খাদ্য সুরক্ষা আইনে গরিবদের সস্তায় চাল-গম বরাদ্দের জন্য দক্ষিণ দিনাজপুরের ডিজিট্যাল রেশন কার্ডের তালিকাতে রয়েছে রাজ্যের পূর্তমন্ত্রী শঙ্কর চক্রবর্তী ও তাঁর পরিবারের কয়েকজনের নাম। শঙ্করবাবুর অবশ্য দাবি, ভুল করে তাঁদের নাম সেখানে উঠে গিয়েছে। নামগুলি কেটে দেওয়ার জন্য তিনি আবেদন করেছেন।
কিন্তু কংগ্রেসের দাবি, নতুন আইনে ডিজিট্যাল রেশন কার্ডে কেনই বা মন্ত্রীর নাম উঠেছিল, তার তদন্ত করা হোক। জেলা কংগ্রেসের সভাপতি নীলাঞ্জন রায়ের বক্তব্য, ‘‘নতুন আইনে ‘প্রায়োরিটি হাউসহোল্ড’ ও ‘স্পেশ্যাল প্রায়োরিটি হাউসহোল্ডে’র তালিকায় ওই রেশন কার্ডে থাকার কথা প্রকৃত গরিবদের নাম। কিন্তু সেখানে কেবল মন্ত্রী নন, পুরপ্রধান ও বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ীর নামও রয়েছে। রয়েছে রেশন ডিলার, ডিস্ট্রিবিউটরদের নামও।’’ তাঁর দাবি, ‘‘এতগুলি নাম এক সঙ্গে ভুল করে কেন ওই তালিকায় উঠল, প্রশাসনকে আগে স্পষ্ট করে তার ব্যাখ্যা দিতে হবে।’’ কংগ্রেস সভাপতির দাবি, ২০০৩ এবং ২০০৮ সালের পুরনো বিপিএল তালিকা বাতিল করে নতুন করে ২০১২-২০১৩ সালের ইকোনমিক সেন্সাসের ভিত্তিতে করা বিপিএল বা অধুনা ‘প্রয়োরিটি হাউসহোল্ড’ তালিকার পুরোটাই ত্রুটিপূর্ণ।
এদিন কলকাতা থেকে বালুরঘাটের বিধায়ক তথা পূর্তমন্ত্রী শঙ্কর চক্রবর্তী বলেন, ‘‘বিষয়টি নজরে আসতেই কলকাতায় আসার আগে বালুরঘাটে আমি খাদ্য দফতরে চিঠি দিয়ে ওই তালিকা থেকে আমার এবং পরিবারের সদস্যদের নাম বাদ দিতে বলে দিয়েছি।’’ বালুরঘাট পুরসভার চেয়ারপার্সন চয়নিকা লাহা বলেন, ‘‘ভুল করে স্পেশাল প্রায়োরিটি হাউসহোল্ড তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। তালিকা থেকে নাম বাদ দিতে আবেদন করেছি।’’
গত মাসে দক্ষিণ দিনাজপুরে পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন ব্লকে খাদ্য সুরক্ষা আইন প্রকল্পে উপভোক্তাদের ডিজিটাল রেশন কার্ড বিলি করে খাদ্যশস্য বিলির কাজ শুরু হয়েছে। রাজ্যে পাইলট প্রজেক্ট হিসাবে মাত্র ৮টি ব্লকের এই ছোট জেলাকে বেছে নিয়ে প্রকল্পটি চালু করতে গিয়ে শুরুতেই ডিজিটাল কার্ড বিলি নিয়ে উপভোক্তাদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ তৈরি হয়। নাম, ঠিকানার মতো ছোটখাটো ভুলের চেয়েও বড় সমস্যা দেখা দেয়, নিজ এলাকার রেশন দোকানের বদলে দূরের এলাকার রেশন দোকানের সঙ্গে উপভোক্তাদের জুড়ে দেওয়ায়। উপরন্তু, বিপিএলভুক্ত বড় অংশের মানুষের নাম খাদ্য সুরক্ষা থেকে বাদ গিয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে। পাশাপাশি ডিজিটাল কার্ডে সচ্ছ্বল পরিবারগুলির নাম ওই প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় জেলার বিভিন্ন এলাকায় ক্ষোভ তৈরি হতে দেখে কংগ্রেস আন্দোলনে নেমে এদিন ওই সমস্ত মানুষকে সঙ্গে পেয়ে গিয়েছে।
এদিন কংগ্রেসের ওই বিক্ষোভ সমাবেশে মানুষের ঢল দেখে পুলিশ অফিসারেরাও বিস্ময় গোপন করেননি। বিকেল ৪টা নাগাদ দু’টি গরুর গাড়িকে সামনে রেখে কংগ্রেসের অভিনব বিক্ষোভ মিছিল সকলের নজর টানে। শহর পরিক্রমা করে মিছিলটি। এরপরে জেলাশাসকের অফিসের সামনে অবস্থান আন্দোলন থেকে নীলাঞ্জনবাবু খাদ্য সুরক্ষা প্রকল্পে মন্ত্রী, চেয়ারপার্সনদের নাম থাকার কথা তথ্য প্রমাণ সহ তুলে ধরে বক্তৃতা দিতেই অফিসপাড়ায় সোরগোল পড়ে যায়। জেলা খাদ্য নিয়ামক অমরেন্দ্র রায় ডিজিটাল কার্ডে অসংখ্য ভুল রয়েছে বলে স্বীকার করে বলেন, ‘‘ওই কার্ড তৈরির দায়িত্ব কেন্দ্রীয় সরকার হায়দরাবাদের একটি সংস্থাকে দিয়েছে। ত্রুটিপূর্ণ ডিজিটাল কার্ড সংশোধন ও বাতিলের ব্যবস্থা রয়েছে। সারা বছর ধরে এই প্রক্রিয়া চলবে। নতুন নামও অন্তর্ভুক্তির উদ্যোগ হবে।’’
তবে দক্ষিণ দিনাজপুরের প্রায় ১৬ লক্ষ মানুষের মধ্যে প্রায় ১১লক্ষ মানুষই খাদ্য সুরক্ষা আইনের আওতায় চলে এসেছেন। ফলে ধনীদের নামও ওই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়ে প্রায়োরিটি হাউসহোল্ড হবে, এটা ব্যতিক্রম ঘটনা নয় বলেই খাদ্য দফতরের অফিসারেরা মনে করছেন। তবে সরকারি সূত্রের খবর, ২০১২-১৩ সালে জেলা ডিআরডিসি সেল থেকে বাসিন্দাদের আর্থিক সমীক্ষা করা হয়েছিল। কংগ্রেসের অভিযোগ, ওই সমীক্ষা ছিল ভুলে ভরা।
যার পরিণতিতে জেলার গরিব বাসিন্দারা ভুগছেন। কংগ্রেস এ দিন জেলাশাসককে দেওয়া একটি স্মারকলিপিতে দাবি করেন, ২০০৩ এবং ২০০৮ সালের বিপিএল তালিকাকে অগ্রাধিকার দিয়ে ত্রুটিমুক্ত তালিকা তৈরি করে খাদ্য সুরক্ষা আইন চালু করতে হবে। এদিন কংগ্রেসের পক্ষ থেকে প্রশাসনকে সহায়ক মূল্যে চাষিদের কাছ থেকে ধান কেনা, ১০০দিনের কাজ চালু সহ ৫ দফা দাবিতেও স্মারকলিপি পেশ করা হয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy