Advertisement
১১ মে ২০২৪

পাথর-মাটি ধসে স্তব্ধ যান, দুর্ভোগ

পাহাড়ের উপর মাটি ও পাথর পড়ছে। এই ধসের জেরে সিকিমের লাইফলাইন বলে পরিচিত ৩১-এ জাতীয় সড়ক পুরোপুরি বন্ধ হয়ে পড়েছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর থেকে জাতীয় সড়কের কালিম্পং থানার রম্ভি ফাঁড়ির শ্বেতীঝোরা সেতু লাগোয়া এলাকাটি পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়।

শিলিগুড়ি থেকে সিকিমগামী ৩১-এ তথা ১০ নম্বর জাতীয় সড়কে ধসে বন্ধ রাস্তা।

শিলিগুড়ি থেকে সিকিমগামী ৩১-এ তথা ১০ নম্বর জাতীয় সড়কে ধসে বন্ধ রাস্তা।

নিজস্ব সংবাদদাতা
দার্জিলিং ও শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ২৭ জুন ২০১৫ ০২:২২
Share: Save:

পাহাড়ের উপর মাটি ও পাথর পড়ছে। এই ধসের জেরে সিকিমের লাইফলাইন বলে পরিচিত ৩১-এ জাতীয় সড়ক পুরোপুরি বন্ধ হয়ে পড়েছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর থেকে জাতীয় সড়কের কালিম্পং থানার রম্ভি ফাঁড়ির শ্বেতীঝোরা সেতু লাগোয়া এলাকাটি পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। শুক্রবার ভোর থেকে টানা পাথর, মাটি পড়তে থাকায় প্রায় ৫০ মিটার রাস্তা পুরোপুরি ঢেকে গিয়েছে। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে, তিস্তা নদীর দিকে খাদের কোণে জাতীয় সড়কটির কিছু অংশ ধসেও গিয়েছে। সব মিলিয়ে প্রায় ১০০ মিটার এলাকায় ক্ষতি হয়েছে। গত বুধবারও শ্বেতীঝোরায় ধস নামে। কিন্তু তিন ঘণ্টার চেষ্টায় রাস্তাটি খোলা সম্ভব হয়েছিল। এ দিন অবশ্য এলাকায় সন্ধ্যা অবধি কোনও বৃষ্টি হয়নি।

বৃহস্পকিবার থেকে থেকে জাতীয় সড়কটির দায়িত্বে থাকা সেনাবাহিনীর সীমান্ত সড়ক সংস্থা বা বিআরও কর্মীরা কাজ শুরু করলেও কতক্ষণে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে তা স্পষ্ট করে কেউ জানাতে পারেনি। এই অবস্থায় রাস্তা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সরাসরি সিকিম এবং কালিম্পং যাতায়াত বন্ধ হয়ে গিয়েছে। সব গাড়িকে সিকিম ও কালিম্পং থেকে দু’টি ঘুরপথে শিলিগুড়ি যাতায়াত করতে হচ্ছে। এতে যাত্রীদের ২-৩ ঘণ্টা সময় তো বেশি লাগছেই। ভাড়াও গুণতে হচ্ছে অনেক বেশি।

দার্জিলিঙের জেলাশাসক অনুরাগ শ্রীবাস্তব বলেন, ‘‘জাতীয় সড়কটির খুবই খারাপ অবস্থা হয়েছে। যত দ্রুত সম্ভব রাস্তাটি খোলার চেষ্টা করা হচ্ছে।’’ আর জেলা পুলিশ সুপার অমিত জাভালগি বলেন, ‘‘বৃহস্পতিবার রাত থেকে সমস্ত গাড়িকে ঘুরপথে চালানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে ট্রাকগুলি রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে থাকায় যানজট হয়।’’

ধসের কারণে আটকে পড়েছে পণ্যবাহী ট্রাক। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, ডুয়ার্সের ডামডিম, লাভা, আলগাড়ার মুনসুং রোড এবং ডেলো বাইপাস হয়ে কিছু গাড়ি রংপু হয়ে সিকিম যাতায়াত করছে। অন্য দিকে, কালিম্পং থেকে তিস্তাবাজার পেশক রোড হয়ে জোরবাংলো হয়ে কার্শিয়াং, রোহিণী হয়ে শিলিগুড়ির গাড়ি যাতায়াত করছে। তবে দু’টি ক্ষেত্রেই প্রচুর সময় বেশি লাগছে। বর্যার মরসুম শুরু হয়ে গেলেও দার্জিলিং, কালিম্পং এবং গ্যাংটকে বেশ কিছু পর্যটক থেকে গিয়েছেন। তাঁদের বিমান বা ট্রেন ধরতে আগে থেকে বের হয়ে ঘুরপথেই যাতায়াত করতে হচ্ছে। পরিবার নিয়ে সিকিমে গিয়েছিলেন দিল্লির বাসিন্দা মহেন্দ্র ভার্গব। এ দিন ভার্গব পরিবারের এনজেপি থেকে রাজধানী এক্সপ্রেসে ফেরার টিকিট ছিল। সাত সকালে বেরিয়ে তাঁদের পেশক রোড, জোরবাংলো হয়ে শিলিগুড়িতে আসতে হয়েছে। মহেন্দ্রবাবুদের প্রতিক্রিয়া, ‘‘এমনভাবে সফর শেষে আটকে পড়ব ভাবিনি। ঘুরপথে বেশি ভাড়া দিয়ে শিলিগুড়ি আসতে হয়েছে।’’ আবার চেন্নাই থেকে এস মালতি ৬ জনকে নিয়ে পাহাড়ে বেড়াতে এসেছিলেন। তাঁদেরও একই পথে ভোরবেলায় বের হয়ে বাগডোগরা এসে বিমান ধরতে হয়েছে। ইস্টার্ন হিমালয়া ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুর অপারের্টস অ্যাসোসিয়েশনের (এতোয়া) কার্যকরী সভাপতি সম্রাট সান্যাল বলেন, ‘‘প্রতিবার বর্ষার সময় এই জাতীয় সড়কে এমন ঘটনা ঘটছে। বিকল্প ব্যবস্থা না হলে দিনে দিনে সমস্যা বাড়বেই।’’

সিকিম প্রশাসন সূত্রের খবর, সেবক থেকে গ্যাংটক পর্যন্ত ৯২ কিলোমিটারের ওই জাতীয় সড়কের উল্টো দিকের পাহাড় ধরে আর একটি বিকল্প রাস্তা তৈরির প্রস্তাব গত বছর মা‌ঝামাঝি কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে পাঠানো হয়েছে। ইতিমধ্যে এক দফায় সমীক্ষাও হয়েছে। সেই সঙ্গে বর্তমান জাতীয় সড়টিকে আরও চওড়া করার কাজও চলছে। ওই রুটে যাতায়াতকারী গাড়ির চালকেরা জানান, দফায় দফায় বৃষ্টি ও গত মাসের ভূমিকম্প তো বটেই, পাহাড় কেটে রাস্তাটি চওড়া কাজ চলছে। এতে কিছু কিছু এলাকায় পাথর, মাটি ভঙুর হয়ে পড়েছে। একটু বৃষ্টি হলেই ধস নেমে যাচ্ছে। পুলিশ এবং প্রশাসন সূত্রের খবর, ওই জাতীয় সড়কের লিকুভির, ২৭ মাইল, ২০ মাইল, শ্বেতীঝোড়া ধসপ্রবণ এলাকা বলেই পরিচিত। গত বছর লিকুভির এখই অবস্থা তৈরি হয়েছিল। দফায় দফায় কয়েকদিন রাস্তা বন্ধ ছিল। পরে উন্নত প্রযুক্তির সাহায্যে আপাতত রাস্তাটি সচল রাখা হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE