Advertisement
০৬ মে ২০২৪

প্রকাশ হয়নি ইস্তেহার, ক্ষুব্ধ বিজেপি-কর্মীরা

পুরবোর্ডের ক্ষমতায় এলে জলকর কমানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বামেরা। তৃণমূলও বলেছে, তাদের বোর্ড হলেও পুরসভার নানা কর কমবে। যদিও, ভোট প্রচার শেষের আর সপ্তাহখানেক বাকি থাকলেও বিজেপি প্রার্থীরা তেমন কোনও নির্দিষ্ট আশ্বাস দিতে পারেনি। তাতে হতাশ দলের প্রার্থীদের একাংশ। পাঁচ মাস আগে শহরে কেন্দ্রীয় নেতাদের দিয়ে সভা করিয়ে পুরভোটের প্রস্তুতি শুরু করার ঘোষণা করেছিল বিজেপি।

অনির্বাণ রায়
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ১৩ এপ্রিল ২০১৫ ০২:৩২
Share: Save:

পুরবোর্ডের ক্ষমতায় এলে জলকর কমানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বামেরা। তৃণমূলও বলেছে, তাদের বোর্ড হলেও পুরসভার নানা কর কমবে। যদিও, ভোট প্রচার শেষের আর সপ্তাহখানেক বাকি থাকলেও বিজেপি প্রার্থীরা তেমন কোনও নির্দিষ্ট আশ্বাস দিতে পারেনি। তাতে হতাশ দলের প্রার্থীদের একাংশ। পাঁচ মাস আগে শহরে কেন্দ্রীয় নেতাদের দিয়ে সভা করিয়ে পুরভোটের প্রস্তুতি শুরু করার ঘোষণা করেছিল বিজেপি। লোকসভা ভোটের নিরিখে শিলিগুড়ি পুরসভার ৪৭টি ওয়ার্ডের মধ্যে ২১টিতেই এগিয়েছিল বিজেপি প্রার্থী। সেই হিসেবে গত নভেম্বর মাসে বাঘাতীন পার্কে সভা করে দলের রাজ্যের পর্যবেক্ষক ঘোষণা করেছিলেন, আগামী বিধানসভা ভোটের লক্ষ্যে শিলিগুড়ি পুরবোর্ড দখল করে রাজ্যে পরিবর্তনের শুরু হবে। তারপরে মহানন্দা দিয়ে অনেক জল বয়ে গিয়েছে। শিলিগুড়ি ভোটের বাকি আর হাতেগোনা কয়েকদিন। এখনও দলের ইস্তাহার প্রকাশ হয়নি। দলের একাংশের দাবি, লোকসভা ভোটের পরে পুরভোটের প্রস্তুতির শুরুটা দল ‘২০-২০’ ধাঁচে করলেও, পুরভোট ঘোষণার পরে সেই তৎপরতা উধাও।

দলের তরফে স্বচ্ছ পুরবোর্ড এবং পরিবর্তনের স্লোগান বেঁধে দেওয়া হলেও, প্রার্থীদের একাংশের দাবি, যেখানে বিরোধীরা নির্দিষ্ট প্রতিশ্রুতি ছাপিয়ে বিলি করছে, সেখানে শুধু পরিবর্তনের স্লোগান নিয়ে প্রচার চালানো সম্ভব নয়। এক প্রার্থীর কথায়, ‘‘অনেকেই জানতে চাইছেন আমরা বোর্ডে এলে কর কমাব নাকি, উত্তরে আমাদের শুধু পরিবর্তন আর স্বচ্ছতার কথা বলতে হচ্ছে। কিন্তু পরিবর্তনের পরে তারা কী পাবেন, তা বাসিন্দাদের বলতে পারছি না।’’

বিজেপির তরফে দাবি করা হয়েছে, আগামী ১৫ এপ্রিল, বাংলা নববর্ষের দিন দলের ইস্তাহার প্রকাশ করা হবে। তারপরে প্রচারের জন্য বাকি থাকবে মাত্র ৮ দিন। শিলিগুড়িতে কাউকে মেয়র পদপ্রার্থী ঘোষণা করেনি বিজেপি। দলের একাংশ কর্মী-সমর্থকদের দাবি, প্রচার শেষের সপ্তাহখানেক বাকি থাকতেও ইস্তাহার প্রকাশ না হওয়া, কাউকে ‘মুখ’ করে ভোটে না লড়া, এই দুই’ই বিজেপির প্রথা-বিরুদ্ধে। দলের জেলা সভাপতি রথীন বসুর কথায়, ‘‘দলের প্রচারের বিষয় নিয়ে কোনও বিভ্রান্তি নেই। কেন্দ্র এবং রাজ্য দলের নীতি মেনে উন্নয়ন, স্বচ্ছতার কথা বলছেন প্রার্থীরা। আগামী ১৫ এপ্রিল ইস্তাহার প্রকাশ হবে।’’

দলের একাংশের দাবি প্রার্থী ঘোষণার পর থেকে দলের অন্দরে যে তুমুল বিক্ষোভ শুরু হয়েছিল তাতে নেতৃত্ব অস্বস্তিতে পড়ে গিয়েছিলেন। কী ভাবে ক্ষোভ-বিক্ষোভের মোকাবিলা করবেন তা নিয়ে আলোচনাতেই অনেকটা সময় কেটে যায়। প্রার্থী বাছাই নিয়ে আর্থিক লেনদেনের অভিযোগও উঠেছিল। একের পর এক অভিযোগে, জনমানসে দলের ভাবমূর্তি ধাক্কা খায় বলে অনেকের দাবি। ক্ষোভ বিক্ষোভের কারণে বহু নেতা-কর্মীও ‘বসে’ পড়েছেন। কেউ কেউ দল ছেড়ে অন্য দলে যোগ দিয়েছেন। সে সব সামাল দিতেই ইস্তাহার প্রকাশ পিছিয়ে গিয়েছে বলে দলের একাংশের অভিযোগ। এ যুক্তি মানতে চাননি বিজেপি নেতৃত্ব। ইস্তাহার প্রকাশে দেরি হয়েছে তাও মানতে রাজি নন রথীনবাবু। তাঁর দাবি, ‘‘অনান্য দলগুলির ইস্তাহারে কী রয়েছে, তা দেখা হয়েছে। তবে আমরা সমালোচনা না করে উন্নয়নের কথাই ইস্তাহের বলব। ইস্তাহার প্রকাশে দেরি হয়েছে এমন জল্পনা দলের মধ্যে নেই। শিলিগুড়ি পুরভোটে এবার প্রথম ইস্তাহার প্রকাশ হবে, তাকে পূর্ণাঙ্গ রূপ দেওয়া হচ্ছে।’’

কী থাকছে ইস্তাহারে?

দল সূত্রের খবর, তৃণমূলের বিরুদ্ধে সারদা থেকে এসজেডিএ নানা কেলেঙ্কারির অভিযোগ তোলা সহ শিলিগুড়ি শহরকে দূষণমুক্ত করে, ‘প্ল্যান সিটি’ হিসেবে গড়ে তোলার নানা প্রস্তাব, পরিকল্পনা ইস্তাহারে থাকতে পারে।

তবে এখনও আগামী ১৫ এপ্রিল-ই ইস্তাহার প্রকাশ সম্ভব হবে কিনা তা নিয়েও দলে ধন্ধ রয়েছে। আগামী ১৭ এপ্রিল দলের দার্জিলিঙের সাংসদ সুরিন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়ার শিলিগুড়িতে এসে প্রচার শুরুর কথা। দলের একাংশ চাইছে আরও দু’দিন অপেক্ষা করে, সাংসদকে সামনে রেখে ইস্তাহার প্রকাশ হোক। যদিও জেলা নেতৃত্ব সূত্রের খবর, বাংলা নববর্ষের দিন-ই ইস্তাহার প্রকাশ হবে। তবে প্রার্থীদের একাংশের প্রশ্ন, এত কম সময়ে সকলের কাছে তা কতটা পৌঁছন যাবে বা আলোচনা সম্ভব হবে?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE