নর্দমার জল সরাসরি মহানন্দা নদীতে মিশে নদীর জল দূষিত হচ্ছে। একাধিক সমস্যা নিয়ে দিন কাটাতে হচ্ছে আমাদের শহরবাসীকে। এখন ভোট এসেছে। শুরু হয়েছে রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে লড়াই। চলছে প্রতিশ্রুতি দেওয়ার প্রতিযোগীতা। তবে আমরা শহরবাসীরা চাই স্থায়ী সমাধান। পুরবোর্ড যে দলই গঠন করুক না কেন, তাঁদের শহরের এই সমস্যাগুলির দিকে নজর দিতে হবে। আশা করছি মানুষের রায়ে যে দল পুরবোর্ড গঠন করবে,তারা আমাদের সমস্যাগুলি সমাধানের চেষ্টা করবে।

উৎপল সরকার। ফতখানি হাই মাদ্রাসার সহ শিক্ষক, ইংরেজবাজার।

রাস্তায় চাই হাঁটার জায়গা

শহরের জনসংখ্যা দিনকে দিন বাড়ছে। সেই সঙ্গে শহরে বাড়ছে যানবাহনও। অটো থেকে রিকশা। এখন ইংরেজবাজারের অলিগলিতে দেখা যাচ্ছে টোটো গাড়ি। এর ফলে এক দিকে আমাদের সুবিধে হচ্ছে। তবে পায়ে হেঁটে চলাফেরা করা খুবই কষ্টকর হয়ে উঠেছে। বলা যেতে পারে যানবাহনের তুলনায় রাস্তার সংখ্যা কমছে। আমাদের ইংরেজবাজার শহরের মূল রাস্তাগুলি ক্রমশ দখল হয়ে গিয়েছে। বছর খানেক আগে থেকেই আমরা ফুটপাথে চলা ফেরার অভ্যাস হারিয়েছি। শহরে ফুটপাথ বলে আর কিছু নেই। এখন রাস্তার অর্ধেকাংশ দখল হয়ে গিয়েছে। দুই ধারে খাবারের দোকান থেকে শুরু করে গাড়ি পার্কিং করে রাখা হচ্ছে। এর ফলে আমার মতো যে সমস্ত মহিলারা পায়ে হেঁটে যাতায়াত করেন, তাঁদের পক্ষে এখন চলা ফেরায় কষ্টকর। এই ব্যাপারে পুরসভা কোনও পদক্ষেপ করেনি।

এই সমস্যার পাশাপাশি আমাদের প্রতিনিয়ত যে সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়, তা হল পানীয় জলের সমস্যা। বিশেষ করে আর্সেনিক মুক্ত পানীয় জল। আর সবার পক্ষে তো টাকা দিয়ে জল কিনে খাওয়া সম্ভব নয়। তাই অনেকে বাধ্য হয়ে অপরিচ্ছন্ন জলাধারগুলির জল পান করেন। ফলে পেটের সমস্যার মতো জল বাহিত নানা রোগ দেখা দেয়। শহরে পথ বাতির সমস্যা রয়েছে। শহরের মুল রাস্তাগুলিতে আলো ভাল থাকলেও অলিগলিতে আলো খুবই টিমটিম করে জ্বলে। এলাকাগুলি অন্ধকার হয়ে থাকে। সেই সব এলাকা দিয়ে মেয়েদের যাতায়াতে খুবই সমস্যা হয়। শহরের নিকাশি নালাগুলি মুখ থুবড়ে পড়েছে। নর্দমাগুলি খুবই সঙ্কীর্ণ। যে সময় নর্দমাগুলি তৈরি হয়েছিল, তখন জনসংখ্যাও অল্প ছিল। এখন জনসংখ্যা বেড়েছে। ফলে নিকাশি নালাগুলি চওড়া করা দরকার। তা না করার ফলে সামান্য বৃষ্টিতে শহরে জমছে হাঁটু সমান জল। জঞ্জালের সমস্যা রয়েছে। এ ছাড়া শহরের মধ্যে বিভিন্ন জায়গায় কবি, সাহিত্যিকদের মূর্তি বসানো রয়েছে। সেই মূর্তিগুলি সংস্কার করা হয় না। সেগুলি অযত্নে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সেগুলি রক্ষণাবেক্ষণ করতে না পারলে না বসানোই ভালো।

শহরের উন্নয়ন যে হয়নি, তা বলব না। উন্নয়ন হয়েছে। শহরের রূপ পাল্টেছে। তবে পরিষেবা আরও বাড়ানো প্রয়োজন। এখন ভোট আসছে। নেতা-নেত্রীরা যে ভাবে উন্নয়নের কথা বলছেন,তার এক ভাগ পালন করলেই শহরের চেহারা পাল্টে যাবে।

রাধা দাস। সঙ্গীত শিল্পী, ইংরেজবাজার সর্বমঙ্গলা পল্লি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE