কুসংস্কার: ওঝার নির্মম ‘ঝাড়ফুঁক’। মালদহে। নিজস্ব চিত্র
কয়েক দিন ধরেই তিনি অসুস্থ ছিলেন। পরিবারের লোকজন তাঁকে সুস্থ করতে ডাক্তার নয়, দ্বারস্থ হয়েছিলেন পাশের গ্রামের গুণিনের কাছে। গুণিনের নিদান—‘‘তাঁকে ভূতে ধরেছে।’’ এর পরে মঙ্গলবার দুপুরে ভূত তাড়াতে ঝাড়ফুঁকের নামে সেই রোগীর ওপর গুণিন অত্যাচার চালায় বলে অভিযোগ। গালে থাপ্পর মারা থেকে শুরু করে চুল ধরে টানা, সব কিছুই চলে। তবে রোগী আরও অসুস্থ হয়ে পড়লে পালিয়ে যান গুণিন। শেষ অবধি তাঁকে মূমুর্ষূ অবস্থায় পরিবারেরই লোকজন ভর্তি করেন মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। পর দিন মৃত্যু হয় আসাদুল্লা শেখ (৩২) নামে মালদহের পুরাতন মালদহ ব্লকের যাত্রাডাঙা গ্রাম পঞ্চায়েতের হালনা মোহপুর গ্রামের বাসিন্দা ওই যুবক।
ওই ঘটনার পর দুদিন কাটতে চললেও পরিবারের তরফে থানায় কোনও অভিযোগ যেমন দায়ের করা হয়নি বা পুলিশও স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মামলাও রুজু করেনি।
মালদহ জেলা সদর থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে পুরাতন মালদহ ব্লকের একটি গ্রাম হালনা মোহপুর। আদিবাসীদের পাশাপাশি সংখ্যালঘু মানুষের বাস সেখানে। সেই গ্রামেরই বাসিন্দা পেশায় দিনমজুর আসাদুল্লা শেখ। তাঁর স্ত্রী, তিন সন্তান রয়েছে তার। আছেন বাবা, মা। স্থানীয় ও পারিবারিক সূত্রে জানা গিয়েছে, বেশ কয়েক দিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন আসাদুল্লা। স্থানীয় চিকিত্সকদের কাছে চিকিৎসাও নাকি করেন। কিন্তু কাজে না আসায় তাঁরই স্ত্রী লাকিবিবি আসাদুল্লাকে নিয়ে যান গুণিন বলে এলাকায় পরিচিত পাশের গ্রামের ফজলু রহমানের কাছে।
পরিবারের দাবি, গুণিন আসাদুল্লাকে দেখেই জানিয়ে দেন যে, ‘‘রোগীর শরীরে প্রেতাত্মা বাসা বেঁধেছে। ভূতে ধরেছে।’’ তাঁরই নির্দেশ ছিল যে মঙ্গলবার আসাদুল্লার শরীর থেকে প্রেতাত্মা তিনি বের করবেন। সেই মতো মঙ্গলবার গুণিন বাড়িতে আসেন এবং ঝাঁড়ফুকের নামে প্রায় একঘন্টা ধরে আসাদুল্লার ওপর শারীরিক অত্যাচার চালান বলে অভিযোগ। গ্রামের অনেক বাসিন্দাদের সামনেই সেই রোগীকে থাপ্পর, মারধর, চুল টানা এসব চলে। অভিযোগ, ওই অত্যাচারে আসাদুল্লা আরও অসুস্থ হয়ে পড়ে। বেগতিক দেখে সেখান থেকে কেটেও পড়েন সেই গুণিন।
আসাদুল্লার বাবা কেরামন শেখ বলেন, ‘‘গুণিনের ওই মারধরের পরেই ছেলে মারাত্মক ভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে। আমরা গাড়ি যোগাড় করে রাতেই ছেলেকে মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাই। কিন্তু পরদিন ছেলে মারা যায়।’’ থানায় অভিযোগ নিয়ে তিনি কোনও মন্তব্য করেননি। গুণিনও বেপাত্তা।
বিডিও নরোত্তম বিশ্বাস বলেন, ‘‘বাড়ির লোকজন তাঁকে চিকিৎসার নামে গুণিনের কাছে নিয়ে যান। সে সময় তাকে শারীরিকভাবে নিগ্রহ করা হয়েছে। পরে তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে তিনি মারা যান। আমরা স্থানীয়ভাবে যে খবর পেয়েছি তা খতিয়ে দেখব এবং যে গুণিন এ কাজ করেছেন তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
তিনি জানান, যাতে ওই ধরনের কুসংস্কারের ঘটনা না ঘটে সেজন্য এলাকায় সচেতনতা মূলক প্রচার চালানো হবে। মালদহ থানার আইসি জানিয়েছিন, তদন্ত করে পদক্ষেপ করা হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy